ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত?

তানভীরুল ইসলাম

প্রকাশিত : ১৯:১৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ | আপডেট: ১৯:২৫, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। মহামারি এ করোনার থাবা কখন শেষ হবে সেটাও কেউ বলতে পারছে না। যেসব দেশ ভাইরাসটিকে ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে, তাদের মধ্যেও সংক্রমণ দ্বিতীয় দফায় (সেকেন্ড ওয়েভ) ফিরে আসা নিয়ে ভীতি রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার সেকেন্ড ওয়েভ বাংলাদেশে আসলে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে। এ অবস্থায় বর্তমান অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবিলায় আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিষয়ক কর্মকর্তা ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, ‘বাংলাদেশের হেলথ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম খুবই দুর্বল ও সেকেলের। ফলে আমরা জানি না ঠিক এই মুহূর্তে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের অবস্থান ঠিক কোথায়। আমরা প্রথম ঢেউয়ের কোন অবস্থানে আছি, দ্বিতীয় ঢেউ আসবে কিনা, আসলে সেটা কবে নাগাদ আসবে- এর কোনো কিছুই আমরা বিজ্ঞানসম্মত তথ্যের ভিত্তিতে জানি না৷ অনেকে অনেক মন্তব্য করে থাকেন, কিন্তু মন্তব্যগুলো শুধু নিজস্ব অনুমানের ভিত্তিতে করা, যার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।’

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় প্রস্তুত -কথাটি বলতে পারছি না। জনগণকে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক এখনো করা যায়নি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহ পরিষ্কার-পরিছন্ন থাকার বিষয়টি এখনো দেশের বেশির ভাগ মানুষ আমলে নিচ্ছেন না, করোনা শনাক্তকরণ এবং 'কন্টাক্ট ট্রেসিং' করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য সাফল্য এখনো দেখা যাচ্ছে না।’

জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, ‘ঢাকাসহ কয়েকটি বড় শহরের বাইরে করোনা শনাক্ত করার অথবা চিকিৎসার উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা এখনো গ্রহণ করা হয়নি, পর্যাপ্ত সংখ্যক আইসিউ বেডও নেই। যে কয়টি আছে সেগুলোকে উপযোগী-প্রস্তুত করার জন্য প্রশিক্ষিত চিকিৎসক অথবা নার্স একেবারেই অপ্রতুল। এখনো অধিকাংশ হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিকিৎসক সহ সকল স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা এখনো অপ্রতুল এবং তাদের মনোবল আর আস্থা ফিরিয়ে আনার কার্যকর কোনো ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রথম ওয়েভ নিয়ন্ত্রণ করার কাছাকাছিও নেই। যদি ধরে নিই, বাংলাদেশ সামনে প্রথম ওয়েভ নিয়ন্ত্রণ করবে। তাহলে দ্বিতীয় ওয়েভ এলে তিনটি সমস্যা দেখছি। ব্যবসায়ী, পোশাক ও পরিবহন সংগঠন নেতাদের কাছ থেকে বাধা আসবে। দীর্ঘ দিন তারা নানা বিধিনিষেধ মেনে চলেছে। সীমিত আকারে কিছু বিধিনিষেধ এখনো আছে। বহু লোক চাকরিচ্যুত হলো, ফল পেল কী? পরে গিয়ে আবারো একই ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করতে গেলে স্বাভাবিক কারণেই বাধা আসবে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড সাইকোথেরাপি বিভাগের অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার বলেন, ‘আগে কোভিড নেগেটিভ হবার পর স্বস্তি পেলেও এখন দেখা যাচ্ছে তার পরেও কিছু সমস্যা চলছে। আর নতুন যোগ হওয়া কোভিড ফগে উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতার পাশাপাশি স্মৃতি বিভ্রাট হচ্ছে। তাই বিষণ্নতা-অবসাদ দূর করতে ওষুধ যেমন প্রয়োজন, তেমনি সেই সঙ্গে দরকার অ্যাকটিভিটি।’

দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি তেমন নেই বললেই চলে। করোনার অটিজম, চাইল্ড মেন্টাল হেলথ নিয়ে কাজ হলেও এ বিভাগে জনবল কম। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ কিছু কিছু জায়গায় পোস্ট কোভিড ক্লিনিক হয়েছে। মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিমের মাধ্যমে রোগীদের কোপিং মেকানিজম সর্ম্পকে ধারণা দিচ্ছেন তারা। তিনি আরও বলেন, কাউন্সেলিং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভালো কাজ করে।’

তবে দেশে জেলা সদর হাসপাতালগুলো সাইকিয়াট্রিস্ট পোস্ট নেই জানিয়ে অধ্যাপক ঝুনু শামসুন নাহার বলেন, ‘যেহেতু কোভিড প্যানডামিকের সঙ্গে মেন্টাল হেলথ প্যানডামিকের বিষয়টি চলে আসছে, তাই জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে একজন করে সাইকিয়াট্রিস্ট রাখতে হবে। সেই সঙ্গে সাইকোলজিস্টের পদ তৈরি করতে হবে এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট রাখা যেতে পারে।’

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৫৯ জনে। এই সময়ে ১৪ হাজার ২১৬টি নমুনা পরীক্ষা করে সংক্রমণ ধরা পড়েছে ১ হাজার ৮১২ জনের শরীরে। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩২ জন। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২ হাজার ৫১২ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল দুই লাখ ৪৩ হাজার ১৫৫ জনে।

এসি


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি