কিংবদন্তি প্রিসলির ৮৭তম জন্মদিন
প্রকাশিত : ১৬:০৮, ৮ জানুয়ারি ২০২২
এলভিস অ্যারন প্রিসলি শতাব্দীর সেরা পপ মিউজিক এবং রক এন রোলের জন্য সর্বাধিক উচ্চারিত এক নামে পরিণত করেছিলেন নিজেকে। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে রেডিও, টেলিভিশন এবং রূপালি পর্দায়ও ছিল তার সরব উপস্থিতি। টানা দুই দশক দুনিয়া কাঁপিয়েছিলেন প্রিসলি।
সত্তর দশকের একদম শেষভাগে এসে ১৯৭৭ সালে মৃত্যু হয় তার। জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি, আজ শুধুই কিংবদন্তি।
একাধারে নায়ক ও গায়ক এলভিস প্রিসলির জন্ম ১৯৩৫ সালের ৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপির টুপেলো শহরে।
তার জন্মের সময় বাবা ভার্নন প্রিসলি ভীষণ উচ্ছ্বসিত ছিলেন। কেননা তার স্ত্রী গ্লাডিস প্রিসলির গর্ভে ছিল যমজ সন্তান। এলভিসের জন্ম হলেও তার সহোদর মারা যায়। দরিদ্র ভার্নন কখনো রাজমিস্ত্রি, কখনো কৃষক, কখনোবা কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করে পরিবার চালাতেন। আর ছোট্ট এলভিস মায়ের সঙ্গে নিয়মিত গির্জায় যেতেন। সমবেত কণ্ঠে সেখানে গাওয়া প্রার্থনাসংগীত তার মন কেড়েছিল।
১১তম জন্মদিনে মা-বাবা এলভিসকে কিনে দেন একটি গিটার। হাতে খড়ি গির্জার পাদ্রি ফ্রাঙ্ক স্মিথের। তারপর নিজেই বাজাতে শেখেন প্রিসলি। ধীরে ধীরে বাজাতে শুরু করেন নিজের শহরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে। এভাবেই বেড়ে উঠতে শুরু করেন গত শতকের অন্যতম সেরা এই শিল্পী।
লেখাপড়া শেষে গায়ক হিসেবেই ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন প্রিসলি। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা তখনো বদলায়নি। টানাটানির সংসার, বাবা তখন ক্রাউন ইলেকট্রনিক নামের এক কোম্পানির ট্রাক চালাতেন। বাধ্য হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের ট্রাকচালক হিসেবে চাকরি শুরু করেন প্রিসলি। ফাঁকে ফাঁকে গানের চেষ্টা চলছিল।
একপর্যায়ে অডিশন দিতে গিয়েছিলেন তখনকার আমেরিকার বিখ্যাত গায়ক ও সুরকার এডি বন্ডের কাছে। গান শুনে তিনি এলভিসকে বলেছিলেন, ‘‘গায়ক নয়, গাড়িচালক হিসেবেই তুমি ভালো করবে।’’
কথাটা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল তাকে। তাই নিজ উদ্যোগে চার ডলার খরচ করে রেকর্ড করেছিলেন ‘দ্যাটস হোয়েন ইয়োর হার্টএকস বিগেইন’ ও ‘মাই হ্যাপিনেস’ শিরোনামে নিজের দুটি গান। কাজটি করেছিলেন সান রেকর্ডস থেকে। ওই কোম্পানির মালিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই কাজটি করেছিলেন তিনি।
কিছুদিন পর সংগীত প্রযোজক স্যাম ওয়ার্থহ্যামের ফোন পান সান রেকর্ডসের মালিক। তাকে জানান, সম্প্রতি তিনি একটা গান শুনেছেন। সেটা তার ভালোই লেগেছে। গায়ক ছেলেটাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। তখনই সানের মালিক প্রিসলিকে লোক মারফত স্টুডিওতে ডেকে পাঠান। প্রিসলিও ছুটে আসেন। গান করার সুযোগ পান প্রিসলি। শুরু হয় তার পেশাদার সংগীতজীবন।
রাতারাতি পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে এলভিস প্রিসলির। ব্ল্যাক, ম্যুর ও এলভিস মিলে গড়ে তোলেন ব্যান্ড। দলটি নিয়ে নানা জায়গায় গান করতে থাকেন তারা। এলভিসের কণ্ঠে ‘দ্যাটস অলরাইট মামা’ এবং ‘ব্লু মুন কেন্টাকি’ গান দুটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ‘হার্টব্রেক হোটেল’ গানটি প্রকাশের পর সেটি মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘এলভিস প্রিসলি’ বেরোলে সেটিও ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়। টানা ১০ সপ্তাহ বিলবোর্ড টপ চার্টের এক নম্বরে ছিল অ্যালবামটি।
পঞ্চাশের দশকে দারুণ সব গান উপহার দেন এলভিস প্রিসলি। ‘হাউন্ড ডগ (১৯৫৬)’, ‘ডোন্ট বি ক্রুয়েল (১৯৫৬)’, ‘ব্লু শুডে সুজ’ (১৯৫৬), ‘লাভ মি টেন্ডার’ (১৯৫৬), ‘অল শুক আপ’ (১৯৫৭) এবং ‘জেলহাউস রক’ (১৯৫৭) দিয়ে পুরো দশক নিজের করে নেন এই শিল্পী।
ষাটের দশকের শুরুতে ‘ইটস নাও অর নেভার’, ‘আর ইউ লোনসাম টুনাইট’ গানগুলোও সৃষ্টি করে উন্মাদনা। একপর্যায়ে টেলিভিশনে গাইতে শুরু করলেন প্রিসলি।
১৯৫৬ সালে প্রিসলি অভিনয় শুরু করেন। সে বছর তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘লাভ মি টেন্ডার’ মুক্তি পায়। সিনেমাটি হিট হলে প্রযোজকেরা তার পেছনে ধরনা দিতে থাকেন। তারপরের দুই দশকের সংগীত ও সিনেমার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে যায় প্রিসলির নাম। প্রায় ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সিনেমার টিকিট বিক্রি হয়েছিল কেবল প্রিসলি নামে।
একাধারে গায়ক, নায়ক, টিভি শো পারফর্মার এবং স্টেজ বা লাইভ কনসার্টে দর্শক মাতানো এলভিস প্রিসলি এক ইতিহাস। গানের জন্য গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডস তাকে দিয়েছে আজীবন সম্মাননা।
সূত্র: ইউএস টুডে
এমএম/এএইসএস