কারখানা খুলে দেয়ার পক্ষে গ্রহণযোগ্য কোন যুক্তি নেই
প্রকাশিত : ১৮:২১, ১৭ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ১৮:২৫, ১৭ এপ্রিল ২০২০
গার্মেন্টস মালিকদের নেতা রুবানা হক আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে কারখানা খুলে দিতে চায়। সেজন্য আবার তিনি বিআরটিসি চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছেন বাস দেবার জন্য। কয়েক দিন আগে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করে রাষ্ট্রের টাকা লুটে নেবার ধান্ধায় চাকরী খাবার হুমকি দিয়ে শত মেইল হাঁটিয়ে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকদের ঢাকা এনেছে তৈরি পোশাক মালিকেরা।
কোন কথা না বলে, বেতন না দিয়ে আবার তাদের ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে এই মালিকেরা। তারা সময়মত বেতন না দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন, বিক্ষোভ করতে বাধ্য করছেন। প্রতিটি ঘটনায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে, হচ্ছে। শ্রমিকেরা করোনা আক্রান্ত হবার চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। এখন আবার তারা কারখানা খুলে দিতে চায়।
লক্ষ লক্ষ শ্রমিক গাদাগাদি করে কারখানায় কাজ করলে করোনা পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়াবে তা ভাবতে গায়ের লোম খাঁড়া হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকেরা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তার দ্বায়িত্ব কে নেবে? আসলে দ্বায়িত্ব নেয়াটা বড় কথা নয়। জেনেশুনে লক্ষ লক্ষ মানুষকে করোনার মধ্যে ঠেলে দেওয়া যায় না। তৈরি পোশাকের বিদেশি ক্রেতারা একচেটিয়া ভাবে ওয়ার্ডার বাতিল করেছে; পেমেন্ট বন্ধ রেখেছে। আমরা সরবরাহ স্থগিত রাখলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। সারা দুনিয়ার মানুষ এখন জীবন বাঁচানোর যুদ্ধে লিপ্ত; দোকানপাট, শপিং মল – সব বন্ধ। জামাকাপড় কেনার টাইম নেই। অহেতুক যুক্তি দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে করোনার মধ্যে ঠেলে দেওয়া যায় না। গার্মেন্টস মালিকদের হীন স্বার্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টার প্রতিবাদ করতে সকলকে সোচ্চার হতে হবে।
বাংলাদেশে জিডিপি এখন ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের মত। গত বছর (২০১৮-১৯) তৈরি পোষাক রফতানী হয়েছে ৩৪ বিলিয়ন ডলার। এর থেকে তাদের আমদানী (৬০% বা ২০ বিলিয়ন ডলার) বাদ দিলে দেশের জিডিপিতে তাদের অবদান মাত্র ১৪ বিলিয়ন ডলার বা ৪%। এরা আবার বিভিন্ন রকমের প্রণোদনা পায়, কম হারে কর দেয়। গত বছর প্রবাসী শ্রমিকেরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছে ১৬.৪২ বিলিয়ন ডলার। গার্মেন্টস মালিকদের এত কি? ব্যবসায়ীদের কেনা মিডিয়া আর কিছু সুশীল গার্মেন্টসের পক্ষে ঢোল বাজাতে বাজাতে এদের মাথায় তুলেছে। তারা যা ইচ্ছা করে ফেলার হুমকি দিয়ে যায় একের পর এক। এই করোনা দুর্যোগের সময়েও তাদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা হয়েছে সবার আগে। সরকার শুধু তাদের শ্রমিকদের বেতন দেবে কেন? অন্যান্য শিল্প বা ব্যবসায়ের শ্রমিকদের বেতনের দায়িত্ব সরকার নিচ্ছে না কেন? দিন-আনি-দিন-খাই মানুষগুলোর জন্য বরাদ্দ করেছে মাত্র ৭৬০ কোটি টাকা যেখানে তাদের জন্য দরকার ২০ – ৩০ হাজার কোটি টাকা।
গার্মেন্টস মালিকেরা অনেক বাড়াবাড়ি করছে। তাদের আর বাড়তে দেয়ার সুযোগ নেই। কোন যুক্তিতেই খুলে দেয়া যাবে না তৈরি পোষাক কারখানা। শুধু বিশেষ ব্যবস্থায় কৃষি সংশ্লিষ্ট এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কারখানা খোলা রাখা যেতে পারে। বিশেষ ব্যবস্থাটা কি তা নির্ধারণ করার জন্য সরকার এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তৈরি করা জাতীয় কমিটি গঠন করা দরকার - এখনই। টাকা বানানোর সময় এটা নয়। মানুষ বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বিশ্ববাসী। মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের কিছুই ছিল না। শূন্য থেকে শুরু করতে হয়েছিল সব কিছু। আবার না হয় শূন্যেই ফিরে যাব।, আগে মানুষ তারপর টাকা-পয়সা, অর্থনীতি।
লেখকঃ চার্টার্ড একাউন্টেন্ট (এফসিএ) এবং লিড কনসালট্যান্ট ও চেয়ারম্যান, ঢাকা কনসাল্টিং লিমিটেড।
আরকে/
** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।