ঢাকা, মঙ্গলবার   ২২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

কোরবানির পশু কেমন হওয়া উচিত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৪৭, ২ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ১১:০৬, ২ আগস্ট ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

পা শবিকতা দমন এবং ত্যাগের শিক্ষা, মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য প্রিয়বস্তু ও প্রিয়প্রাণ উত্সর্গের মহোত্সব ‘ কোরবানি’। উজুহিয়্যা, জাবাহা, হাদিঈ, ইহরাকিদ-দাম ইত্যাদি কোরবানির সমার্থক। আর শরি’আতের পরিভাষায় ‘মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পশু জবাই করাকে কোরবানি বলে’ (শামি ৫ম খণ্ড)। প্রিয়নবী (স) বলেছেন, ‘সুন্নাতা আবিকুম্ ইব্রাহিম’ অর্থাত্ ‘এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের (আ) আদর্শ’ (মেশকাত)।

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের জন্য কোরবানির পশুটিকে হতে হবে প্রিয় ও পছন্দনীয়। হেদায়া ৪র্থ খণ্ডে আছে ছয়টি বিশেষ পশু দ্বারা কোরবানি আদায় করতে হবে এবং এগুলোর মধ্যে ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এক বছর, গরু, মহিষ দু’বছর এবং উট পাঁচ বছরের কম হলে  কোরবানি শুদ্ধ হবে না। পশুগুলোও হতে হবে যথাসম্ভব ত্রুটিমুক্ত। হযরত মুসার (আ) যুগের একটি হত্যা রহস্য উন্মোচনে গরু কোরবানির বর্ণনার কারণে আল  কোরআনের সর্ববৃহত্ সুরার নামকরণ করা হয়েছে ‘বাকারা’ বা গরু। এ সুরার ৬৭-৭১ নম্বর আয়াতে ঐ গরুর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। 

যা কোরবানির পশু নির্বাচনের আদর্শ মানদণ্ড হিসেবে বিবেচ্য। যেমন- (ক) মধ্যম বয়সী হওয়া (খ) হলুদ উজ্জ্বল গাঢ় বর্ণের হওয়া (গ) আকর্ষণীয় ও দর্শকনন্দিত হওয়া (ঘ) পরিশ্রম ক্লান্ত না হওয়া (ঙ) সুস্থ ও নিখুঁত হওয়া। কোরবানির পশু মহান আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও অনুপম সৃষ্টি নৈপুণ্যের নিদর্শন। পরিবেশ ও প্রতিবেশগত কারণে কোন কোন বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত এবং বিপুল উত্সাহে প্রতি বছর অসংখ্য উট, গরু ইত্যাদি কোরবানি হলেও এগুলো টিকে আছে আপন অস্তিত্বে। এজন্যই পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে “ কোরবানির উট-গরুকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন স্বরূপ বানিয়েছি” (হজ্ব: ৩৬)।

কোরবানির পশু হতে হবে দোষমুক্ত। কেননা প্রিয়নবীর (স) নির্দেশনা হলো- ‘ কোরবানির পশুতে চারটি দোষ সহনীয় নয়— (ক)স্পষ্টত অন্ধ (খ) মারাত্মক অসুস্থ (গ) দুর্বল-হাড্ডিসার (ঘ) চার পায়ে চলতে পারে না এমন অক্ষম বা খোঁড়া’(তিরমিযি)। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘ইবনু ওমর (রা) এমন পশু কোরবানি করতে নিষেধ করেছেন যার দাঁত নেই এবং যা সৃষ্টিগতভাবেই পঙ্গু”(মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ)। অন্যদিকে পশুগুলোর জন্মের পবিত্রতা নিশ্চিত হওয়াও জরুরি। এজন্যই কৃত্রিম প্রজননের প্রাণী, বন্যপ্রাণী, চারণভূমিতে অবাধ বিচরণশীল প্রাণী কোরবানির ক্ষেত্রে পরিহার করা উচিত। এমনকি ফতোয়ায়ে শামি গ্রন্থে আছে, পবিত্র খাবার  খায়িয়ে পশুগুলোর শরীর থেকে অপবিত্রতা দূর করবার জন্য এবং অপবিত্র খাবার থেকে মুক্ত রাখবার জন্য উট ৪০ দিন, গরু মহিষ ২০ দিন, ছাগল ভেড়া ১০ দিন বেঁধে রাখা বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।

ফিকহগ্রন্থে ত্রুটিমুক্ত পশুপ্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যাতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়—১. দু’চোখ বা এক চোখ এক তৃতীয়াংশের বেশি অন্ধ পশু  কোরবানি চলবে না । ২. তিন পায়ে চলে  বা চার পায়ে ভর দিতে পারে না এমন পশু  কোরবানি করা বৈধ নয়। ৩.পশুর কান বা লেজ এক তৃতীয়াংশের বেশি কাটা থাকলে কোরবানি হবে না। ৪. মজ্জা শুকিয়ে গেছে এমন হাড্ডিসার পশুতে কোরবানি হবে না। ৫. শিং ওঠেইনি অথবা শিং অগ্রভাগ বা সামান্য ভাঙ্গা হলে চলবে তবে শিং যদি মূল থেকে ভেঙ্গে থাকে তাতেও কোরবানি শুদ্ধ হবে না। 

৬. যে পশুর চামড়া, পশম নষ্ট বা চর্মরোগের কারণে গোশত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন পশু  কোরবানি করা যাবে না। তবে গর্ভবতী পশু কোরবানি করা যায়, তা কোরবানি করা বৈধ। কিন্তু বাচ্চা প্রসবের সময় অত্যাসন্ন এমন পশু কোরবানি করা মাকরূহ। কেননা, ইবাদত ত্রুটিমুক্ত হওয়া জরুরি। আর কোরবানি একটি উচ্চমর্যাদার ইবাদত। হাদিসের বিবরণে রয়েছে, কোরবানির পশু হাশরের ময়দানে শিং, কান, চোখ, লেজ ইত্যাদিসহ হাজির করা  হবে।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ,

কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি