কবর নিয়ে অভিনব ব্যবসা
প্রকাশিত : ২০:৫২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৯:০৭, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮
জনবসতি পূর্ণ রাজধানীতে এবার শুরু হয়েছে কবর বিক্রির অভিনব ব্যবসা। আধ্যাত্মিক স্লোগান দিয়ে ঢাকার পূর্বাচলে এমনই এক কবর ব্যবসা চালু করেছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ইসলাম ধর্মমতে, সেবার কথা বলা হলেও ডিজিটাল এই কবর ব্যবসায় আদায় হচ্ছে মোটা অংকের মুনাফা। এক একটি কবরের দাম পরছে এক কাঠা পরিমাণ জমির মূল্যের সমান। অর্থাৎ সাধারণ জমি ব্যবসার চেয়েও প্রায় ত্রিশগুণ টাকা হাতানোর ফাঁদ পেতেছে প্রতিষ্ঠানটি।
পূর্বাচলে এই কবর ব্যবসা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের নাম এম আই এস হোল্ডিংস। দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে কবর। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে “পূর্বাচল রাওয়াতুল জান্নাত কবরস্থান”।
এই প্রকল্পে একটি কবরের জন্য জায়গা পেতে আগ্রহী ব্যক্তিকে শুরুতেই গুণতে হবে ১৫ হাজার টাকা। সার্ভিস চার্জ বাবদ অফেরতযোগ্য এই অর্থ দিতে হবে কবরের মালিককে। আর প্রতিটি কবরের মোট মূল্য হচ্ছে তিন লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।
প্রতিষ্ঠানটির সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, এই অর্থের বিনিময়ে সাড়ে তিন ফুট প্রশস্ত এবং সাত ফিট দৈর্ঘ্যের একটি কবর বরাদ্দ দেওয়া হবে কবরের মালিককে। অর্থাৎ প্রতিটি কবরের আয়তন প্রায় সাড়ে ২৪ বর্গফুট। অর্থাৎ ৭২০ বর্গফুট আয়তনের প্রতি কাঠা জমিতে প্রায় ৩০টি কবরের স্থান সংকুলান হবে।
এদিকে পূর্বাচলের বিভিন্ন সেক্টরে জমির দাম অনুযায়ী, প্রতি কাঠা জমির মূল্য সাড়ে তিন লক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লক্ষ টাকা। সেই হিসেবে একটি কবরের দামেই উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে প্রায় এক কাঠা জমির দাম।
এমন কবর ব্যবসার বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর থেকেই নগরবাসীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ইতিমধ্যে এমন ব্যবসার ব্যাপক সমালোচনা করতে দেখা যায় ব্যবহারকারীদের। অনেকেই অভিযোগ করে বলছেন, এটা রীতিমতো ব্যবসা। আর সেই ব্যবসায় মুনাফার পরিমাণও আকাশচুম্বী।
আজিজ নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী অভিযোগ, যেখানে সরকারি করবস্থানে ২ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে দাফন কাফন সম্পূর্ণ হয়ে যায়। সরকারি করবস্থানে একটি কবর কিনতে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা লাগে। সেখানে রাওজাতুল জান্নাতে একটি কবর কিন্তু গুনতে হচ্ছে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা। এটা আমার মনে হয় সেবা নয়। মানুষের সাথে একধরনের প্রতারণা। মানুষের সেবার উদ্যেশ্য থাকলে সেবা করেন কোন সমস্যা নেই কিন্তু এমন প্রতারণা করা দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না।
এদিকে প্রায় ২০০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এমন প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। ব্যক্তি মালিকানার অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত এম আই এস হোল্ডিংস এর মতো একটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠান এমন বড় একটি প্রকল্পে বিনিয়োগের অর্থ কোথা থেকে পেলো সেটি নিয়েও তৈরি হয়েছে সন্দেহ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোয়েব হোসেন শখা ইটিভি অনলাইনকে জানান, “আমাদের এখানে কবরটির জায়গা আজীবনের জন্য রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হবে। এছাড়াও এখানে মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণ করা হবে। আর এগুলোর তত্ত্বাবধায়ন ও নিরাপত্তার জন্য থাকবে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। তাই আমরা যে মূল্য নির্ধারণ করেছি তা থেকে মুনাফা খুবই সামান্য”।
শোয়েব হোসেন আরও বলেন, “রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১৫ বছরের জন্য কবর পেতেও অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়। আর সরকারি কবরস্থানগুলোতে তো আর কবর বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। সেইসাথে এখানে কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার স্বজনেরা আমাদেরকে জানালে লাশের গোসল থেকে লাশ এনে দাফন কাফন করা সবকিছু আমরা করব। তাই আমাদের মনে হয় কবরের এই দাম বেশি না”।
শোয়েব হোসেনকে এমন একটি প্রকল্পের জন্য অর্থ পেলেন কীভাবে আর এই প্রকল্পের বাইরে আর কী ধরণের ব্যবসার সাথে জড়িত এমন প্রশ্ন করা তার জবাব দেননি তিনি। তার অফিসে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ জানিয়ে শোয়েব বলেন “এতো কথা মোবাইলে বলা যায় না। অফিসে আসেন একদিন”।
পত্রিকাগুলোতে দেওয়া প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞাপনে বলা হয়, “প্রায় ২০০ বিঘা এলাকা জুড়ে ৮০ হাজার কবরের সংকুলান করতে এই উদ্যোগ। পুরো প্রকল্পটি ইসলামী জীবনদর্শন ও মৃত্যু ও পরবর্তীকালীন কার্যক্রমকে প্রধান্য দিয়ে আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনা থেকে সাজানো। ... রওজাতুল জান্নাত-এর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হলো খিদমাহ সেবা। রাওজাতুল জান্নাত গতানুগতিক বাণিজ্যিক উদ্যোগের উর্ধ্বে একটি আধ্যাত্মিক প্রয়াস”।
এদিকে রাজধানীতে সরকারি কবরস্থানগুলোর দেখভালের দায়িত্বে আছে দুই সিটি কর্পোরেশন। সিটি কর্পোরেশনের মোট ৮টি কবরস্থানে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭৮ জনের মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা আছে এখানে। এসব কবরস্থানে একেকটি কবরের জন্য সর্বমোট খরচ হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। ছয় মাসের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায় এসব কবর। অন্যদিকে মিরপুর ও মোহাম্মদপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় স্থায়ীভাবে বরাদ্দ পাওয়া যায় কবরস্থান।
//এস এইচ এস//