ঢাকা, রবিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

শহরে সবজির দাম ৪ গুণ

কৃষকের মুনাফা যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পেটে

প্রকাশিত : ১৬:২৬, ২২ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১৫:৩৮, ৮ আগস্ট ২০১৭

প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সবজি এসেছে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। শনিবার ভোরে তোলা ছবি

প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সবজি এসেছে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে। শনিবার ভোরে তোলা ছবি

Ekushey Television Ltd.

সবজির ভরা মৌসুম না হলেও রাজধানীর কাঁচাবাজারে সবজির কমতি নেই। কিন্তু সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও সে অনুযায়ী দাম কমেনি। কোনো কোনোটির দাম বেড়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় ঢুকতেই কয়েক হাত বদল হয়ে সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে কয়েক গুণ।

ঢাকার বাজারে বেগুন, কচু, শিম, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, গাজরসহ প্রতিটি সবজির দাম এখন উৎপাদক যে দাম পান তার চেয়ে চার গুন বেশি। চাষী যে দামে টাটকা সবজি বিক্রি করছেন রাজধানী ও বিভিন্ন জেলা শহরের ভোক্তাদেরকে সেই সবজিই চারগুন দাম বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, বৃষ্টিতে ভিজে যে সোনার ফসল ফলাচ্ছেন তার ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের কষ্টের ঘামমাখা টাকা যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পেটে।   

ভোক্তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্টরা বারবার বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও বাস্তবে ভিন্ন চিত্র। কৃষকও যেমন ন্যায্য দামটি পাচ্ছেন না, তেমনি ভোক্তাদেরও পকেট কাটা যাচ্ছে। মাঝ থেকে প্রচুর মুনাফা তুলে নিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগী এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী।

শনিবার ভোররাতে মেহেরপুর থেকে কারওয়ান বাজারে ছয়টি পিকআপে করে বিভিন্ন সবজি নিয়ে আসেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। তাঁদের একজনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকার মাঠ থেকে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কচু, বেগুন, পেঁপে, লাউ, করলা, পটল, মিষ্টি কুমড়া কিনে ঢাকায় এনেছি।

কেমন দামে কিনেছেন জানতে চাইলে শহিদুল নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতি কেজি কচুমুখি কৃষকের কাছ থেকে আমরা কিনেছি ১০টাকায়। আর বেগুন প্রতিকেজি ২৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫ টাকা, পটল ১৫ টাকা, পেঁপে ১০ টাকা, ফুল কপি এবং বাঁধা কপি প্রতি কেজি ২০ টাকা (৩ টায় এক কেজি), সে হিসাবে কপি প্রতি পিচ ৭ টাকা, বড় লাউ ২০, করলা বড় ৪০ টাকা কেজি দরে সংগ্রহ করেছি। তিনি জানান, গাড়িভাড়াসহ আমাদের কাওরানবাজারে এ সবজি নিয়ে আসতে প্রতিকেজিতে আরও দেড় থেকে দুই টাকা করে খরচ পড়ে যায়।

অথচ এসব সবজিই মাত্র দুই হাত ঘুরে ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে চারগুন বেশি দাম দিয়ে। মাঝের দুই হাতেই বেড়ে যাচ্ছে সবজির দাম। এই দুই হাত হচ্ছে- পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ী। ট্রাক থেকে কারওয়ান বাজারের ছোট ছোট মোকামে যাওয়া মাত্রই ১০ বা ১৫ টাকার কচুমুখির দাম হয়ে যাচ্ছে ৩৫ টাকা। অর্থাৎ এক হাত পার হতেই বেড়ে দাড়াল কেজিতে ২০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা সেই কচুমুখি পাইকারদের কাছ থেকে ৩৫ টাকায় সবজি কিনে খুচরায় বিক্রি করছেন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। এখানে কেজিতে বাড়ল ২০ টাকা। এভাবেই প্রতিনিয়ত ভোক্তাদের বেশি বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে বিভিন্ন সবজি। শনিবার কারওরানবাজার থেকে রাজধানীর শান্তিনগর ও সেগুন বাগিচা কাঁচা বাজারে গিয়ে দামের এ তফাত দেখা গেছে।

পাইকারি-খুচরা বাজারে এই ব্যবধানের কথা স্বীকার করলেও এ নিয়ে তেমন কিছু বলতে চাননি শান্তিনগরের খুচরা বিক্রেতা শহিদ। তিনি বলেন, আমাদের পাইকারি বাজার থেকে সবজি আনতে যাতায়াত খরচ পড়ে যায় অনেক বেশি। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।

আয়েশা নামের এক ক্রেতা জানান, প্রশাসনের মনিটরিং না থাকায় পাইকার খুচরা বাজারের এ বিস্তর পার্থক্য। এখানে ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্রেতা সাধারণ। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা থাকলে নির্দিষ্ট দামেই পণ্য পাওয়া যেত।

কারওয়ান বাজার থেকে শান্তিনগর ও সেগুন বাগিচা কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারি বাজারের ৭ টাকার ফুলকপি মাত্র দুই বা তিন কিলোমিটার ব্যবধানে অন্য বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়, ১০ টাকার পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, ১৫ টাকার পটল বিক্রি হয় ৪০ টাকায়, ৮০ টাকার টমেটো বিক্রি হয় ১৪০ টাকা, ২৮ টাকার চিচিঙা বিক্রি হয় ৫০ টাকায়, ১০টাকা হালি কলা বিক্রি হয় ২৫ টাকায়, ৮০ টাকার ছিম বিক্রি হয় ১৪০ টাকায়। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রাজধানীর বাজারগুলোতে বিভিন্ন পণ্যের মূল্যতালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হলেও তা মানছেন না কেউই।

তবে এসব বাজারে আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। গরু, মহিষ ও খাসির মাংস নির্ধারিত দামেই বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। বেশির ভাগ মাছের দাম আগের জায়গায় থাকলেও, বড় ইলিশের দাম হালিপ্রতি বেড়ে গেছে ৮০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারি পারচালক (তদন্ত) মাসুম আরেফিন বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পাইকারি-খুচরা বাজারে দ্রব্যমূল্যের ব্যাপক ফারাক বন্ধের কোনো আইন বা শাস্তির বিধান নাই। তবে আমাদের এখানে (রাজধানী) সিটি করপোরেশন যে মূল্য তালিকা দিয়েছে সে বিষয়ে আমরা বাজার তদারকি করছি। তিনি বলেন, পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় এখানে মধ্যস্বত্বভুগিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে আমরা আরও সতর্ক হব যাতে কেউ অধিক মুনাফা নিয়ে ভোক্তা না ঠকাতে পারে।

 //এআর

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি