ঢাকা, মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

করোনা: এখনই সাইকোলজিক্যাল ফার্স্ট এইড চালুর দাবি বিশেষজ্ঞদের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:০৭, ৫ জুলাই ২০২০ | আপডেট: ১৪:১৩, ৫ জুলাই ২০২০

Ekushey Television Ltd.

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ক্রমবর্ধমান বিস্তারে বাড়ছে আতঙ্ক। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিও। অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে হতাশা বিষণ্ণতা আর অবসাদে সব বয়সী মানুষ। তাদের কেউ বা ভুগছেন আচরণগত সমস্যায়। এমন পরিস্থিতিতে এখনই সাইকোলজিক্যাল ফার্স্ট এইড চালুর দাবি জানিয়েছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। 

তাঁরা জানান, যিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন তিনি মৃত্যুর কাছাকাছি যাচ্ছেন। কেউ কাছের মানুষকে হারাচ্ছেন। অপরদিকে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারছি না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অনিশ্চয়তার কারণে হতাশা-উদ্বিগ্নতা বেড়ে যাচ্ছে, অনেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। এসবই আমাদের ওপর প্রভাবে ফেলছে।

শনিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামের নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন অনলাইন আলাপচারিতায় এসব কথা উঠে আসে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড সাইকোথেরাপি বিভাগের অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার বলেছেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে এখনই সাইকোলজিক্যাল ফার্স্ট এইড চালু করতে হবে। আমরা এখন স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের মধ্যে আছি, ছয় মাস পার হয়ে গেলে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের মধ্যে অনেকে চলে আসবে। এখন থেকেই ফার্স্ট এইড চালু করতে পারলে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার কমানো সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, ‘স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিশুদের জীবনযাপনে বড় ছন্দপতন হয়েছে। তারা বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে পারছে না। যারা একটু বড়, আবেগ কাজ করে, তারা প্রিয়জনদের সঙ্গে মিশতে পারছে না। সেই কারণে তাদের হতাশা-উদ্বিগ্নতা বাড়তে পারে। স্লিপ-সাইকেল চেঞ্জ হয়ে যেতে পারে। কোনো বাচ্চার বাবা-মা কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে থাকলে সেপারেশন অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারে ভুগতে হয়।’

‘বাংলাদেশে আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলে চিকিৎসা শিক্ষা কারিকুলামে মেন্টাল হেলথ নেই বললেই চলে। আমাদের কারিকুলাম উন্নত করা দরকার’— বলেন ডা. নাহার।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের মানসিক চাপটা বেশি। কারণ বাবা-মায়ের মানসিক চাপ তাদের ভেতরে সংক্রমিত হচ্ছে। যারা সরাসরি সেবা দিচ্ছেন, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর ঘাটতি আছে। কষ্টকর পোশাক পরে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টার কাজ করছেন। তারপরও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, স্বীকৃতির অভাব রয়েছে। পরিবারের কেউ সংক্রমিত হলে তারা নিজেদের দায়ী করছেন। তাদের মেন্টাল হেলথ ঠিক রাখার দায়িত্ব টিম লিডারদের। মনে রাখতে হবে, কোভিড-১৯ মোটেই হানড্রেড মিটার রেস না, এটা ম্যারথন। আমি নিজে সরাসরি আইসিইউতে গিয়ে কথা বলেছি, চিকিৎসকদের মনোবলে ঘাটতি নেই। তবে প্রশাসনের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে মানসিক কষ্ট তৈরি হয়েছে। সেই জায়গায় যেন প্রশাসন সচেতন হয়।’

তিনি বলেন, ‘পলিসি লেভেল থেকে মাইন্ড সেট চেঞ্জ করতে না পারি তাহলে হবে না। আমাদের পলিসি মেকার যাদের মনে করা হয় সমাজ পরিবর্তনে সহায়ক, তাদের পরিবারের কোনো সদস্যের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হলে হাসপাতালে কিংবা চেম্বারে আসতে চান না। তারা বলেন, রেস্টুরেন্টে চা-কফি খেতে খেতে আমার সন্তাকে দেখেন, এই ব্যারিয়ার আমরা ভাঙতে পারছি না। মেডিক্যালের শিক্ষার্থীদের যেহেতু মেন্টাল হেলথ বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয় না, তাই তারাও আগ্রহী হয় না।’

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির মেন্টাল হেলথ বিভাগের প্রকল্প পরিচালক ডা. এম তাসদিক হাসান বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, নারী চিকিৎসকদের স্ট্রেস অনেক বেশি। এটার পেছনে সোশ্যাল, ইকোনমিক্যাল ও পলিটিক্যাল ফ্যাক্টর আছে। তাদের সামজিক সুরক্ষাও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। স্যোশাল স্টিগমাগুলো দেখা যাচ্ছে, ডাক্তারদের বাসা থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। সেখানেও প্রশ্ন আছে, রাষ্ট্র কেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে না?’

‘আরেকটি বিষয় ভাবতে হবে, ইতোমধ্যে যারা মানসিক সমস্যায় আছেন, তারা যদি হাসপাতালে যেতে না পারেন তাদের চিকিৎসা পদ্ধতি কী হবে? সব ধরনের ডিসঅ্যাবিলিটি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। অনেক তথ্য যা এখনো বিজ্ঞানসম্মত না, সেগুলো আমরা বিশ্বাস করছি। যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাবে ফেলছে। তাই এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে, এভিডেন্স যেন একটা সোর্স থেকে আসে’— বলেন ডা. তাসদিক।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি