কিভাবে বুঝবেন আপনি হেপাটাইটিসে আক্রান্ত
প্রকাশিত : ১২:২৩, ২৮ জুলাই ২০২০
হেপাটাইটিস হলো ভাইরাসজনিত লিভারের রোগ। হেপাটাইটিস নিয়ে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হচ্ছে সারা বিশ্বে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে সংক্রমিত দশজনের মধ্যে নয়জনই জানেন না যে শরীরে এই ভাইরাস তারা বহন করছেন। অনেকে এ সম্পর্কে হয়তো জানতে পারেন লিভার সিরোসিস হওয়ার পর।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে পাঁচ ধরনের হেপাটাইটিস রয়েছে। হেপাটাইটিস এ এবং ই স্বল্পমেয়াদী লিভার রোগ। এটি বিশ্রাম নিলে এক পর্যায়ে সেরে ওঠে। তবে প্রাণঘাতী হচ্ছে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের সংক্রমণ। পৃথিবীতে দুই বিলিয়ন বা ২০ কোটি লোক এই ক্ষতিকর ভাইরাসের শিকার। এদের মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন লোক ক্রনিক সংক্রমিত। প্রতিবছর সারা বিশ্বে শুধু হেপাটাইটিস বি ও সি’র সংক্রমণে মারা যায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫ ভাগ মানুষ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি বাহক।
হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিস্তার না ঘটা পর্যন্ত এই রোগের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ স্পষ্ট হয় না। হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হলে জ্বর, দুর্বলতা, অবসাদ, বমিবমিভাব, পেটব্যথা, শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করা এবং হলুদ প্রস্রাবের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে রোগের বিস্তার ঘটলে পেটে পানি আসা, রক্ত পায়খানা ও রক্তবমি হতে পারে। এমনকি রোগী চেতনাও হারাতে পারেন।
যেভাবে ছড়ায়
হেপাটাইটিস এ এবং ই ভাইরাস খাদ্য ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। কিন্তু হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস ছড়ায় মূলত রক্ত এবং মানবদেহের তরল পদার্থের মাধ্যমে। এটা নীরবে একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। যেমন, সিরিঞ্জের মাধ্যমে ড্রাগস গ্রহণ, ট্যাটু করার মাধ্যমে, নাক-কান ফুটানো, অনিরাপদ যৌনসংসর্গ, অনিরাপদ রক্ত গ্রহণ, একাধিক ব্যক্তির ব্যবহৃত ব্লেড-কাঁচি পুনরায় ব্যবহার, অনিরাপদ দাঁতের চিকিৎসা এবং সন্তান জন্মদানের সময় আক্রান্ত মা থেকে শিশুর মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। হেপাটাইটিস বি এবং সি অনেকটা এইডসের মতো।
হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস রক্তে সংক্রমণের পর ২ থেকে ৬ মাসের মধ্যে সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় এ ভাইরাস ধরা পড়ে না। এ সময় কেউ যদি রক্ত আদান-প্রদান করেন তাহলে অগোচরেই এই ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন।
চিকিৎসা
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তের নানা ধরনের অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ শনাক্ত করা যায়। রক্তের HBsAg পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। এছাড়াও উপসর্গ দেখে লিভারের Ultra Sound, HBsAg, SGOT, ALT, BILLIRUBIN , AST CT Scan ,Andoscopy ইত্যাদির মাধ্যমেও রোগের জটিলতা নির্ণয় করা হয়। এ এবং ই ভাইরাস সংক্রমণজনিত হেপাটাইটিস বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আপনা–আপনি ভালো হয়ে যায়, চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। বি ভাইরাস নির্মূল করা না গেলেও চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। সি ভাইরাসও চিকিৎসার মাধ্যমে নির্মূল করা যায়। বর্তমানে হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাস নির্মূলের জন্য আধুনিক অ্যান্টি–ভাইরাল থেরাপি রয়েছে। যা দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসকের পরামর্শে এবং প্রয়োজনীয় জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে হবে।
এছাড়া হেপাটাইটিস ‘বি’ এর চিকিৎসায় এখন খাবার ট্যাবলেট বেরিয়েছে যা খুব বেশি ব্যয় বহুল নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভাইরাসের কার্যকর চিকিৎসা হলো ইন্টারফেরন, পেগালিটেড ইন্টারফেরন আলফা ২-বি বা পেগাসিস। সাথে মুখে খাবার ওষধ ল্যামিভুডিন, এডিফোভির আর সর্বশেষ সংযোজন টেলবিভুডিন ইত্যাদি।
এ ছাড়া হেপাটাইটিস এ ও বি–এর প্রতিষেধক টিকা আছে, যার মাধ্যমে এসব ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
হেপাটাইটিস ভাইরাস এড়াতে যা করবেন
লিভার বিশেষজ্ঞরা হেপাটাইটিস ভাইরাস থেকে দূরে থাকার জন্য যেসব পরামর্শ দিয়ে থাকেন তাহলো- কাঁচা সালাদ, ফল-মূল বেশি খাবেন। তেল-চর্বি যুক্ত খাবার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। গরু বা খাসির মাংস যেগুলো লাল মাংস হিসেবে পরিচিত এগুলো খাবেন না। লবণ বা সোডিয়াম সল্ট একেবারেই খাবেন না। ভিটামিন বি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যথা বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই যুক্ত খাবার বেশি খাবেন।
এছাড়া প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিট হাঁটবেন। ব্যায়ামের অভ্যাস করবেন। দিনে একবেলার বেশি ভাত খাবেন না, দুই বেলা রুটি খাবেন। ধূমপান, মদ্যপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অযথা কোন মাল্টিভিটামিন খাবেন না। প্রচুর বিশ্রাম নিবেন এবং শৃঙ্খলিত জীবন যাপনের চেষ্টা করবেন। তাহলেই মারাত্মক রোগ হেপাটাইটিস ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
এএইচ/এসএ/