ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

কৃতজ্ঞতা বিপদ থেকে উদ্ধারের প্রাকৃতিক মাধ্যম

প্রকাশিত : ১৪:৫২, ১৫ মে ২০১৯

যখনই একজন মানুষ তার কৃতকর্মের কারণে বিপদে পতিত হয় তখনই অস্থির হয়ে হা-হুতাশ করতে থাকে ও স্রষ্টার কাছে বার বার ফরিয়াদ জানাতে থাকে। যখনই মানুষ অস্থির হয়ে যায় তখন ব্রেনের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় ও বিপদ থেকে উদ্ধারের পথ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। এমন কোন সফল মানুষ পৃথিবীতে পাওয়া যাবে না যাদের উপর কোন বিপদ আসেনি। বিপদের সময় একটি সুযোগ হাতছাড়া হয় সঙ্গে সঙ্গে আরও একটি সুযোগের দরজা নীরবে খুলে যায়। অস্থির চিত্ততার কারণে সৌভাগ্যের নীরব টোকাকে আমরা শুনতে ব্যর্থ হই। সৌভাগ্যের দরজাকে দেখতে ব্যর্থ হই। তাই বিপদে স্থিরচিত্ত থাকতে হবে।

বিপদের সময় যখনই আল্লাহ কী দেননি তার দিকে না তাকিয়ে কি কি যোগ্যতা দিয়েছেন ও অতীতে কি কি অনুগ্রহ করেছেন তার দিকে দৃষ্টি দেবেন তখনই মন স্থির হয়ে যাবে, কৃতজ্ঞতার ইতিবাচক তরঙ্গ সৃষ্টি হবে ও ব্রেনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সুপার কম্পিউটার ব্রেন তখন বিপদ থেকে উদ্ধারের নিত্যনতুন পথ আবিষ্কার করে ফেলবে। ব্যর্থতা বা হতাশার ছাই থেকে জেগে উঠবে সম্ভাবনায় পল্লবিত নতুন জীবন।

আল্লাহ সূরা দোহার মাধ্যমে তার রাসূলকে (সা.) বিপদ থেকে উদ্ধারের প্রাকৃতিক পন্থা বলে দিয়েছেন। ‘শপথ পূর্বাহ্নের। শপথ রাতের যখন তা নিঝুম হয়। ... তিনি কি আপনাকে অপ্রাপ্ত অবস্থায় পাননি এবং আপনাকে আশ্রয় দেননি? তিনি আপনাকে পান পথহারা অতঃপর পথনির্দেশ করেন। তিনি আপনাকে পান নিঃস্ব অবস্থায়, পরে অভাবমুক্ত করেন। সুতরাং আপনি এতিমের প্রতি রূঢ় হবেন না এবং সাহায্যপ্রার্থীকে তৎর্সনা করবেন না। আর সবসময় আপনার প্রতি আপনার প্রতিপালকের অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করতে থাকুন।’ (সূরা দোহা ৯৩/১, ৯৩/৬-১১)

সাধারণ মানুষ বিপদে পড়ে হতাশ হয়ে যায় ও করুণাময় প্রভুর প্রতি অভিযোগের তীর ছুড়তে থাকে। আল্লাহতায়ালা তার রাসূল (সা.)কে বিপদের সময় আমজনতার অনুসৃত নীতির বিপরীত কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করতে বলেছেন।

প্রথমত একেবারে শিশু থেকে পরিণত বয়স পর্যন্ত স্রষ্টা যে যে অনুগ্রহ করেছেন তা স্মরণ করে কৃতজ্ঞ চিত্ত হতে বলেছেন এবং স্রষ্টার অনুগ্রহের কথা প্রচার করতে বলেছেন। অর্থাৎ বিপদের সময় অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও স্রষ্টার অনুগ্রহের কথা প্রচার করার মাধ্যমে ইতিবাচক অটো সাজেশনে ব্রেনকে উজ্জীবিত করাই বিপদ থেকে উদ্ধার ও স্রষ্টার রহমত আকর্ষণের কার্যকর পন্থা। এখানে উল্লেখ্য যে, শুধু কৃতজ্ঞতার পুরস্কারস্বরূপ লুতের পরিবারকে আল্লাহতায়ালা প্রস্তর বর্ষণের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন।

‘আমি তাদের উপর প্রস্তর বর্ষণ করেছিলাম লুত পরিবার ব্যতীত, তাদের রাত্রি শেষে উদ্ধার করেছিলাম। আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহস্বরূপ ও কৃতজ্ঞগণকে এভাবেই আমি পুরস্কৃত করে থাকি।’ (সূরা কামার ৫৪/৩৪-৩৫)

কৃতজ্ঞতা হলো বিপদ থেকে উদ্ধারের প্রাকৃতিক পন্থা। যখন আল্লাহর রাসূল (সা.) কাফেরদের প্রচারণা ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলেন তখনও আল্লাহতায়ালা এই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য নামাজের মধ্যে গভীর আত্মনিমগ্ন অবস্থায় ও নামাজের বাইরে কর্মব্যস্ততার মধ্যেও স্রষ্টা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন।

‘ওরা যা বলে তাতে আপনি ধৈর্য ধারণ করুন এবং আপন প্রতিপালন কর্তার প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করুন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে। পবিত্রতা ঘোষণা করুন রাত্রির একাংশ ও নামাজের পরেও।’ (সূরা ক্বাফ ৫০/৩৯)

তাই আমরা যখন কোন বিপদ, মুসিবতে পড়ি তখনও নামাজে আত্মনিমগ্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে স্রষ্টার সঙ্গে একাত্ম হওয়া এবং তিনি কি কি অনুগ্রহ জীবনের বাঁকে বাঁকে ছড়িয়ে দিয়েছেন তা স্মরণ করে অন্তর থেকে তার প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণায় নিয়োজিত থাকা উচিত, যাতে তার অনুগ্রহ আমাদের উপর বর্ষিত হয়। স্রষ্টার অনুগ্রহ বর্ষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপদ সহজাতভাবে দূরে চলে যাবে ও প্রাচুর্যের পথ খুলে যাবে।

(শোকরিয়া, প্রশান্তি ও প্রাচুর্যের রাজপথ)

এএইচ/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি