কুড়িগ্রামে খাদ্য ও পানির সংকটে ৮ লাখ মানুষ
প্রকাশিত : ২১:৩৭, ২০ জুলাই ২০১৯
কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তীত হলেও মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক গুণ। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাব। নেই কোন শৌচকর্ম সারার সু-ব্যবস্থা। এতে চরম ভোগান্তিতে পরেছে সাড়ে ৮ লাখ বানভাসি মানুষ। এদিকে বন্যার কারণে চিলমারী উপজেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
চিলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী (বীর বিক্রম) বলেন, গত ১০০ বছরে এত পানি চিলমারীর মানুষ দেখে নাই। এ বছর ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সর্বত্র পানি আর পানি। উপজেলার ৩০ হাজার ৯৩৯টি পরিবারের মধ্যে ৩০ হাজারের বেশি পরিবার পুরোপুরি পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। গত ২৪ ঘন্টায় পানির তোড়ে অষ্টমীর চর ইউনিয়নের ৭৮টি পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শনিবার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে খামার বাঁশপাতারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পানির তোড়ে রমনা রেলস্টেশনের উত্তরে রেললাইনের নীচ থেকে ১৫০ মিটার এলাকাজুড়ে মাটি সড়ে যাওয়ায় রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষ স্বাভাবিক প্রাকৃতিক কাজে সাড়া দিতে পারছে না। একইভাবে সকল টিউবওয়েলও এখন পানির নিচে থাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কারও ঘরে খাবার নেই। শুকনা খাবারের তীব্র সংকট রয়েছে। এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় ১১০ মেট্রিক টন চাল ও ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।
চিলমারী হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আব্দুস সালাম জানান, বন্যা স্থায়ী হওয়ায় পানিবাহিত রোগ-ব্যাধির সংখ্যা বাড়ছে। শনিবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৪ শিশু ও একজন বয়স্ক ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে গত কয়েকদিনে চিলমারী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় ১৩ শিশু, ৭ নারী ও ৭ জন পুরুষ। এ সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান তিনি।
চিলমারী উপজেলা সদরের থানাহাট ইউনিয়নের খড়খড়িয়া গ্রামের আবুহার আলী (৫০) বলেন, স্ত্রী ছেলে মেয়েসহ ৬ জনের পরিবার নিয়ে গত ৭ দিন ধরে পানিবন্দি জীবন। আজ পর্যন্ত সরকারি কিংবা বে-সরকারিভাবে কোন খাদ্য সহায়তা মেলেনি।
ভট্টপাড়ার জাবের হোসেন (৩৫) শ্রমজীবী মানুষ। কাজ নেই ঘরে খাবার নেই। তার উপর সাতদিন ধরে পানিবন্দি জীবন। ৪ জনের সংসার নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন। অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। তাঁর ভাগ্যেও ত্রাণ জোটেনি। একই অবস্থা চিলমারীর অধিকাংশ দুর্গত এলাকায়।
জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, বন্যার ফলে ৫৭টি ইউনিয়নের ৮৯৪টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ২ লাখ পরিবারের ৮ লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়েছেন। এতে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর ফসলী জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ৫’শ কিলোমিটার রাস্তা, ৪০ কিলোমিটার ও ৪১টি ব্রিজ ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬৪ হাজার মানুষ ১৮৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। ৯ হাজার ৭৩৪টি নলকূপ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
অন্যদিকে শনিবার সকাল থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার ও নুন খাওয়া পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে ৮৩ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি ব্রীজ পয়েন্টে ৪০ সে.মি. কমে গিয়ে বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলার বন্যা দুর্গতদের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। ৫টি ওয়াটার ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও স্যালাইন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে বলে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. এস এম আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন। বন্যা দুর্গতদের সহযোগিতায় প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ত্রাণ বিতরণ করছেন।
জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন,‘সকল বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে ৮’শ মেট্রিকটন জিআর চাল, ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৬ হাজার ৪২৮ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
এনএস/কেআই
আরও পড়ুন