ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

করোনায় নিউমোনিয়া হলে তার লক্ষণ কী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৪১, ২৩ আগস্ট ২০২০

কোনও অবস্থাতেই নিউমোনিয়া নামক ফুসফুসের অসুখটিকে হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন পালমনোলজিস্ট অশোক সেনগুপ্ত। সদ্যোজাত এবং বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া অত্যন্ত মারাত্মক হয়ে দাঁড়াতে পারে। ‘নিউমোনিয়া’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল লাংসের ইনফেকশন ও ইনফ্লামেশন। অর্থাৎ ফুসফুসে সংক্রমণ হয় ও ফুলে ওঠে। সোজা ভাবে বললে আমাদের ফুসফুস অনেকটা স্পঞ্জের মতো, কোষগুলি  ভর্তি  থাকে হাওয়া দিয়ে। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় ফুসফুসকে গ্যাস ভর্তি বেলুনের সঙ্গে তুলনা করা যায়। 

নিউমোনিয়া হলে ফুসফুস ক্রমশ কঠিন হতে শুরু করে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘কনসলিডেশন’, এক্সরে করলে সাদা দেখতে লাগে। “ফুসফুসের এই সাদা দেখানোটা আমরা ফুসফুস বিশেষজ্ঞরা একেবারেই পছন্দ করি না”, বললেন অশোকবাবু। এক্সরের ছবিতে ফুসফুস কালো দেখানো মানে ফুসফুস বাতাস ভর্তি এবং সুস্থ। আর সাদা মানেই সমস্যা শুরু হয়েছে, নিউমোনিয়ার প্রাথমিক  রেডিওলজিক্যাল ফাইন্ডিংস হল এই এক্সরে।

অশোক সেনগুপ্ত জানালেন, “নিউমোনিয়া হলে তিনটি প্রধান সমস্যা দেখা যায়। জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট, এর সঙ্গে বুকে ব্যথাও থাকতে পারে, আমরা বলি প্লুরিটিক ব্যথা। জোরে শ্বাস টানলে বুকে ব্যথা করে। নিউমোনিয়ার শুরুতে শুকনো কাশি হয়। পরের দিকে কাশির সঙ্গে সর্দি বেরোয়। সর্দিতে রক্ত থাকতে পারে, অনেক সময় কালচে লাল ধরনের রক্ত বের হয়।” এতো গেল উপসর্গের কথা। 

এবারে জেনে নেওয়া যাক, নিউমোনিয়া কখন খারাপের দিকে যায়! অশোকবাবু জানালেন, নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ফুসফুস থেকে যখন শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে তখনই তা মারাত্মক আকার নিতে শুরু করে। বিশেষ করে যখন একটা সেপটিক প্রসেস ছড়িয়ে পড়ে, তখন রোগটা ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। এক্সট্রিম এজ গ্রুপ অর্থাৎ বাচ্চা ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বেশি বয়সে যাঁদের ডায়বিটিস ও হার্টের সমস্যা আছে তাঁদের জন্য অসুখটি সাংঘাতিক হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি।

নিউমোনিয়ার অন্যান্য উপসর্গ হিসেবে মাথার যন্ত্রণা, বমি বা বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, খিদে কমে যাওয়া, অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়া,কাঁ পুনি দিয়ে জ্বর আসার মতো উপসর্গ দেখা যতে পারে বললেন পালমোনলজিস্ট সৌম্য দাস। শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে ঠোঁট ও আঙুলের ডগা নীলচে হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিভিন্ন কারণের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে নিউমোনিয়া হতে পারে, যেমন এখন সার্স কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণে নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। 

এছাড়া যে কোনও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এবং রেসপিরেটরি ভাইরাস বা আরএসভি ও রাইনো ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে নিউমোনিয়া হতে পারে। এছাড়া ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের সংক্রমণের কারণেও নিউমোনিয়া হয়। সৌম্যবাবু জানালেন যে, বিভিন্ন ধরনের নিউমোনিয়ার মধ্যে আছে কমিউনিটি অ্যাকোয়ার্ড নিউমোনিয়া, হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড নিউমোনিয়া, ভেন্টিলেটর অ্যাসোসিয়েটেড নিউমোনিয়া এবং অ্যাসপিরেশন  নিউমোনিয়া অর্থাৎ খাবার সময় সরাসরি ফুসফুসে খাবার গিয়ে বা জল সহ অন্যান্য পানীয় ফুসফুসে ঢুকে গিয়ে নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

বেশি বয়সে যাঁদের ডায়বিটিস ও হার্টের সমস্যা আছে তাঁদের জন্য অসুখটি সাংঘাতিক হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। 

অসুখটি ছোঁয়াচে কিনা— এই প্রশ্নের উত্তরে সৌম্যবাবু জানালেন, ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া হলে হাঁচি-কাশির মধ্যে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক যেমন ২০২০-র অতিমারি সৃষ্টিকারী ভাইরাস সার্স কোভ-২ পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। যে কোনও জীবাণুই হাঁচি-কাশি ও কথা বলা মারফৎ ছড়িয়ে পড়ে। মাস্ককে আমাদের জীবনের অঙ্গ করে নিতে পারলে এই সমস্যা অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা যেতে পারে। অশোক সেনগুপ্ত জানালেন যে, জ্বর যখন থেকেই যায় ও কমার কোনও লক্ষণ থাকে না তখন নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ফুসফুসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে খারাপের দিকে যায়। এর ফলে আক্রান্তের রক্তচাপ কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এক্ষেত্রে রোগীকে ভ্যাসোপ্রেশার ওষুধ দিয়ে ব্লাড প্রেশার স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়। যদি ফুসফুসের অবস্থা খুব খারাপ হয়, তাহলে ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা  করতে হয়। ইনভেসিভ (গলায় টিউব পরিয়ে) ও নন ইনভেসিভ (বাইপ্যাপ) দুই ধরনের ভেন্টিলেটর দিয়ে রোগীর কষ্ট কমানোর পাশাপাশি সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হয়। 

ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে যে নিউমোনিয়া হয়, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে একাধিক অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে রোগীকে সুস্থ করার চেষ্টা করা হয়। অনেক সময় নিউট্রোপিনিক নিউমোনিয়ার রোগীদের (যাঁদের রক্তে শ্বেত কণিকার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে কম) ক্ষেত্রে ব্রড স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকের পাশাপাশি অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ ব্যবহার করতে হতে পারে, বললেন অশোকবাবু। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নিউমোনিয়া মূলত ভেন্টিলেটর অ্যাসোশিয়েটেড নিউমোনিয়া বা ভিএটি। অত্যন্ত খারাপ ধরণের জীবাণু এই নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী। ভেন্টিলেটরে বেশিদিন থাকলে ভিএটির ঝুঁকি খুব বেশি। তবে কোভিড-১৯  সংক্রমণের ফলে যে নিউমোনিয়া হয়, তা  ক্লাসিকাল নিউমোনিয়ার থেকে আলাদা। ফুসফুসের পেরিফেরি অর্থাৎ ফুসফুসের উপরিভাগে সংক্রমণ হয়, একে বলে পেরিফেরাল নিউমোনিয়া।

ফুসফুসের সিটি স্ক্যানে যদি দেখা যায় যে শুধুমাত্র পেরিফেরাল অংশে হালকা সাদাটে প্যাচ আছে তা হলে নভেল করোনা ভাইরাসের কথা ভাবতে হবে। অল্প চেনা করোনা ভাইরাসের কারণে নিউমোনিয়া হলে ফুসফুসের অবস্থা হয় গ্রাউন্ড গ্লাস ওপাসিটির মতো। অর্থাৎ গুঁড়ো কাচের মত অস্বচ্ছ। ক্লাসিক নিউমোনিয়ার থেকে এই ধরনের নিউমোনিয়ায় ফুসফুস তুলনামূলক কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিউমোনিয়ার মারাত্মক সংক্রমণের হাত থেকে রেহাই পেতে শিশু ও ৬৫-র বেশি বয়স্ক সিনিয়র সিটিজেনদের টিকা নেওয়া উচিৎ। একই সঙ্গে ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকাও নেওয়া দরকার। কেন না, ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে অনেক সময় নিউমোনিয়ার ঝুঁকি থাকে। যাঁদের ডায়বিটিস ও ক্রনিক ফুসফুসের অসুখ আছে, সেই সিনিয়র সিটিজেনদের অবশ্যই টিকা নেওয়া দরকার। সুস্থ থাকতে মাস্ককে সঙ্গী করার পাশাপাশি ওজন ঠিক রাখতে নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন, ভাল থাকুন। সূত্র: আনন্দবাজার

এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি