কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদীচী’র গণসঙ্গীত উৎসব
প্রকাশিত : ২২:১১, ৩০ মার্চ ২০১৮
ঐক্যের সুরে সাম্যের গান বাঁধার প্রত্যয় নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত তিন দিনব্যাপী “সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা-২০১৮”।
২৮ মার্চ শুরু হওয়া এ উৎসব চলে ৩০ মার্চ পর্যন্ত। গত ২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার ছিল উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এদিন বিকাল ৫টায় শুরু হয় ‘উদীচীর সুবর্ণজয়ন্তী ও গণসঙ্গীত’ বিষয়ক আলোচনা পর্ব। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ-এর সভাপতিত্বে এতে অংশ নেন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহফুজা খানম, লোকশিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতী, লেখক গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ কাহালী, বিশিষ্ট গীতিকার ফেরদৌস হোসেন ভূঁইয়া এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন। এ পর্ব সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম।
এরপর এবারের জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে সনদ ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। এবারের প্রতিযোগিতায়‘ক’ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে প্রজ্ঞা তালুকদার, দ্বিতীয় হয়েছে সাফায়েত আলম চৌধুরী আর তৃতীয় হয়েছে নবনীতা ঘোষ শ্রেয়া। ‘খ’ বিভাগে প্রথম হয়েছে সাবরিনা জাহান শোভা, দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে জান্নাতুল ফেরদৌস এবং তৃতীয় হয়েছে ওয়াজিহা তাসনিম।‘গ’ বিভাগে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে অরুণ চন্দ্র বর্মণ, দ্বিতীয় হয়েছে কমল ঘোষ এবং তৃতীয় স্থান পেয়েছে চন্দ্রিমা ভৌমিক রাত্রী। আর দলীয় অর্থাৎ ‘ঘ’ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নারায়ণগঞ্জের যোদ্ধা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন, দ্বিতীয় হয়েছে উদীচী বগুড়া জেলা সংসদ আর তৃতীয় স্থান পেয়েছে উদীচী যশোর জেলা সংসদের শিল্পীরা।
আলোচনার পর ছিল জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের একক ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রজ্ঞা তালুকদার, সাবরিনা জাহান শোভা, জুটন চন্দ্র মজুমদার, মায়েশা সুলতানা ঊর্বি, দিদারুল করিম। এছাড়া দলীয় সঙ্গীত নিয়ে মঞ্চে আসে মৌলভীবাজার উদীচী পরিচালিত ধ্রবতারা ললিতকলা একাডেমী ও চারণ। ছিল ভারত থেকে আগত গণসঙ্গীত শিল্পী অসিম গিরি এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী ও এবারের উৎসবের আমন্ত্রিত অতিথি বিমল দে’র পরিবেশনা। এ পর্বটি সঞ্চালনায় ছিলেন মিজান সুমন ও সৈয়দা অনন্যা রহমান।
এর আগে, গত ২৮ মার্চ বুধবার বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উৎসব উদ্বোধন করেন উদীচীর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও সাবেক সভাপতি, গণসঙ্গীত শিল্পী গোলাম মোহাম্মদ ইদু। উদ্বোধনী পর্বে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন গোলাম মোহাম্মদ ইদু আর সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ। এরপর পরিবেশিত হয় গণসঙ্গীতের কিংবদন্তি পুরুষ হেমাঙ্গ বিশ্বাসের অমর সৃষ্টি “শঙ্খচিল” গানের নৃত্যরুপ।
এ ভূখণ্ডের প্রথিতযশা গণসঙ্গীতশিল্পীদের জীবন ও কর্ম নিয়ে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদ প্রকাশিত সংকলন ‘গণসঙ্গীতের গণনায়কেরা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। গণসঙ্গীতের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে অধিকার বোধ জাগ্রত করা এবং তাদেরকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ায় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন এমন ১৭ জন গুণী মানুষের জীবন ও কর্ম নিয়ে লেখা প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে এ সংকলনে। এছাড়া, গণসঙ্গীতে অবদান রাখার জন্য সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসবে সম্মাননা জানানো হয় সুজেয় শ্যাম, ফেরদৌস হোসেন ভূঁইয়া, আবু বকর সিদ্দিক, ফকির আলমগীর, রথীন্দ্রনাথ রায়, বুলবুল মহলানবীশ, তিমির নন্দী, মতলুব আলী, শাহীন সরদার, সেলিম রেজা, আক্কাস হোসেন, কফিল আহমেদ, শাহীন সামাদ, সমর বড়ুয়া, শাহজামাল তোতা, অনিমেষ আইচ, কাবেরী সেনগুপ্তা, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, রুহুল আমিন প্রমাণিক, তৌফিক আলম টিপু, আলী ইমাম দুলাল, স্বপন রহমান, অংশুমান দত্ত অঞ্জন, মঞ্জুশ্রী দাশগুপ্তা, ডালিয়া নওশীন, আখতার হুসেন, আশরাফ হোসেন, দুলাল পত্রনবীশ, জহির আহমেদ, আবদুস সালাম বাউল, তাজিম সুলতানা, সফিকুল ইসলাম গোলাপ, ইফ্ফাত আরা নার্গিস, গোলাম মোহাম্মদ ইদু, আবদুস সোবহান, সেন্টু রায়, বিশ্বনাথ দাশমুন্সী, মাহমুদ সেলিম, খায়রুল আহসান খান, জগলুল হায়দার খান, পারভেজ শামসুদ্দিন, শাকিলা বানু শাম্মী, ইয়াসমিন সুলতানা তিথি, কাজল বিশ্বাস, হাবিবুল আলম, কামাল লোহানী, অসিত বরণ ঘোষ, অধ্যাপক মাহফুজা খানম, সাইদুর রহমান বয়াতী, অনিরুদ্ধ কাহালীকে।
এসি