ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ সেই কুবি কর্মকর্তা নিরুদ্দেশ
প্রকাশিত : ১৪:০৯, ১০ অক্টোবর ২০২৪ | আপডেট: ১৪:১৯, ১০ অক্টোবর ২০২৪
আওয়ামী ফ্যাসিজমের বিদায় এবং সরকারের পটপরিবর্তনের পর বিগত আমলে নিয়োগ পাওয়া অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীই নিরুদ্দেশ হয়েছেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও একইভাবে নিরুদ্দেশ আছেন রেজিস্ট্রার দপ্তরের সেকশন অফিসার রেজাউল ইসলাম মাজেদ।
এর আগে তিনি কুবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে সবশেষ ১৬ জুলাই তিনি অফিস করেছিলেন। এরপর থেকে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়নি মাজেদকে।
এ অবস্থায় পলায়নের কারণে দোষি সাব্যস্ত হয়ে চাকরি হারানোর শঙ্কা রয়েছে মাজেদের।
গত বছরের অক্টোবরে বিভিন্ন অনিয়ম করে তাকে চাকরি দেয় তৎকালীন আওয়ামীপন্থী প্রশাসন। সরকারি চাকরি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-তে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী পলায়নের দায়ে দোষী হলে তাকে তিরস্কার থেকে শুরু করে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান, চাকরি হইতে অপসারণ কিংবা বরখাস্ত করা যেতে পারে।
একই বিধিমালার ২ (চ)তে বলা হয়েছে, বিনা অনুমতিতে ৬০ দিন বা তদূর্ধ্ব সময় কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকলে ওই কর্মচারী পলায়ন বলে গণ্য হবেন। সরকারের পটপরিবর্তনের আগে মাজেদ সবশেষ ১৬ জুলাই অফিস করেছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়সূত্রে জানা গেছে। এরপর থেকে দুই মাসেরও অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি তিনি। এমনকি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগও নেই তার।
রেজাউল ইসলাম মাজেদ এখন কোথায় আছেন, সে সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সবশেষ গত ১৩ আগস্ট তাকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেখা গেছে বলে জানা গেছে।
তবে পুলিশি তৎপরতায় সে সময় তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে পারেননি বলে অনেকে মনে করছেন।
মাজেদের চাকরির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, গত দুই মাসে তার পক্ষ থেকে আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। ছুটিও নেয়া হয়নি। তাই নিয়মানুযায়ী আমরা শীঘ্রই ফাইল ফরোয়ার্ড করবো। আইনে যে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা আছে, সে অনুযায়ীই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত বছরের অক্টোবরে মাজেদ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০২৩ সালের ১৫ মে সেকশন অফিসারের বিপরীতে রেজাউল ইসলাম মাজেদসহ আরও কয়েকজনের মৌখিক পরীক্ষা নেয় নিয়োগ বোর্ড। সভায় একক কোনো প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় তিনজন প্রার্থীকে নিয়ে প্যানেল তৈরি করে বিষয়টি সিন্ডিকেটে নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করা হয়।
তবে ৪ অক্টোবর নিয়োগ বোর্ডের সভা বিবরণীতে স্বাক্ষরের জন্য বোর্ড সদস্য উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবিরকে পাঠালে তিনি শুধু একজনের সুপারিশ দেখতে পেয়ে সেখানে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর বিষয়টি সিন্ডিকেটে নেওয়া হলে সেখানেও তিনি আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) জানান।
এতকিছুর পরও তাকেই নিয়োগ দেন তৎকালীন আওয়ামীপন্থী উপাচার্য আবদুল মঈন।
সার্বিক বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, নিয়মানুযায়ী সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে যখন জানানো হবে, একজন কর্মকর্তা আইনের বাইরে আছেন কিংবা আইন অনুযায়ী কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন, তখন আমাদের পক্ষ থেকে তার বেতনভাতা সয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এএইচ
আরও পড়ুন