করোনায় খাদ্যাভ্যাস যেমন হওয়া উচিত
প্রকাশিত : ১৫:৪৮, ১২ এপ্রিল ২০২১
মহামারী, লকডাউন এসব কিছুকে মাথায় রেখে আমাদের সুস্থ থাকতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা নির্বাচন করা জরুরি। কেননা করোনা প্রতিরোধের প্রথম শর্ত হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখা। শরীরকে স্ট্রেস ফ্রি রাখা।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই এ সময়ে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। ভিটামিন এ, ই, সি, বিটা-ক্যারোটিন, জিংক, মেলেনিয়াম এগুলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভিটামিন ও মিনারেল।
এবারের রোজায় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে চলাও আবশ্যক, যাতে সুস্থতার সাথে রোজা পালন করা যায়। প্রায় ১৫ ঘন্টা সময় রোজা রাখার পর ইফতার করতে হবে।
তাই খাদ্য গ্রহণে লক্ষণীয় বিষয়সমূহ জেনে নেয়া যাক-
* পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি পান করে দেহের পানি স্বল্পতা দূর করা। কেননা ডিহাইড্রেশন দেহের ইমিউনিটিকে দুর্বল করে দেয়। চোখ, নাক, মুখ, ফুসফুসের মিউকাস কমে যায়। ফলে জীবাণুর আক্রমণ দ্রুত হয়। এই মিউকাস দেহকে জীবাণুর সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।
* চাহিদা অনুযায়ী সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।
* অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ। ভিটামিন ও মিনারেল যেমন- ভিটামিন-এ, সি, ই, বিটা ক্যারোটিন, জিংক ও মেলেনিয়াম ইত্যাদি।
* কড়া ভাজা ও ভুনা খাবার পরিহার করা। কারণ, এগুলো শরীরে ফ্রি রেডিকেল তৈরি করে।
* প্রতিদিন একটি ডিম খাদ্য তালিকায় রাখুন। কারণ ডিমের কুসুমে ভিটামিন এ, ডি, জিংক কোলিন, মেলেনিয়াম সমৃদ্ধ এবং ডিমের প্রোটিন উচ্চ জৈবমূল্য সমৃদ্ধ।
* তাজা রঙিন শাকসবজি ও ফল প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা। এগুলো ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হজমে সাহায্য করে।
* একজন ব্যক্তির বয়স, ওজন, উচ্চতা, কাজের ধরন এবং বাজারে খাদ্যের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিনের খাদ্য নির্বাচন করতে হবে। সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এ বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে সারা বছরের খাদ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
* দীর্ঘসময় পেট খালি থাকার কারণে বিপাক ক্রিয়ার গতি কমে যায়। সেই সাথে হুট করে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণে লিভার ও কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। তাই ইফতারি হতে হবে হালকা কিন্তু উচ্চ জৈবমূল্য সমৃদ্ধ খাবার। যেমন- ছোলা, খেজুর, ডিম ও ফল।
* ইফতার শেষ করে মাগরিবের নামাযের পর খাদ্যতালিকায় নির্ধারিত সকালের খাবারটি রাখা যেতে পারে। এরপর তারাবি নামাযের শেষে বা পূর্বে রাতের খাবার খাবেন। নির্ধারিত দুপুরের খাবারটি খেতে হবে সেহরীতে। খাওয়া শেষে ১ কাপ দুধ খেতে পারলে ভাল। যাদের দুধে সমস্যা তারা ১ কাপ দুধের তৈরি টকদই খেতে পারেন। সেহরিতে খুব আগে খাওয়া শেষ না করাই ভালো। এমনভাবে খেতে হবে যেন সময় শেষ হবার ঠিক পূর্বমুহূর্তে খাদ্য গ্রহণ শেষ হয়। এ বিষয়টি বিশেষভাবে ডায়াবেটিক রোগীদের।
* খাদ্যতালিকা হতে কার্বহাইড্রেট কোনভাবেই বাদ দেয়া যাবে না।
* ফল হলো বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল, আঁশ এবং নানা রকম প্রাকৃতিক ফটোকেমিক্যালের উৎস। যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উৎপন্ন করে সুস্থ সবল ও কর্মক্ষম রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব। এ সময়ে পেঁপে, তরমুজ, বাঙি এসব ফল থেকে বিটা-ক্যারোটিন ও লাইকোপিন শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। পেয়ারা, আমড়া, করমচা, অরবরই, পায়লা, আমলকী, কমলালেবু, লেবু ইত্যাদি টকজাতীয় ফল ভিটামিন সি’র ভালো উৎস এবং শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উৎপন্ন করে নানারকম সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে।
সুতরাং আসুন, আমরা পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী সুষম খাদ্য গ্রহণ করি এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রেখে সুস্থ জাতি গঠন করি।
লেখক : পুষ্টিবিদ
এএইচ/এসএ/