ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

করোনায় লন্ডনে আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু

সরওয়ার হোসাইন লন্ডন থেকে

প্রকাশিত : ১৬:৩৩, ১৪ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৮:৫৬, ১৪ মার্চ ২০২০

করোনা ভাইরাসে আরেক বাংলা‌দে‌শির মৃত্যু

করোনা ভাইরাসে আরেক বাংলা‌দে‌শির মৃত্যু

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পূর্ব লন্ডনে আরও এক বাংলা‌দে‌শির মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৩ মার্চ) সকাল সাড়ে ৬টায় রয়েল লন্ডন হাসপাতালে ৬৬ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি মারা যান। 

জানা যায়, গত সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি রয়েল লন্ডন হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির ৮ দিন পর তিনি মারা যান। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটে। যুক্তরাজ্যের টাওয়ার হ্যামলেটস এর বাসিন্দা ছিলেন তিনি। পারিবারিক গোপনীয়তা রক্ষার্থে মৃত ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। কবে নাগাদ মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে তা এখনো জানানো হয়নি।

এদিকে, পূর্ব লন্ডনের বাঙালী পাড়ায় করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন প্রবাসী বাঙালীরা। স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতার পাশাপাশি এই ভয়াবহ বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে সবাই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন।  ভবিষ্যৎ খাবার সঙ্কট মোকাবেলায় নিজেদের খাবার মজুদ করতে অনেকেই ভীড় জমাচ্ছেন মার্কেটে। গোটা ব্রিটেনের সুপার স্টোরগুলোতেও ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। 

এর আগে গত রোববার (৮ মার্চ) ব্রিটেনে যে তৃতীয় ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে মারা গেছেন, তিনি একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত। সংক্রমণ ধরা পড়ার মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় ম্যানচেস্টারের এক হাসপাতালে ৬০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি মারা যান।

এদিকে, ইতোমধ্যে বিশ্বের ১৩১টি দেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এতে নেই কোনও চীনা নাগরিক। শুধু যে প্রাণহানি থেকে মুক্তি মিলেছে তা নয়, উহানসহ দেশটির অন্যান্য অঞ্চলে এই সময়ে নতুন করে কোনও ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। উল্টো সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন নতুন আরও প্রায় ৩ হাজার নাগরিক। যার সংখ্যা বেড়ে ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। 

ফলে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে মৃত্যুর মিছিল ভারি হলেও উন্নতির দিকে এশিয়ার সবচেয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দেশটি। 

এদিকে, বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাসে ইতালি, ইরানসহ অন্যান্য দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এতে সকল প্রতিষেধক যেন অকেজো হয়ে গেছে। কানাডা ও ইসরাইল ভ্যাকসিন আবিষ্কারের বার্তা দিলেও তা হাতে পাওয়া যাবে বছরের শেষ দিকে। ততোদিনে চলমান অবস্থা অব্যহত থাকলে গোটা বিশ্বই মৃত্যুকূপে পরিণত হবে। 

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বৈশ্বিক জরুরি অবস্থার পর মহামারি ঘোষণার করেছে। তারপরও নিয়ন্ত্রণের বাহিরে করোনা সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বের নতুন করে ৮ হাজারেরও বেশি মানুষের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ ধরা পড়েছে। যার সবেচেয় বড় ভুক্তভোগী ইরোপীয় রাষ্ট্র ইতালি। 

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে আজ শনিবার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, ‘বিশ্বের অন্তত ১১৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি এ ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে নতুন করে ৪২৫ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৩৭৩ জনের। বর্তমানে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১ লাখ প্রায় ৪১ হাজার মানুষ। 

ভাইরাসটিতে মূলভূখন্ড চীনে অপরিবর্তীত রয়েছে মৃতের সংখ্যা। সেখানে শুক্রবার পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ হাজার ১৭৬ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৮১৩। 

অপরদিকে, চীনের বাহিরে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ইতালিতে।  গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে আরও ২৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দিন ১৮৯ জনের মৃত্যু হয়। এরও আগের দিন ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২৬৬ জনের প্রাণহানি ঘটল। যা উৎপত্তিস্থল চীনের বাহিরে সর্বোচ্চ। 

এদিকে, মৃতের চেয়ে কয়েকগুণ লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সবধরনের সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত দেশটিতে দীর্ঘ হচ্ছে আক্রান্তের মিছিল। যেখান থেকে অনেকেই লাশ হয়ে ফিরছেন। 

গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার নাগরিক। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আর অবরুদ্ধটি দেশটিতে ছয় কোটি মানুষকে নেয়া হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে। 

ভয়বাহ এমন পরিস্থিতি ইউরোপের অন্যান্য দেশেও। যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে ফ্রান্স, স্পেনসহ অন্যান্য দেশগুলোয় দ্রুত সংক্রমণ বিস্তার করায় ইউরোপকে ‘মহামারির কেন্দ্রস্থল’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যেখানে লন্ডনে ২ বাংলাদেশির মৃত্যুর পাশাপাশি স্পেনে ৮ বাংলাদেশি মরণ এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন। 

থেমে নেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানও। ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৫১৪ জন মানুষ মারা গেছেন। যেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারান ৮৫ জন। আক্রান্ত সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। এরপরই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। তবে সেখানে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে করোনা। এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের দেশে প্রায় ৮ হাজার মানুষ করোনায় ভুগছেন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৬৭ জন।

এদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ ভারতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৩ মার্চ) দিল্লির এক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ওই নারীর বয়স ৬৬ বছর। 

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি