ঢাকা, সোমবার   ১০ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

কচ ও দেবযানী

কার্তিক চন্দ্র দাশ

প্রকাশিত : ১৩:২২, ৯ মার্চ ২০২১ | আপডেট: ১৪:১৬, ৯ মার্চ ২০২১

Ekushey Television Ltd.

কবিগুরুর একটা বিখ্যাত কাব্যনাট্য ‘কচ ও দেবযানী’। এটা যে সময়ের কাহিনী তখন ত্রিভুবন দখল নিয়ে দেবতা আর অসুরদের মধ্যে লড়াই চলছিল। ইন্দ্রপুরীতে ছিলেন দেবতাদের পরম পূজনীয় ‘আচার্য বৃহস্পতি’। আর অসুর সাম্রাজ্যে ছিলেন শুক্রাচার্য, যার আবিষ্কৃত মৃতসঞ্জীবনী মন্ত্রের গুণে অসুরেরা হয়ে উঠেছিল অদম্য। কারণ এ দিয়ে মৃতকে জীবিত করে তোলা যেত। দেবতারা বৃহস্পতিপুত্র কচকে অনুরোধ করল, সে যাতে শুক্রাচার্যের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে মৃতসঞ্জীবনীর গুপ্তবিদ্যা আয়ত্ত করার চেষ্টা চালায়।

কচ রাজী হলো এবং চলে গেল অসুররাজ্যের রাজধানীতে। শুক্রাচার্যের গৃহে বিদ্যাশিক্ষা করতে লাগল আর সেই সময়ের রীতি অনুসারে গুরুগৃহের দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করত। কালক্রমে সদালাপী বিচক্ষণ বুদ্ধিমান ও চৌকস কচ পরিণত হলো শুক্রাচার্যের প্রিয় শিষ্যে।

তবে শুধু শুক্রাচার্য নয়, তার কন্যা দেবযানীর মনও জয় করে নিল কচ। কচের সুমধুর সংগীত আর অপূর্ব চিত্রকলার প্রতি দেবযানীর মুগ্ধতা একসময় কচের প্রতি ভালবাসায় রূপান্তরিত হলো। কচের ব্যবহারেও দেবযানীর প্রতি অনুরক্ততা প্রকাশ পেত। তবে তা ছিলো গুরুকন্যার প্রতি কচের স্রেফ শ্রদ্ধাভক্তিরই নিদর্শন-যাকে দেবযানী অনুরাগ ভেবে ভুল করেছিল।

দেবযানী অপেক্ষা করছিল কচের শিক্ষাজীবন তথা ব্রহ্মচর্য শেষ হওয়ার। কিন্তু সমস্যা হলো, অসুরেরা ইন্দ্রপুরবাসী কচের অসুররাজ্যে আগমনকে ভালোভাবে নেয় নি। তারা আশঙ্কা করলো, কচ হয়তো মৃতসঞ্জীবনী মন্ত্রের খোঁজে এখানে এসেছে। পর পর তিনবার তারা কচকে হত্যা করল। কিন্তু প্রতিবারই বাবার মৃতসঞ্জীবনীর গুপ্তবিদ্যার সহযোগিতায় কচকে বাঁচিয়ে তুলতো দেবযানী।

ইতোমধ্যে কচের বিদ্যাশিক্ষা সমাপ্ত হলো। শুক্রাচার্য নিশ্চিত ছিলেন যে, কচ দেবযানীকে বিয়ে করে অসুররাজ্যে থেকে যাবে। কিন্তু কচ জানাল যে, সে ইন্দ্রপুরীতে ফিরে যাবে। গুরুর কাছে এল বিদায়ী আশীর্বাদ নেয়ার জন্যে। শুনে দেবযানী তো অস্থির। সে কচকে তার ভালবাসার কথা জানাল এবং বিয়ে করতে চাইল।

কিন্তু কচ তার সিদ্ধান্তে অটল-সে ফিরে যাবেই। দেবযানী নানাভাবে বোঝাতে লাগল, আবেগ দিয়ে দুর্বল করতে চাইল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না দেখে শেষমেশ ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলো। অভিশাপ দিল, ‘যে বিদ্যার তরে মোরে কর অবহেলা, সে বিদ্যা তোমার সম্পূর্ণ হবে না বশ। শিখাইবে কিন্তু পারিবে না করিতে প্রয়োগ। তুমি শুধু ভার বয়ে যাবে’।

অর্থাৎ এই মৃতসঞ্জীবনী বিদ্যা অন্যকে শেখাতে পারলেও কচ নিজে কখনো এটা ব্যবহার করে কাউকে জীবিত করতে পারবে না।

কিন্তু এত বড় অভিশাপ পেয়েও কচ এতটুকু দমে গেল না। সে বরং দেবযানীকে বলল, ‘আমি বর দিনু দেবী তুমি সুখী হবে। ভুলে যাবে সকল গ্লানি বিপুল গৌরবে’। এভাবেই দেবযানীর ভালবাসা উপেক্ষা করে কচ চলে গিয়েছিল ইন্দ্রপুরীতে তার কর্তব্যপালনে।

আবেগের ওপর কর্তব্যের প্রাধান্য মানুষকে অমর করে।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি