ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

কানপাকা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২০, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১২:২১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান

অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান

কানপাকা বলতে আমরা মধ্যকর্ণের দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণকে বুঝি। কানপাকা রোগের চিকিৎসায় অবহেলা করা উচিত নয়। এমনটাই মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ ‍মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক কান ও গলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান তরফদার। একুশে টিভি অনলাইনকে কানপাকা রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা নিয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন। সাক্ষাতকার নিয়েছেন তবিবুর রহমান

একুশে টিভি অনলাইন: কানাপাকার কারণ কি?

অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান: সাধারণত কানের ভিতরে পর্দা সাদা চকচকে থাকে। যখনই কোনো সংক্রমণ হয়, পর্দা লাল হয়ে যায়। তারপর অনেক সময় পর্দায় ছিদ্র পাওয়া যায়। সেই ছিদ্র দিয়ে ক্রমাগত পুঁজ পড়তে থাকে। কানের পর্দা ফুটো হয়ে গেলে বা কানের ভারসাম্যে সমস্যা হয়, প্রদাহ হয়, তখনই মানুষের শ্রবণশক্তি কমে যায়। এসময় অবহেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় এটা জন্মগত হয়ে থাকে।

মা শিশুকে অসতর্কভাবে দুধ পান করানোর কারণেও হতে পারে এ রোগ। বিশেষ করে ঘুমানো অবস্থায় ভুল পদ্ধতিতে দুধ পান করালে এমন রোগ হতে পারে। এসময় দুধের কিছু অংশ শিশুর নাক বা মুখের মধ্যে থেকে কানে যায়। এটা থেকে কানে ইনফেকশন তৈরি করে।

একুশে টিভি অনলাইন: কানের পর্দা ছিদ্র হওয়ার কারণ কি ?

অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান: দীর্ঘদিন কান পাকা থাকলে কানের পর্দায় ছিদ্র হয়ে যায়। তখন পুঁজ বাহিরে  আসতে শুরু করে। এছাড়া সাধারণত পুঁজ পড়ে না। তবে পর্দা ছি্দ্র হওয়া ছাড়া বহিঃকর্ণে অনেক সময় পুঁজ পড়তে পারে। কানপাকার কারণে মধ্য কানে বন্যা তৈরি হতে পারে। ফলে কানে পর্দা ছিদ্র হয়ে যেতে পারে। ফলে বাতাস কানের ভিতরে ঢুকতে শুরু করে। কিছু বাতাস বাহিরে বের হয়ে আসে। কানের শ্রবন শক্তি কমে আসে। কানের সঙ্গের ব্রেনের যোগাযোগ নিবিড়। কানে ইনফেকশন হলে ব্রেনেও ইনফেকশন হতে পারে। ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি কমে যায়। এভাবে বেশি দিন থাকলে কান ডেমেজ হতে পারে। এমননি কান থেকে ব্রেণও আক্রান্ত হতে পারে। বেশি সমস্যা হলে জীবননাশেরও ঝুঁকি থাকে।  

একুশে টিভি অনলাইন : কানপাকার চিকিৎসা কি?

অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান: যখন কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে যায়, তখন প্রচুর পরিমাণে পুঁজ পড়ে এবং বারবার হতে থাকে। যখনই কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে যায়, আমরা তাকে সিস্টেমিক অ্যান্টিবায়োটিক দিই। কানেও অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ দিই। নাকের ড্রপ দিই এবং অ্যান্টিহিসটামিন দিই। এরপর আমরা তাকে দুই সপ্তাহ পরে আসতে বলি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেইসঙ্গে কানের পর্দার ছিদ্রও বন্ধ হয়ে যায়। যদি পর্দার ছিদ্রটা বড় হয় এবং যদি বারবার পুঁজ পড়ে, তাহলে কিন্তু ওষুধে কাজ হয় না। সেই ক্ষেত্রে আমরা ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করি। ওষুধ চালিয়ে যাই। যদি ৬ মাসের মধ্যে তার পর্দাটা জোড়া না লাগে, কানে কম শোনে, তাহলে আমরা একটা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মাইক্রো সার্জারি করে পর্দা জোড়া লাগিয়ে দিই। কানের পেছনে চামড়ার নিচ থেকে একটু পর্দা নিয়ে, কানের মধ্যে মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে লাগিয়ে নিই। এই পর্দা ঠিক করা সম্ভব। শতকরা ৯০ ভাগের বেশি ক্ষেত্রেই কিন্তু পর্দা জোড়া লেগে যায়। শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক যেই হোক, কানে ভালো শুনতে পায় তখন। এই অস্ত্রোপচারকে টিমপ্যানোপ্লাস্টি বলে।

একুশে টিভি অনলাইন: কানে অস্ত্রোপচারে সফলতা কেমন?

অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান: শিশুদের কানের পর্দা অধিকাংশ জোড়া গেলে যায়। যদি কানের পর্দা জোড়া না লাগে তাহলে অস্ত্রোপচার করতে হবে। অন্ত্রোপচারে শতকরা ৯০ ভাগের বেশ সফলতা আসে।
একুশে টিভি অনলাইন : নাকা পাকা থেকে বাঁচতে করণীয় কি?

অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান: কান পাকা প্রতিরোধে আমাদের সর্তক হতে হবে প্রথমে। শিশুকে শোয়ায়ে দুধ খাওয়াও যাবে না। কোলে নিয়ে দুধ খাওয়াতে হবে। সম্ভব হলে শিশুকে ফিডার ছাড়া দুধ খাওয়াতে হবে। শর্দি লাগলে তাৎক্ষনিক চিকিৎসা করতে হবে। কানে আঘাত পেলেও কানের পর্দা ফাটতে পারে। কান খোচানো থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি কোনো কারণে কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ডাত্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। পুকুর, নদীতে গোসলের সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোনোভাবেই নাকের মধ্যে পানি না ঢুকে।

একুশে টিভি অনলাইন : রোগ খুব বেড়ে গেলে অস্ত্রোপচারে সমস্যা হওয়ার কোনো বিষয় আছে কি?

অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান: বেড়ে গেলে একটি সমস্যা হয় যে, এটা ধীরে ধীরে যখনই পুঁজ পড়তে থাকে, কানের ভেতর কতগুলো সূক্ষ্ম হাড় আছে, যেগুলো মানুষকে শুনতে সাহায্য করে। এই সূক্ষ্ম হাড়গুলো নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। যখন নষ্ট হয়ে যায়, তখন কিন্তু অস্ত্রোপচার করলেও খুব ভালো ফল পাওয়া যায় না। কিন্তু নষ্ট হওয়ার আগে যদি অস্ত্রোপচার করাতে পারি, প্রায় শতভাগ শ্রবণশক্তিই ফিরে পাওয়া সম্ভব।

আর আরেক ধরনের কান পাকা আছে, যেটাতে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ হয়, এটি আস্তে আস্তে হাড় ক্ষয় করতে থাকে। ক্ষয় করে এটি আস্তে আস্তে মস্তিষ্কে ছড়াতে পারে। একে তখন ম্যানিনজাইটিস, ব্রেন এপসেস, এনকেফাইলাইটিস ইত্যাদি মারাত্মক জীবনঘাতি জটিলতা হতে পারে।

একুশে টিভি অনলাইন: দীর্ঘদিন কান পাকা থাকলে জটিল কোন সমস্য হবে কি?

অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান: অবশ্যই সমস্যা হবে। সঠিক সময় এর চিকিৎসা না করতে পারলে কানের ইনফেকশন ব্রেনে চলে যেতে পারে। কানের জন্য মুখ বাকা হয়ে যেতে পারে। এমনিক শ্রবণ শক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যদি সময় সময় চিকিৎসা না করা হয় জীবন চলে যেতে পারে।

/ এআর /

   


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি