ঢাকা, শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

করোনায় ডায়াবেটিস রুগীদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ও করণীয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৫৭, ১ জুলাই ২০২০

ডা. এমএ হালিম খান

ডা. এমএ হালিম খান

যে কোন মানুষই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে ডায়াবেটিসের মত দীর্ঘস্থায়ী রোগে যারা ভুগছেন তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক গুণ বেশি। যার ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ যত খারাপ (এইচবিএওয়ানসি যত বেশি) তার রোগে ভোগার সম্ভাবনা তত বেশি।

ডায়াবেটিস রুগীদেরও সাধারণ মানুষের মতই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু ডায়াবেটিস রুগীরা করোনায় আক্রান্ত হলে, জটিলতা সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। করোনায় আক্রান্ত হলে ডায়াবেটিস রুগীদের সুগার অনেক বেশি বেড়ি যেতে পারে। সুগার বাড়তে বাড়তে ডায়াবেটিক কোমা পর্যন্ত হতে পারে। এমনকি মাল্টি অর্গান ফেইলুরও হতে পারে। জটিল নিউমুনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা ও বেড়ে যাবে।

নিউমোনিয়া হলে সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন ও হতে পারে। জ্বর ৭ দিন থেকে ১৪ হয়ে গেলেও সারবে না। তাদের শরীরে এন্টিবায়েটিক গুলি ঠিক মতো কাজ না ও করতে পারে। বিভিন্ন রকম ইনফেকশন হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। করোনা নিয়ে নানা রকম দুঃশ্চিন্তা করে ট্রেস হরমোন বেড়ে যেতে পারে। তাদের শরীরে ইনসুলিন সঠিক ভাবে কাজ নাও করতে পারে। ব্লাড সুগার লেভেল বেড়ে যেতে পারে। শরীরিক পরিস্থিতি যাই হোক ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অসুধ খাওয়া ঠিক হবে না, এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।  

ডায়বেটিস করোনাকে আর করোনা ডায়বেটিসকে দারুণভাবে প্রভাবিত করতে পারে। কভিড থাকলে ডাায়াবেটিক বেড়ে যাবে, ডায়েবেটিক থাকলে কভিড জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই এই সময়টায় ডায়াবেটিস রুগীদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। আর রুগীও নিজ দায়িত্বে নিরাপদে থাকতে হবে। 

সাপ্লিমেন্টের উপর নির্ভর না হয়ে ভিটামিনের জন্য ন্যাচারাল ফূড খেতে হবে, ন্যচারাল সোর্স থেকে ভিটামিন পাওয়া গেলে সাপ্লিমেন্টের কোন দরকার নেই। ভিটামিন সি বেশি পরিমাণে খেলে শরীরের যে টুকু প্রয়োজন তা রেখে বাকিটা শরীর থেকে বের হয়ে গেলেও যদি সিভিট বেশি খাওয়া হয়, তাহলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।  

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে এবং শরীর সুস্থ রাখতে সুষম খাবার খেতে হবে। কার্বোহাইড্রেড, প্রেটিন, ফ্যাট, বিভিন্ন রকম ভিটামিন, মিনারেলস এই জিনিস গুলি যেখানে আনুপাতিক হারে আছে তা খেতে হবে। ভাত, রুটি, আলু তে শর্করা বেশি থাকে, শর্করা আমাদেরকে শুধু মাত্র এনার্জি দিয়ে থাকে, কিন্তু ইমিউনিটি দিতে পারে না তাই
শর্করা বেশি খাওয়ার প্রয়োজন নাই।

ইমিউমিনিটির জন্য প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলস খাওয়া জরুরি। প্রোটিনের জন্য মাছ মাংস দুধ ডিম ডাল জাতীয় খাবার খেতে হবে। ভিটামিন ও মিনারেলের জন্য শাকসব্জি এবং ফল মূল খেতে হবে। ডায়াবেটিস আক্রান্তরা এই খবার গুলি আনুপাতিক হারে খেতে পাররে।  

ডায়াবেটিস রুগীরা পরিমিত খাবার অবশ্যই খাবেন। কোন কোন খাবার ইচ্ছে মতো পেট ভরেও খাওয়া যায় যেমন শাক ইচ্ছে মতো পেট ভরে খাওয়া যায়, মাটির উপরের সব্জি গুলি পেট ভরে খাওয়া যায়। রসালো ফল ও পরিমিত খেতে হবে, যেমন মাঝারি আকৃতির আমের অর্ধেকটা খেতে পারবে, কিন্তু প্রত্যেকদিন একটি করে ফল খাবে,
একেক দিন একেক ফল খাওয়াই উত্তম।  

যারা হাঁটতে এখন ঘরের বাইরে যেতে পারছে না তারা কি করবেন?

কোন অবস্থাতেই হাঁটা বন্ধ করা যাবে না, বাসায় শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। এক সাথে বেশিক্ষণ কেও হাটতে না পারলে প্রত্যেকদিন তিন বেলা ১০ থেকে ১৫ মিনিট করে যেমন সকাল, দুপুর বা বিকেল এবং রাতে তিন ভাগে হাঁটতে পারেন।

শরীর সুস্থ রাখার জন্য ভটিামিন ডি অত্যান্ত প্রয়োজনীয়। তাই ভিটামিন ডি এর প্রয়োজনে ছাদে অথবা বাইরে গিয়েও হাটতে হবে। বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই মুখে মাস্ক ব্যবহার করে, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাঁটলেই চলবে, সকাল ০৯ টা থেকে ১০ টার মধ্যে হাঁটাই ভালো।  

পরামর্শ দিয়েছেন ডা. এমএ হালিম খান, ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি