ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪

বিবিসির বিশ্লেষণ

খালেদা বা তারেক প্রশ্ন ‘নির্বাচনী ঐক্যের শর্ত নয়’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:২৮, ২ অক্টোবর ২০১৮

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি বা তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহার- এগুলো বিএনপি এবং ড. কামাল হোসেনের ‘যুক্তফ্রন্টের’ মধ্যেকার কোনও ‘নির্বাচনী ঐক্যের শর্ত’ হিসেবে গণ্য হবে না বলে জানাচ্ছেন ওই জোটের নেতারা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেন এবং বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন এই নতুন রাজনৈতিক জোটটি এখন বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্য নিয়ে কথা বলছে। গত রোববার বিএনপি ঢাকায় একটি জনসমাবেশ থেকে যে সাতটি দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরেছে- তার শুরুর দিকেই এই দুটো দাবি রয়েছে।

কিন্তু ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোটের একজন নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বিবিসিকে বলেছেন, ‘যে দাবিগুলো বেশি করে তারা বলেছেন, সেগুলো তাদের দলের শ্লোগান।’

মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘তারপরও খালেদা জিয়ার মুক্তি আমরা চাই এই অর্থে যে, আমরা মনে করি মামলা যাই হোক...আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিলে তিনি মুক্তি পাওয়ার যোগ্য বলেই মনে হয়।’

তিনি বলেন, ‘সব আইনজীবীই এ কথা বলেছেন। এই অর্থে আমরা বলি, তার মুক্তি ঠেকিয়ে মতো কাজ করা সরকারের উচিত নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর তারেক রহমানের মামলার ব্যাপারটা, সেটাও আলোচনা করে আইনগত লড়াই বা গণতান্ত্রিক বিধানের মধ্যে থেকে আমরা আমাদের বক্তব্য রাখবো’।

নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত যে দাবিগুলো বিএনপি দিয়েছে, তাতে সংসদ ভেঙে দেওয়া, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে। এরসঙ্গে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং ইভিএম পদ্ধতি চালু না করার দাবিও রয়েছে।

এই পাঁচটি দাবির সঙ্গে একমত বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্য দলগুলো। তারাও ইতিমধ্যে একই ধরণের দাবি তুলে ধরেছে। জোট নেতারা মনে করছেন, নিরপেক্ষ সরকার গঠনসহ নির্বাচন সম্পর্কিত দাবিগুলোর সঙ্গে তারা একমত এবং সেগুলো যৌথ দাবি হতে পারে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলছিলেন, ‘সাত দফা দাবি যেটা দিয়েছেন, এর মধ্যে প্রধান যে দাবিগুলো গণতন্ত্র এবং অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত- সেগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধ নেই। ওগুলো আমরা একইভাবেই বলেছি।’

তবে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলা প্রত্যাহারের দাবিগুলোকে ‘বিএনপির দলীয়’ বলে অন্য দলগুলো বলছে।

মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম এবং আ স ম আব্দুর রবের জেএসডি মিলে যে ‘যুক্ত ফ্রন্ট’ গঠন করা হয়েছে, ঢাকায় সপ্তাহখানেক আগে তাদের সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র নেতারা যোগ দিয়েছিলেন।

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির তাদের দাবিকে ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্য দলগুলো দাবি বা শর্ত হিসেবে না দিলেও তারা ওই দাবিকে সমর্থন করে।

জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মির্জা তাসলিমা সুলতানা বিবিসিকে বলছিলেন, প্রতিটি দলই স্ব স্ব অবস্থান থেকে আলাদা আলাদা দাবি দিতে পারে। ঐক্যের লক্ষ্য ঠিক থাকলে সেটা বাধা হয় না বলে তিনি মনে করেন।

মির্জা তাসলিমা সুলতানা বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনের যে পরিবেশ পরিস্থিতি, নির্বাচনে যাওয়া প্রসঙ্গে তাদের কথাবার্তা এখনও হচ্ছে। একেকটা দল তাদের জায়গা থেকে কথা বলবে, সেটাতো থাকারই কথা। এবং তাদের হয়তো অন্য বিষয়গুলো নিয়ে একটা ঐকমত্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না’।

যুক্তফ্রন্টের মাঝেই এখনও কিছু ইস্যুতে অন্য তিনটি দলের সঙ্গে বিকল্প ধারার দ্বিমত আছে। বিকল্প ধারার অন্যতম নেতা মাহী বি চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচন সম্পর্কিত তাদের দাবির সঙ্গে বিএনপির পাঁচটি দাবি মিলে গেছে। কিন্তু এখনও যৌথভাবে একক দাবি নির্ধারণের পর্যায়ে তারা আসতে পারেননি।

তিনি বলছিলেন, ‘ঐক্যের ভিত্তি হতে হবে, এক নম্বর- মুক্তিযুদ্ধের শক্তির মধ্যে ঐক্য হতে হবে। ভিত্তিটাই যদি আমরা রচনা করতে না পারি, তাহলে দাবিগুলো নিয়ে বা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন নিয়ে এখন পর্যন্ত সময় এসেছে বলে মনে করি না। এখনও অপরিপক্ক। এর আগে নিশ্চিত হতে হবে যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বাইরে তাদের মধ্যে একটা ঐক্য হতে হবে। এটা না হওয়া পর্যন্ত যৌথ ঘোষণায় আমরা দাবিগুলোকে আনতে পারছি না।’ তবে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, দাবিগুলো নিয়ে তারা আরও আলোচনা করবেন।

সূত্র: বিবিসি

একে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি