ঢাকা, বুধবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

কোভিডের দ্বিতীয় ধাক্কা কি আসন্ন?

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল

প্রকাশিত : ১৫:২৩, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

Ekushey Television Ltd.

করোনাভাইরাস নিয়ে আমাদের ইদানিংকার যত আলোচনা সেখানে সবকিছু ছাপিয়ে এখন কোভিডের দ্বিতীয় ওয়েভ বা সংক্রমণের প্রসঙ্গটি সামনে চলে আসছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি সতর্ক করেছে আগামী শীতে বাড়তে পারে করোনাভাইরাসের প্রকোপ সারা বিশ্বে এবং সাথে বাংলাদেশেও। এরই মাঝে তার কিছু ইঙ্গিতও আমরা দেখতে পাচ্ছি। ইউরোপের যে দেশগুলো কোভিডের ধাক্কাটা মোটামুটি সামলে উঠেছিল সেসব জায়গায় ক্রমাগতই বাড়ছে কোভিডের নতুন রোগী শনাক্তের হার। নতুন করে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে ইউকে, ফ্রান্স, স্পেন আর জার্মানিতে। এরই প্রেক্ষাপটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও মন্ত্রীসভার সাম্প্রতিক একটি বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে নির্দেশ দিয়েছেন করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার জন্য।

প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে শীতে কি তাহলে করোনাভাইরাসের আরেকটি ওয়েভ আসন্ন? বাড়তে যাচ্ছে কি শীতে কোভিডের তীব্রতা? প্রথম ওয়েভই যখন বাংলাদেশে এখনো ফ্ল্যাট হয়নি, সেখানে দ্বিতীয় ওয়েভ আসবে কিভাবে এ নিয়েও গরম হচ্ছে চায়ের কাপ। একটা সময় ধারণা করা হয়েছিল গ্রীষ্মে কোভিড বিদায় নেবে। কার্যতঃ তা হয়নি। কাজেই শীতে কোভিডের আরেকটি ওয়েভ আসছে শুনলেও তা বিশ্বাস করতে নারাজ অনেকেই।

বাস্তবতাটা হচ্ছে কোভিডের দ্বিতীয় আরেকটি ওয়েভ সম্ভবত এই শীতে বাংলাদেশে আসতে যাচ্ছে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় নতুন কোভিড রোগী শনাক্তের হারটি কোরবানী ঈদের আগেও এদেশে ছিল ১০ শতাংশের আশেপাশে। ঈদের আগে-পরে ব্যাপক সামাজিক মেলামেশার কারণে এটি এক লাফে ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ঈদের পরে আমরা স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলায় চরম উদাসীনতা দেখিয়েছি। যে কারণে অনেকদিন ধরেই এদেশে নতুন রোগী শনাক্তের হারটা ২০ শতাংশের উপরে ছিল।

সাম্প্রতিক সময় এটি কিছুটা কমে এলেও তাতে স্বস্তির কোনো সুযোগ নাই। কোভিডের কার্ভটা এদেশে ফ্ল্যাট হতে যাচ্ছে এমনটি প্রত্যাশা করাটা হবে বোকামি। আসন্ন শীতকালে যদি বিয়ে-শাদি এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা অন্যান্য বছরের মতই চলতে থাকে, আমরা যতই শারীরিক দূরত্ব মেনে সামাজিকতা করার কথা বলি না কেন, তাতে বিপর্যয় সামলানোর সুযোগ থাকবে সামান্যই। সাথে যোগ হবে শীতে, বিশেষ করে আমাদের নিম্ন-আয়ের মানুষগুলোর বাধ্য হয়ে ছোট্ট ঘরে গাদাগাদি করে থাকার প্রবণতা।

শঙ্কার জায়গা আছে আরেকটিও। বিশ্বের দেশে-দেশে সীমিত পর্যায়ে হলেও আবারো যাতায়ত আর যোগাযোগ শুরু হয়েছে। ক্রমেই খুলে যাচ্ছে বিশ্ব। চীনের উহান থেকে রাতারাতি কোভিড ছড়িয়ে পড়েছিল বিমান চলাচলের মাধ্যমেই। এদেশেও কোভিডের আগমন ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশীদের হাত ধরে। এখন যখন দেশে-দেশে আবার বাড়ছে কোভিড আর সাথে খুলছে বিশ্ব চরাচর তখন নতুন করে আবারো কোভিডের আমদানি-রপ্তানি যে খুবই সম্ভব মাথায় রাখতে হবে সেই বাস্তবতাটাও।

এই প্রেক্ষাপটে আগামী শীতে কোভিড রোগীর সংখ্যা যে এদেশে উর্ধ্বগামী হবে এমনটা মনে করাই যুক্তিযুক্ত। তার সাথে যোগ হবে শীতের শ্বাসকষ্ট আর শ্বাসনালীর যত রোগ। কাজেই সরকার যেমন তার জায়গা থেকে প্রস্তুতিগুলো নিতে থাকবে, পাশপাশি মাস্ক পরা, হাত ধোয়া আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া আমাদের জন্য এবারের শীতটা যে খুব কঠিন হতে পারে তা বলাই বাহুল্য।

লেখক : চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

এমবি//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি