কেন রাগ করবেন?
প্রকাশিত : ১৬:১০, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
আমরা যখন রেগে যাই তখন পূর্বাপর চিন্তা না করেই আমরা বলে ফেলি বা করে ফেলি। এর মাশুল গুণতে হয় পরে অনুশোচনা করে বা সুযোগ হাতছাড়া করে। আবার রাগ চেপে রাখাও ক্ষতিকর।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ জমিয়ে রাখছে তাদের বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, বিষণ্নতা হলো চেপে রাখা ক্ষোভ। রাগ বা ক্ষোভ, ঘৃণা আসলে জীবনের আনন্দকেই কেড়ে নেয়।
গবেষকদের মতে রাগের সরাসরি প্রভাবগুলোর মধ্যে রয়েছে :
পেশীর টেনশন বাড়ার ফলে মাথা, ঘাড় ও পিঠে ব্যথা; হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্ট; পাকস্থলীতে এসিডের ক্ষরণ বৃদ্ধি এবং বদহজম, এসিডিটি ও আলসার; রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং স্ট্রোক, এনিগমা এবং এমনকি হার্ট অ্যাটাক।
আমরা যখন রেগে যাই আমাদের দেহে কিছু জৈব রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। যেমন, হার্টরেট, ব্লাড প্রেশার এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়, ক্যাটাকোলামাইন নিউরোট্রান্সমিটার এবং অ্যাড্রিনালিন ও নর- অ্যাড্রিনালিন হরমোন নিঃসরিত হয় যা উত্তেজনা সৃষ্টি করে। দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায় ফলে ঘাম হয় এ তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক করার জন্যে। পেশী সংকুচিত হয় এবং হাত-পায়ে রক্ত চলাচল বেড়ে যায় যে-কোনো দৈহিক তৎপরতাকে পরিচালনা করার জন্যে। অর্থাৎ ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স সক্রিয় হয়ে ওঠে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দীর্ঘসময় ধরে যদি এই রেসপন্স চলতে থাকে তাহলে অনেক ধরনের ক্রনিক রোগ হতে পারে। যেমন, ইনসমনিয়া, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, আলসার, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, মৃগীরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন, ব্যাকপেইন, ফুসফুসের অসুখ এমনকি ক্যান্সার। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রেগে যাওয়ার প্রবণতা বেশি এমন ব্যক্তিরা তাদের বয়স ৫৫ বছর হওয়ার আগেই অন্যদের তুলনায় হার্ট এটাকে বেশি আক্রান্ত হন।
সাফল্যের অন্তরায় হিসেবে রাগকে মহামানবরা সবসময়ই শনাক্ত করেছেন। ১৩০০ বছর আগেই ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা) রাগান্বিত অবস্থায় চারটি কাজ থেকে বিরত থাকতে উপদেশ দিয়েছেন। ১. সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ২. শপথ গ্রহণ, ৩. শাস্তি প্রদান, ৪. আদেশ প্রদান।
হার্ভার্ড ডিসিশন সায়েন্স ল্যাবরেটরির জেনিফার লারনার গবেষণায় দেখেছেন মানুষ যখন রেগে যায় তখন সিদ্ধান্ত নেবার আগে সে খুব বেশি ভাবতে চায় না, বোকাদের মতো চিন্তা করে এবং উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্যে যৌক্তিক কারণ নয় ব্যক্তিকে দোষারোপ করে। রেগে গেলে মনোযোগ কমে যায় এবং শুধু রাগের বিষয় ছাড়া আর কোনো কিছু মাথায় থাকে না।
এসএ/