কাল শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি
প্রকাশিত : ১৭:০৯, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
কাল শুভ জন্মাষ্টমী, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণ অষ্টমীতে মথুরায় কংসের কারাগারে জন্ম নিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। সেই পূণ্য তিথির স্মরণে পালিত হয় জন্মাষ্টমী। যখনই পৃথিবীতে অধর্ম বেড়ে ভক্ত ও সাধারণের জীবন দুর্বিষহ হয় তখনই ধর্ম সংস্থাপনের জন্য শ্রীকৃষ্ণ অবতর রুপে আসেন পৃথিবীতে। দিনটিতে সনাতন ভক্তরা আয়োজন করে কৃষ্ণ পূজাসহ নানা অনুষ্ঠানের।
দ্বাপর যুগে বোন দেবকী আর ভগ্নিপতি বসুদেবকে নিয়ে ছুটছে রাজা কংসের রথ। এমন সময় দৈববাণী হলো বোন দেবকীর অষ্টম সন্তান হবে তার হত্যার কারণ। সেই থেকে মথুরায় অত্যাচারী কংসের কারাগারে সাত সন্তানের পর ভাদ্রমাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে রহিনী নক্ষেত্রের সেই ক্ষণে আবির্ভুত হলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
পাশবিক শক্তি যখন সত্য, সুন্দর ও পবিত্রতাকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়, তখন ধর্ম সংস্থাপনের জন্য ভক্তের প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে ঈশ্বর অবতার রূপ নিয়ে থাকেন। ষড়গুণ অর্থাৎ ঐশ্বর্য, বীর্য, তেজ, জ্ঞান, শ্রী ও বৈরাগ্যসম্পন্ন পূর্ণাবতাররূপে প্রকাশিত হন। পাপমোচন ও ধর্মসংস্থাপন এবং সাধুপরিত্রাণের জন্য সেই পূণ্য তিথির স্মরণে বিশ্বে পালিত হয় জন্মাষ্টমী।
অনন্ত সর্বশক্তিমান সত্তায় শাশ্বত সত্যরূপে বিরাজিত কৃষ্ণকে বিষ্ণুর সবচেয়ে অপরূপ অবতার বলে মনে করা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন জন্মাষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনায় জগতের সকল সুখ লাভ হয় মঙ্গল হয় পরিবার, দেশ ও সমাজের। তাইতো শুধু মথুরা নয়, শ্রীকৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র বৃন্দাবন এবং দ্বারকাতেও জন্মাষ্টমী পালিত হয় ধুমধাম করে।
এই দিনটিতে ব্রতপালন করলে মনের ময়লা দূর হয়, সৎগুণের জয় হয় যার ফলস্বরূপ সাধু উদ্ধার হয়। শ্রীমদ্ভগবত গীতায় বলা হয়েছে ‘যে যেভাবে আমায় আরাধনা করে, আমি সেইভাবে তাহাকে কৃপা করি। সে বিশ্বাসেই মহাকাল ও মহাজগৎ ব্যাপ্ত শ্রীকৃষ্ণের আরাধনায় মত্য পৃথিবী।
গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ‘যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত। অভ্যুাত্থানম ধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্। পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুস্কৃতাম্। ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।
ধর্মের গ্লানি এবং অধর্মের বৃদ্ধির তাৎপর্য হলো ভগবতপ্রেমী, ধর্মাত্মা, সদাচারী, নিরপরাধ মানুষের ওপর নাস্তিক, পাপী, দুরাচার, বলবান ব্যক্তিদের অত্যাচার বৃদ্ধি পাওয়া এবং মানুষের মধ্যে সদগুণ, সদাচার অত্যন্ত কমে গিয়ে দুর্গুণ-দুরাচার অত্যধিক বৃদ্ধি পায়।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজের জন্ম নিয়ে বলেছেন, ‘আমার জন্মমৃত্যু সাধারণ মানুষের মতো নয়। মানুষ জন্মগ্রহণ করে এবং মারা যায়, কিন্তু আমি জন্মরহিত হয়েও আবির্ভূত হই এবং অবিনশ্বর হয়েও অন্তর্ধান করে থাকি। আবির্ভূত হওয়া এবং অন্তর্হিত হওয়া দুটিই আমার অলৌকিক লীলা।
গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন, আমি জন্মহীন, অব্যয় আত্মা, ভূতগণের ঈশ্বর হয়েও নিজ প্রতিকে আশ্রয় করে আত্মমায়ায় জন্মগ্রহণ করি।
যিনি সর্বাপেক্ষা বৃহৎ, তিনিই ভগবান। বেদে তাঁর পরিচয় ব্রহ্ম। এত বড় যে তিনি আমাদের নাগালের বাইরে। আমাদের ষড় ইন্দ্রিয়, আমাদের ক্ষুদ্র মন, আমাদের সংকীর্ণ বুদ্ধি এসবের তিনি বহু ঊর্ধ্বে। তাঁকে পাওয়া আমাদের সাধ্যের বাইরে, তবে তাঁকে পাওয়ার জন্য ভক্তের নিরন্তর আকুলতা সৃষ্টিকর্তার মনেও দোলা না দিয়ে পারে না। এ সমস্যার সমাধান করলেন তিনি নিজেই নিত্য ও অনুগ্রহ শক্তির প্রেরণায়।
গীতার ৭/১০ অধ্যায়ে অর্জুনকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ‘হে পার্থ, আমাকে সর্বভূতের সনাতন বীজ বলিয়া জানিও। আমি বুদ্ধিমানদিগের বুদ্ধি এবং তেজস্বীগণের তেজস্বরূপ।
আর গীতার ৪/১১ অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ আরও বলেছেন, ‘যে যেভাবে আমায় আরাধনা করে, আমি সেইভাবে তাহাকে কৃপা করি।
এবছর জন্মাষ্টমী তিথির বিস্তার ২ দিন ধরে। পঞ্জিকা অনুসারে ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর পড়েছে জন্মাষ্টমী তিথি। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী তিথি শুরু হচ্ছে ৬ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টা ৩৭ মিনিটে। অষ্টমী তিথি শেষ হবে ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪.১৪ মিনিটে।
পুরাণ অনুসারে, রাত্রি বারোটায় রোহিণী নক্ষত্রে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। এই বিশ্বাস অনুসারে, ৬ সেপ্টেম্বর গৃহস্থরা জন্মাষ্টমী ব্রত পালন করতে পারেন। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুসারে তাঁরা জন্মাষ্টমী পালন করছে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর।
যেহেতু জন্মাষ্টমীর পুজো রাতে হয়, তাই ৬ সেপ্টেম্বর তারিখটিই অনেকে বেছে নিচ্ছেন কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পালনের জন্য। জন্মাষ্টমী পুজোর শুভ ক্ষণের কথা যদি বলেন, তবে তা মাঝরাত ১২টা ২ মিনিটে শুরু হবে। চলবে ১২টা ৪৮ মিনিট পর্যন্ত। জন্মষ্টমী উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে র্যালি বের হবে শেষ হবে স্বামীবাগ ইসকন মন্দিরে গিয়ে। এতে যোগ এ র্যালির উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও রাজধানীসহ সারাদেশেই দিনব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীরা র্যালিসহ কৃষ্ণের পূজা অর্চনায় বিভিন্ন আয়োজনে এদিনটি থাকবে উৎসব মুখর।
কেআই//