কর আদায়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছি: নজিবুর রহমান
প্রকাশিত : ১৮:৫৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭
দেশের রাজস্ব আহরণে কর আদায়ে অসম্ভবকে সম্ভব করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান।
মঙ্গলবার ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ’র মুক্তিযুদ্ধ মিলনায়তনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
এনবিআর ও বাংলাদেশ ট্যাক্স ল’ইয়ার্স এসোসিয়েশন আয়োজিত এ মতবিনিময় সভা ও রাজস্ব সংলাপে এনবিআর সদস্য সিরাজুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন।
এতে এনবিআর সদস্য মীর মুস্তাক আলী, আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মনিরুল হুদা, ঢাকা ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর মজুমদার, ঢাকা ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, দেশের রাজস্ব আহরণে মানবিক দৃষ্টিতে আমরা সবাই একসূত্রে সম্পৃক্ত হয়েছি। গত বছর আমরা যে যাত্রা শুরু করেছিলাম। তাতে অনেক দূর এগিয়েছি। এখন আমাদের একটা কনসালটেটিভ কাঠামো হয়েছে।
তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে করবান্ধব পরিবেশ গড়তে কর আইন যেন করদাতাদের সহনীয় হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার দাবি উঠেছে। আমি বলবো কর আইন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গণমুখী-ই হবে। এছাড়া কনসালটেটিভ কমিটির প্রত্যেকটা আইন কর আইনজীবিদের মতামতের ভিত্তিতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, বছরের প্রায় শেষ, আমরা এ বছরে অসম্ভবকে সম্ভব করেছি। আমাদের আইকর বিভাগ ও আইনজীবিদের স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক কাজের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। তাই গণমাধ্যমে এটাই বলা যায়, যে আমাদের আয়কর বিভাগ আইকর বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
ঢাকা ট্যাক্সেস বার এসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, অনলাইনে আয়কর রিটার্নের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। তাই অতি দ্রুত দেশের সব কর অঞ্চলে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থা করতে হবে। সেজন্য প্রয়োজনে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মনিরুল হুদা বলেন, বর্তমানে এক এক কমিশনের এক আইনে কর বিষয়ক মামলাগুলো চলছে। কোন কোন কমিশনার বলেন সব কেস একজন কমিশনারই অনুমোদন করবেন। অথচ একটা ফাইল কমিশনার পর্যন্ত পৌঁছাতে ১৮টি ধাপ পার হতে হয়। আমার প্রশ্ন হলো একজন কমিশনার কীভাবে সব কেস একাই দেখবেন? এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা দরকার।
চট্টগ্রাম ট্যাক্স এসোসিয়েশেনের মাহফুজুল হক মনি বলেন, অডিট যেন করদাতাদের জন্য ভীতি সঞ্চার না করে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া কর আইনজীবিরা কী ব্যবহারজীবি হবেন, না কর আইনজীবি হবেন- সেটাও এনবিআরকে দেখতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই। করআইনজীবির সম্মান চাই। সে জন্য আমাদের কী করতে হবে তাই বলেন। আমরা কেন হাইকোর্টে মামলা লড়তে পারবো না। আমাদের দূর্বলতা কোথায়। যদি দুর্বলতা থাকে তো এমন পরীক্ষা নেন, যা পাশের মাধ্যমে আমরা হাইকোর্টে লড়তে পারি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ট্যাক্স লইয়ার্স এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কয়েক দফা দাবি ও প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। যার মধ্যে গ্রোস প্রফিট (জিপি) এর পুরাতন ও বাস্তবতা বিবর্জিত হার জরুরি ভিত্তিতে পরিবর্তন করে বাস্তবমুখী নীতিমালা করার প্রস্তাব ছিল অন্যতম। এর ফলে করদাতারা সঠিক তথ্য প্রদানে আগ্রহী হবেন এবং কর রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করা হয়।
এছাড়া আয়কর অধ্যাদেশের ১৭৪ ধারা অনুসারে কর আইনজীবীদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর আইনজীবীদের সনদ প্রদান করে থাকে। এ বছর আরও ৭২৯৯ জনকে সনদ প্রদান করেছে। এ ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এমন আরও উৎসাহমূলক কাজ করার প্রস্তাব করা হয়। এ ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালে স্বচ্ছ বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষে প্রতিটি বেঞ্চে একজন সিনিয়র কর কমিশনার, একজন জুডিশিয়াল মেম্বার, একজন একাউন্টেন্ট মেম্বার নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়। নতুন কর ভবনের দ্বিতীয় তলার সম্পূর্ণ অংশ কর আইনজীবীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। একই অঞ্চলে আয়কর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ৩ বছরের অধিক না রাখার প্রস্তাব করা হয়।
আরকে//এএ
আরও পড়ুন