কুষ্ঠরোগীদের নির্বাসনে পাঠানো হতো যে দ্বীপে
প্রকাশিত : ১২:১৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২২:৪৬, ৬ অক্টোবর ২০১৭
কুষ্ঠরোগীর বসতি হিসেবে পরিচিত গ্রিসের স্পিনালঙ্গা দ্বীপ। এর আগরে দিনগুলোর কথা একসময় অজানা ছিল। সময় বদলেছে। কয়েক দশক ধরে পরিত্যক্ত থাকা এই রহস্যময় দ্বীপটি সম্পর্কে এখন জানা যাচ্ছে অনেক কিছুই।
রহস্যময় এই স্পিনালঙ্গা উপনিবেশটি ক্রীটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্লাকার (বর্তমানে গ্রীস) কাছে অবস্থিত। ভেনিসীয় ও অটোমান শাসনামলে প্লাকা সামরিক বাহিনীর কেল্লা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। মধ্যযুগীয় রাজধানী প্লাকা স্পিনালঙ্গা দ্বীপের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। ১৯০৪ সালে ক্রীটবাসী স্পিনালঙ্গা থেকে তুর্কিদের বিতারিত করার পর দ্বীপটি কুষ্ঠরোগীর দ্বীপে পরিণত হয়। সেসময় কুষ্ঠরোগীকে ‘মরার আগেই মৃত’ বলা হত।
১৯১৩ সালে ক্রীট গ্রিসের অংশে পরিণত হওয়ার পর কুষ্ঠরোগীদের স্পিনালঙ্গাতে পাঠানো হয়। তখন স্পিনালঙ্গায় প্রায় ৪০০ বাসিন্দা নিয়ে গড়ে উঠে একটি উপনিবেশ। দরিদ্র বাসন্দিারা পুরোনো কেল্লায় বসবাস করতো তখন। একবার কেউ কুষ্ঠরোগী শনাক্ত হলে তার সব সম্পদ জব্দ করা হত, তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হত এবং তাকে স্পিনালঙ্গাতে নির্বাসন দেয়া হত। সেখানে তারা কখনো কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা পেত না। অন্যান্য রোগে কেউ আক্রান্ত হলেই কেবল চিকিৎসা করতেন এই দ্বীপে নিযুক্ত একমাত্র ডাক্তার।
এমনকি ১৯৪০-এর দশকের গোড়ার দিকে কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা বের হলেও ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত চিকিৎসা পায়নি স্পিনালঙ্গাবাসী। পরে এক ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ এই দ্বীপ পরিদর্শন করে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করার জন্য দ্বীপের ডাক্তার ও রাষ্ট্রকে অমান্য করে একটি লজ্জাজনক রিপোর্ট তৈরি করেন। এরপর থেকেই কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা সেবা পেতে শুরু করে স্পিনালঙ্গার বাসিন্দারা।
১৯৫৭ সালে উপনিবেশটি বন্ধ হয়ে যায়। গ্রিক সরকার উপনিবেশের সব চিহ্ন ধ্বংস করার চেষ্টা করে। উদ্বিগ্ন সরকার এই উপনিবেশের অস্তিত্ব মুছে ফেলতে সব ফাইল পুড়ে ফেলে।
জীবিত কুষ্ঠরোগীদের নিষেধ করা হয় তাদের অভিজ্ঞতার কথা অন্য কারো কাছে বলতে। ১৯৫৭ সালের পর স্পিনালঙ্গা পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে মনে হয়েছে যে, এখানে স্পিনালঙ্গা কখনই ছিল না।
সূত্র : বিবিসি।
//এআর