করোনার টিকা: ধনীদের প্রয়োজন গরীবের লোভ!
প্রকাশিত : ১৮:৩৩, ২০ জানুয়ারি ২০২১ | আপডেট: ১৮:৩৪, ২০ জানুয়ারি ২০২১
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিবের দেওয়া তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৪৯টি ধনী দেশে ৩৯ মিলিয়ন ডোজের বেশি করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে একটি গরিব দেশে দেয়া হয়েছে মাত্র ২৫ ডোজ টিকা। ২৫ মিলিয়ন নয়, ২৫ হাজারও নয়, মাত্র ২৫টি! তিনি বলেন, বিশ্ব এক বিপর্যয়কর নৈতিক ব্যর্থতার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। আর এই ব্যর্থতার মূল্য দিতে হবে বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোয় জীবন ও জীবিকা দিয়েই।
করোনাভাইরাসের টিকা ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে প্রায় সবাই পাচ্ছেন। কারণ তারা সবাই ধনী। ধনাঢ্য দেশগুলোর সবাই নিজেরা টিকা আবিস্কার করতে না পারলেও টিকা পেতে তাদের কোনও বাধা নেই। আর দরিদ্র দেশগুলো না পারছেন টিকা বানাতে, না পারছেন কিনতে!
ভ্যাসকিন বাণিজ্যে তারাই পিছিয়ে পড়ছেন যারা অপেক্ষাকৃত কম সম্পদ আর স্বল্প ক্ষমতাশালী। আবার কোনও কোনও দেশে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষকে টিকা দেওয়া হবে সবার পরে। এখানে যুক্তি হলো- গরীব বা খেটে খাওয়া মানুষের রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা নাকি বেশি। ফলে তারা দেরিতে টিকা পেলেও চলবে।
পৃথিবীতে জীবনের মূল্য কোথাও সমান নয়। ধনীদের জীবনের মূল্য আর গরীবের জীবনের মূল্য কখনওই এক নয়। এজন্যই হয়তো ধনীরা মরে একবার, আর গরীববা মরে বার বার। ধনীরা লাখ টাকা নষ্ট করে ফুর্তি করে। আর গরীবরা প্রয়োজনেও খরচ করতে পারেন না একশত টাকাও। ফলে ধনীদের প্রয়োজন যদি গরীবদের প্রয়োজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে অবশ্যই সেটা হবে দু:সাহস দেখানো।
অর্থাৎ গরীবদের বেলায় সেটা হবে এক ধরনের লোভ! যেমন ধরুন, কোনও ধনীর দুলাল পাঁচ তারকা হোটেলে নৃত্য দেখে ব্যয় করেন লাখ টাকা। কিন্তু একজন রিক্সাওয়ালা কোনও এক বস্তিতে গিয়ে নাচ দেখতে চাইলে- তিনি হয়ে যাবেন লোভাতুর আর কামপুরুষ। ফলে ভ্যাকসিন পাওয়াটা ধনীদেরই অধিকার এবং প্রয়োজন, আর গীরবদের সেটা পেতে হবে এমনটি প্রত্যাশা করাও এক ধরনের লোভ আর দু:সাহস।
যদিও জীবন-জীবিকা নিয়েই মানুষ লড়ছে অনাদিকাল থেকে। মানুষ সৃষ্টির পর আদম আর হাওয়া যখন অতি সুখে শান্তিতে ছিলেন। তাদের সেই সুখের মধ্যে প্রথম যে প্যাঁচ লাগে, সেটাও কিন্তু ছিল জীবিকা নিয়েই। অর্থাৎ গন্ধম ফল খাওয়ার অপরাধে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটান সৃষ্টিকর্তা।
এই জীবিকা কখনও কখনও মানুষকে মৃত্যুর মুখেও ঠেলে দেয়। আবার নতুন করে জীবন দানও করে। এই ধরুন, জীবিকার টানে আপনি ঘর থেকে বেরিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে হঠাৎ কোনও এক যান এসে আপনার ওপর উঠে গেল। কোনও কিছু বোঝার আগেই আপনি চলে গেছেন জীবনের ওপারে।
আবার উল্টোদিকে এই জীবিকা ব্যতিরেকে আপনি বাঁচতেও পারবেন না। ফলে দুটোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষাকারীই জীবনকে সুখী করতে পারে। অবশ্য সুখ হচ্ছে- একটা আপেক্ষিক বিষয়। অনেকেই প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মিথ্যা বলে অন্তরে সুখ অনুভব করেন। আবার কেউ কেউ মানুষের ক্ষতি করে সুখ পান। পিকে হালদারের মতো লোকেরা আবার ব্যাংকের তথা আম জনতার টাকা মেরে তা পাচার করে সুখ খোঁজেন বিদেশের মাটিতে।
এক বছরের ব্যবধানে কোভিড-১৯ এর আঘাতে ২০ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন। এদের বেশিরভাগই ধনী মানুষ। আবার আক্রান্তের হারেও এগিয়ে রয়েছে ধনীরাই। ধনাঢ্য আর প্রভাবশালী দেশগুলোই বেশি নাস্তনাবুদ হয়ে গেছে। পিছিয়ে পড়া গরীব দেশগুলোতে এর প্রকোপ অনেকটাই কম। এসব দেশের টিকা প্রদানের তোড়জোড়ও কম। অথচ ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয় যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে গরীবরা মরবে না। এমনকি গরীবদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কম এ কথার কোনও ভিত্তি নাই।
তারপরও ভ্যাকসিন পাওয়ার দৌড়ে ধনীরাই নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছেন। আর গীরবেরা ভ্যাকসিককে খোদার আশির্বাদ ভেবে দিন গুণছেন। কেননা, খোদার আশির্বাদ মানুষকে আশাবাদী করে। যদিও সে আশা ঠিক কবে পূরণ হবে তার কোনও আভাস পাওয়া যায়না। অন্যদিকে ধনীরা হয়তো খোদার আশির্বাদ পেতেও কিছুটা এগিয়ে থাকেন। কেননা, এই আশির্বাদের সাথে পার্থিব কিছু ক্ষমতাও প্রভাব বিস্তার করে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তো ঘোষণাই দিয়েছেন, ভিভিআইপিরা আগে ভ্যাকসিন পাবেন না। তারা ভ্যাকসিন পাবেন পর্যবেক্ষণের পর। অথচ বিশ্বের অনেক দেশেই ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে স্বেচ্ছাসেবীদের গায়ে প্রয়োগ করা হয়েছে। এখানে কি তাহলে যারা আগে ভ্যাসকিন পাবেন তারা বাধ্যতামূলক স্বেচ্ছাসেবী হয়ে যাবেন?
এনএস/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।