ক্যান্সার সনাক্তে নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করুন
প্রকাশিত : ১৮:৩৫, ১ মার্চ ২০১৯
ক্যান্সারের কথা শুনলেই মানুষ আতঙ্কে উঠে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে সারাবিশ্বে নারীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ স্তন ক্যান্সার। তাই স্তন ক্যান্সার নিয়ে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
নিজে স্তন সম্পর্কে ও শরীর সম্পর্কে সচেতন থাকলে শুরুতেই স্তন কান্সার নির্ণয় করা সম্ভব। স্তনে ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তাই সব নারীর উচিৎ নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করা।
স্বাভাবিক অবস্থায় স্তন নরম ও দলাহীন হয়। তবে মাসিকের পূর্বের দিনগুলোতে স্তন কিছুটা সংবেদনশীল অনুভূত হয় অর্থাৎ টনটনে ভাব বা শক্ত ভাব অথবা ফোলা ফোলা ভাব হয়। স্তনের মাঝে বিভিন্ন পরিবর্তনের হাজারো কারণ থাকতে পারে। বেশীরভাগ পরিবর্তন ক্ষতিকর নয়। তবে সবগুলির পরিবর্তন পরীক্ষা করা উচিৎ। কারণ, এর যে কোন একটাই হতে পারে স্তন ক্যান্সারের প্রথম লক্ষণ। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে আমরা নিজেরাই নিজেদের স্তন পরীক্ষা করে দেখতে পারি।
স্তন পরীক্ষা করার নিয়ম-
♦ গোসলের সময়: গোসলের সময় নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করুন। ভেজা চামড়ার উপর দিয়ে ধীরে ধীরে হাত চালান। বাম দিকের স্তন পরীক্ষা করার জন্য ডান হাত ও ডান দিকের স্তন পরীক্ষা করার জন্য বাম হাত ব্যবহার করুন। দেখুন, কোন Lump বা দলা অথবা শক্ত গিট্টুর মত কিছু শনাক্ত হয় কিনা।
♦আয়নার সামনে: আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের স্তনকে লক্ষ্য করুন। প্রথমে হাত দু`পাশে থাকবে। তারপর হাত দুটো সোজা করে মাথার উপরে তুলুন। এবার সতর্কভাবে লক্ষ্য করুন স্তনের আকারের কোন পরিবর্তন চোখে পড়ে কিনা। দেখুন স্তনবৃন্ত বা অন্য কোন অংশ ফুলে গেছে কিনা কিংবা কোন অংশে লালচে ভাব বা টোল পড়া আছে কিনা। এবার কোমরে হাত দিন এবং কোমরে চাপ দিন। এখন ডান এবং বাম স্তনকে ভাল করে দেখুন। যদিও খুব কম নারীরই স্তন দুটো দেখতে একই রকম হয়। তবু প্রতিনিয়ত পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি বুঝে যাবেন আপনার জন্য কোনটা স্বাভাবিক।
♦মাটিতে শুয়ে: মাটিতে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। আপনার ডান স্তন পরীক্ষা করার জন্য ডান দিকে ঘাড়ের নিচে একটা বালিশ অথবা ভাঁজ করা কাপড় দিন। এরপর ডান হাত মাথার পেছনে রাখুন। এবার বাম হাতের আঙ্গুলগুলো চ্যাপ্টা করে ডান স্তনের উপর রাখুন। ঘড়ির কাঁটার গতি অনুসরণ করে আপনার হাত ঘুরাতে শুরু করুন। সবচেয়ে উপরের জায়গাটাকে ১২টা মনে করে চক্রাকারে হাত ১টার দিকে নিয়ে আসুন। মনে রাখতে হতে পারে স্তনের নিচের অংশ কিছুটা শক্ত মনে হতে পারে। এটা স্বাভাবিক। সম্পূর্ণ ঘুরে আসার পরে স্তন বৃন্তের দিকে এগিয়ে যাবেন। এক ইঞ্চি অগ্রসর হওয়ার পর একইভাবে পুণরায় স্তনকে পরীক্ষা করুন।
সবশেষে স্তনবৃন্তকে বৃদ্ধাঙ্গুল ও তর্জনী আঙ্গুলের মধ্যে ধরে চাপ দিতে হবে। লক্ষ্য করুন কোন রকমের নিঃসরণ হচ্ছে কিনা। সেটা রক্ত জাতীয় বা স্বচ্ছ যেমনই হোক, তাহলে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
লজ্জা বা ভয় নয়; সুস্থভাবে বাঁচতে হলে প্রথম থেকেই সচেতনভাবে স্তনক্যান্সার প্রতিরোধ করতে হবে। তাই নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক: ডা. আফরিন সুলতানা, ব্রেস্ট ও কলোরেকৃটাল সার্জারি বিশেষজ্ঞ, সিটি হাসপাতাল লি.।
আ আ//এসএইচ/