কুরআনের আলোকে বিশ্বাসীদের বৈশিষ্ট্য
প্রকাশিত : ১৩:৪৮, ৪ আগস্ট ২০২০
মু’মিন একটি আরবি শব্দ, যা মূলত আরবি ঈমান শব্দটি থেকে এসেছে। এর শাব্দিক অর্থ ‘বিশ্বাসী’ এবং এর দ্বারা একজন কঠোরভাবে অনুগত মুসলিমকে বুঝায়, যে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে ইসলামকে নিজের অভ্যন্তরের এবং বাহিরের সকল কর্মকান্ডে ধারণ করে এবং আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার কাছে নিজেকে পূর্ণরুপে সমর্পণ করে।
মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করেনি। আর নিজদের সম্পদ ও নিজদের জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে। এরাই সত্যনিষ্ঠ। (হুজরা-১৫)
যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ রাববুল আলামীনের একত্ববাদে পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে বিশ্বাস স্থাপন করে তার প্রতি বাণী মেনে চলে ও সে অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করে তাকেই মুমিন বলে। অন্যভাবে বলা যায় মহান আল্লাহ তায়ালা, তার প্রেরিত নবী, রাসূল, ফিরিশতা, কিতাব, পরকাল ও তকদীরের প্রতি পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে বিশ্বাস স্থাপন করে আর ঈমান গ্রহণের পর যে ব্যক্তি ঈমান থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি তিনিই মুমিন।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারীমে মুমিনের চারিত্রিক সনদ-
‘ত্বা-সীন; এগুলো আল-কুরআনের ও সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত। মু’মিনদের জন্যে হিদায়াত ও সুসংবাদ। তারা সলাত কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে এবং তারা পরকালের প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে।’ (আন-নামল: ২৭/১-৩)
‘অবশ্যই মু’মিনগণ সফল হয়েছে। যারা তাদের সলাতে বিনয়ী-নম্র-ভীত। আর যারা অনর্থক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে। আর যারা যাকাত দানের ক্ষেত্রে সক্রিয়। আর যারা তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী। কেবলমাত্র তাদের স্ত্রীদের ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে (দাসীদের) ক্ষেত্রে তারা নিন্দনীয় নয়। অতঃপর যারা এছাড়া অন্যকে কামনা করবে তারাই সীমালংঘনকারী। আর যারা তাদের আমানতসমূহের ও ওয়াদার সংরক্ষণকারী। আর যারা তাদের সলাতসমূহের হিফাজত করে। তারাই হল উত্তরাধিকারী। যারা ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী লাভ করবে, তারা তাতে চিরস্থায়ী হবে।’ (মু’মিনুন : ২৩/১-১১)
‘আসলে মু’মিন তারাই, যখন আল্লাহর স্মরণ করা তখন তাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে আর যখন তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় আর তারা তাদের রবের উপর ভরসা করে। যারা সলাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। তারাই হল প্রকৃত মু'মিন, তাদের রবের নিকট তাদের জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদাসমূহ আর ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।’ (আনফাল: ৮/২-৪)
‘আর মু’মিন পুরুষ ও মু'মিন নারী তারা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় ও অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করে, আর তারা সলাত প্রতিষ্ঠা করে আর যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তাদের উপর আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় ‘ (তাওবা : ৯/৭১)
‘তারা তওবাকারী, ইবাদতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, সিয়াম পালনকারী, রুকুকারী, সাজদা আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা হিফাযতকারী আর মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও।’ (আত-তাওবাহ: ৯/১১২)
‘নিশ্চয়ই মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী আর মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারী আর অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী আর সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী আর ধৈর্য্যশীল পুরুষ ও ধৈর্য্যশীল নারী আর বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী আর দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী আর সিয়াম পালনকারী পুরুষ ও সিয়াম পালনকারী নারী আর যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী নারী আর আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী নারী, তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার।’ (আহযাব : ৩৩/৩৫)
‘মুলত মু’মিনদের উক্তি হল, যখন তাদের মাঝে ফায়সালা করে দেবার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলে, ‘আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম’ আর তারাই সফলকাম।’ (আন-নুর: ২৪/৫১)
এসএ/