ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৯ জানুয়ারি ২০২৫

রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণ

গত বছর ২৯১৯টি ভুল তথ্যে সরগরম ছিল বাংলাদেশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৫৭, ৮ জানুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ১৫:৫৯, ৮ জানুয়ারি ২০২৫

শুরুটা হয়েছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে। এরপর সময়ের সাথে নানা ইস্যু যেমন ছিল, ছিল নিয়মিত অপতথ্যের প্রবাহও। এরপর এলো ঐতিহাসিক দুই মাস জুলাই-আগস্ট। কোটা আন্দোলনের পথ ধরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলের সমাপ্তির পর রাষ্ট্র ক্ষমতার দায়িত্ব নেয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশ নিয়ে একের পর এক সাম্প্রদায়িক প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো হয়। এমন নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে ২০২৪ বিদায় নিল। বাংলাদেশের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার গেল বছর এমন সব ঘটনায় ভুল আর অপতথ্যের প্রবাহ নিয়ে নিরলস কাজ করেছে, শনাক্ত করেছে রেকর্ড ২৯১৯টি ভুল তথ্য।

এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে শনাক্ত হয়েছিল ১৯১৫টি ভুল তথ্য। এক বছরের ব্যবধানে রিউমর স্ক্যানার প্রায় ৫২ শতাংশ হারে ভুল তথ্য বৃদ্ধি পেতে দেখেছে। 

ভুয়া তথ্যে সয়লাব ফেসবুক, এক্সে সাম্প্রদায়িক অপতথ্য

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত প্লাটফর্ম ফেসবুক। মেটার অধীনে থাকা এই মাধ্যমটিতে ২০২৪ সালে ২৩৩০টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে৷ এই হিসেবে প্রতিদিন কমপক্ষে গড়ে ছয়টির বেশি ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে এই প্লাটফর্মে। 

কোন মাধ্যমে কত ভুল তথ্যের প্রচার?

২০২৪ সালে রিউমর স্ক্যানারে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এই সময়ে পুরোপুরি মিথ্যা বা ভুয়া ঘটনা সম্বলিত ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে ২০২৮টি। এছাড়া, বিভ্রান্তিকর রেটিং দেওয়া হয়েছে ৫৩৩টি। বিকৃত রেটিং পেয়েছে ৩০৮টি, অধিকাংশই মিথ্যা এমন রেটিং পেয়েছে তিনটি। এছাড়া, সার্কাজম বা কৌতুক হিসেবে হাস্যরসাত্মক ঘটনাকে বাস্তব দাবির প্রেক্ষিতে তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক করা হয়েছে ৩১টি। যাচাইয়ের পর অর্ধেক সত্যতা পাওয়া গেছে এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দুইটি। 

রাষ্ট্র ক্ষমতার পটপরিবর্তনের বছরে রাজনৈতিক অপতথ্যই বেশি

২০২৪ সালের ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দেশের ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৯১টি ভুল তথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। এছাড়া জুলাই-আগস্ট এই দুই মাসে রাজনৈতিক অপতথ্য শনাক্ত হয়েছে ১২৮টি। এর আগের মাসগুলোয় এই ক্ষেত্রটিতে অপতথ্যের প্রবাহ কিছুটা কম থাকলেও আগস্ট পরবর্তী মাসগুলোয় অপতথ্যের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে এক বছরে রাজনীতি বিষয়ে ৭২৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে, যা অন্য সকল ক্যাটাগরি থেকে বেশি৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে আগস্টে (৩৮৬)। ক্যাটাগরি হিসেবে একক মাসে ভুল তথ্য বেশি শনাক্ত হয়েছে জাতীয় ক্ষেত্রে (আগস্টে ১৫০টি)। 

৩য় প্রান্তিকে বেশি ভুল তথ্য

গেল বছর ৩য় প্রান্তিকে ভুল তথ্যের প্রচার ছিল সবচেয়ে বেশি। এ সময়ে শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যের সংখ্যা ৮৪৭টি। ৩য় প্রান্তিকে বাংলাদেশ উত্তাল একটি সময় অতিবাহিত করেছে, যার শুরু ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ দিয়ে। এরপর আগস্টে আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে হাসিনা সরকারের পতন দেখেছে বাংলাদেশ। এর পরের কয়েকদিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগে সাম্প্রদায়িক অপতথ্যের প্রচার (বিশেষ করে এক্সে) ছিল বেশ লক্ষ্যণীয়। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ পরবর্তী সময়েও সরকারকে জড়িয়ে অপতথ্যের প্রচার দেখা গেছে। এসবই ভূমিকা রেখেছে ৩য় প্রান্তিকে এত বেশিসংখ্যক ভুল তথ্য শনাক্তে। 

আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে সর্বাধিক রাজনৈতিক অপতথ্য

বাংলাদেশে সাধারণত যে দল বা ব্যক্তিরা ক্ষমতায় থাকে সে দল বা ব্যক্তিদের বিভিন্ন কার্যক্রমের দরুণ তাদের নিয়ে গুজব ও অপতথ্য ছড়ায় বেশি। রিউমর স্ক্যানার প্রকাশিত গেল বছরের প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ সময়ে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিয়ে সর্বোচ্চ ৪৪টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। এর বাইরে দলটির নেতাকর্মীদের নিয়ে ৪০৯টি এবং বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নেতাকর্মীদের নামে ৫৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে। শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে গেল এক বছরে প্রচার হওয়া অপতথ্যের সংখ্যা ২০৮টি। এছাড়া, সায়েদুল হক সুমনকে জড়িয়ে ৪৯টি, ওবায়দুল কাদেরকে জড়িয়ে ৩৪টি, সজীব ওয়াজেদ জয়কে জড়িয়ে ২০টি, সাকিব আল হাসানকে জড়িয়ে ২৩টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। 

পার্থক্য নেই বিএনপিকে নিয়ে ভুল তথ্যের প্রচার সংখ্যায়ও। প্রথম ছয় মাসে বিএনপি দল হিসেবে, নেতাকর্মীদের নিয়ে এবং দলটির অঙ্গসংগঠনগুলোকে নিয়ে ভুল তথ্যের সংখ্যা ছিল ৭৪টি। বছর শেষে সংখ্যাটা ১৩০ এ গিয়ে ঠেকেছে। এ সময়ে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে সর্বাধিক ২৯টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, তারেক রহমানকে জড়িয়ে ১২টি, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জড়িয়ে ২০টি এবং রুমিন ফারহানাকে জড়িয়ে ১৫টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

তবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রথম ও শেষ ছয় মাসের ভুল তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ছড়ানো ভুল তথ্য শেষ ছয় মাসে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে৷ দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানকে নিয়ে সর্বাধিক ১১টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ মিলেছে। 

এছাড়া অন্যান্য দলের মধ্যে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে জড়িয়ে ৭টি এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে জড়িয়ে একটি করে অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। 

কোটা আন্দোলন থেকে সরকার পতনের টাইমলাইনে ভুল তথ্যের প্রবাহ

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ও সরকার পতনের আন্দোলনসহ গণঅভ্যুত্থান বিষয়ে  ১৮৯টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এছাড়া ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতন ঘটে। পরবর্তী সময়েও ভুল তথ্যের প্রচার ছিল লক্ষ্যণীয়। রিউমর স্ক্যানার এই সময়ে ৬৭টি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।  

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’কে জড়িয়ে ২৪টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে ৮৩টি ভুয়া তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে সারজিস আলমকে নিয়ে ৩৬টি, হাসনাত আবদুল্লাহকে নিয়ে ২৪টি, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নিয়ে ৬টি, নুসরাত তাবাসসুমকে নিয়ে ৫টি, নাহিদ ইসলামকে নিয়ে ৩টি, তারিকুল ইসলামকে নিয়ে ২টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এছাড়া, বাকের মজুমদার, খান তালাত মাহমুদ রাফি, মাহফুজ আলম, আব্দুল হান্নান মাসুদ, উমামা ফাতেমা, সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি ও ইয়াছমিন মিতুকে জড়িয়ে একটি করে অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। 

জুলাই ও আগস্টের আন্দোলনের সময়ে অসংখ্য মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। এদের মধ্যে রংপুরের আবু সাঈদকে জড়িয়ে সর্বাধিক আটটি এবং ঢাকার মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধকে নিয়ে পাঁচটি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। 

অন্তর্বর্তী সরকারের চার মাসে শতাধিক ভুল তথ্য

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ০৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পরের চার মাসে এই সরকারকে জড়িয়ে প্রচার হওয়া ১৩৫টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের প্রথম ১৪৬ দিনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে জড়িয়ে ছড়িয়েছে ১১০টি ভুল তথ্য। 

এছাড়া এই সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে ড. আসিফ নজরুলকে জড়িয়ে ২৪টি, নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে ১৩টি, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে জড়িয়ে ৬টি, মাহফুজ আলমকে জড়িয়ে ৫টি, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে জড়িয়ে ৪টি, আ ফ ম খালিদ হোসেনকে জড়িয়ে ২টি এবং এম সাখাওয়াত হোসেন, নূরজাহান বেগম ও শেখ বশির উদ্দিনকে জড়িয়ে একটি করে অপতথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। 

সাম্প্রদায়িক অপতথ্যে ভারতীয়রা

দেশের, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাম্প্রদায়িক ক্ষেত্রে অপতথ্য প্রচারের হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল বছরের প্রথম ছয় মাসে সাম্প্রদায়িক ২৯টি অপতথ্য শনাক্ত করে রিউমর স্ক্যানার। পরের ছয় মাসে তা পাঁচ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। 

এক্ষেত্রে বিশ্লেষনে বের হয়ে এসেছে, সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে ভুয়া এবং অপতথ্য ছড়ানো এসব অ্যাকাউন্টধারীর ৭২ শতাংশই ভারতে থাকেন বলে উল্লেখ করেছেন। অ্যাকাউন্টধারীদের মধ্যে দায়িত্বশীল অনেক ব্যক্তিও রয়েছেন। এমনকি ভারতের একাধিক মূল ধারার গণমাধ্যমেও এসব ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়।  

এছাড়া গত ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ১৩টি ভুয়া খবর প্রচার করেছে। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণ বলছে, এক্সে আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে নিয়ে ছড়ানো অপতথ্যগুলো দেখা হয়েছে অন্তত ২০ কোটি বার। 

ভুল তথ্যের প্রবাহ থেকে বাদ যায়নি কোনো ক্ষেত্রই

২০২৪ সালের রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একক ব্যক্তি হিসেবে গেল বছর সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যে (২০৮টি) জড়ানো হয়েছে শেখ হাসিনার নাম। সম্মিলিত এই তালিকায় পরের অবস্থানে (১১৬টি) রয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন সাকিব আল হাসান (৯৮টি)। পরের অবস্থানে রয়েছেন সারজিস আলম। এরপর যৌথভাবে এসেছে ড. আসিফ নজরুল ও হাসনাত আবদুল্লাহর নাম।

দেশে সশস্ত্র এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জড়িয়ে গেল বছর ১৭৪টি ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণ পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার৷ এর মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে সর্বোচ্চ ৯৭টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। বাহিনীটির সাবেক প্রধান জেনারেল (অবঃ) এস এম শফিউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে ৭টি এবং বর্তমান প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে নিয়ে ১৯টি অপতথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে ৫০টি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদকে নিয়ে ৭টি, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মো: ময়নুল ইসলামকে নিয়ে ২টি, র‍‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‍্যাব) নিয়ে ৫টি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) নিয়ে ৫টি, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে নিয়ে ৪টি, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে নিয়ে ৪টি এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে নিয়ে ১টি করে ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার৷ 

স্থাপনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছে ঢাকার মেট্রোরেল (২৫টি)। এছাড়া, কর্ণফুলী টানেল নিয়ে ৮টি, পদ্মা সেতুকে নিয়ে ৪টি এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে নিয়ে ২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে৷

ভুল তথ্যের হাত থেকে রেহাই পায়নি ধর্ম সংক্রান্ত নানা বিষয়ও। গেল বছর ধর্ম ভিত্তিক ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে ৩১৩টি। মুসলিমদের প্রধান উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ২৩টি ভুল তথ্য প্রচারের তথ্য মিলেছে৷ রমজানকে কেন্দ্র করেও ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, সংখ্যায় যা ৩৮টি। গেল বছর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ১৩টি অপতথ্যের প্রচার দেখেছে রিউমর স্ক্যানার। ধর্মীয় ক্ষেত্রে সর্বাধিক ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নিয়ে (৯টি)।

শিক্ষাক্ষেত্রে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে ১১টি করে, জেএসসি নিয়ে দুইটি এবং পিইসি নিয়ে একটি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। এছাড়া প্রশ্ন ফাঁস বিষয়ে ৭টি, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ৪টি এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ৩টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। 

গত বছর ক্রীড়াঙ্গনে ছড়িয়ে পড়া ৪৭৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এসব ভুল তথ্যের সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন সাকিব আল হাসান (৭৫টি)। পরের দুই অবস্থানে আছেন যথাক্রমে তামিম ইকবাল (৪৫টি) এবং মুস্তাফিজুর রহমান (২৪টি)। ক্রিকেটের বাইরে ফুটবল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গত বছর সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছেন এমন তালিকার প্রথম তিন অবস্থানে রয়েছেন যথাক্রমে আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি (১৪টি), পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (১৩টি) এবং ব্রাজিলের নেইমার জুনিয়র (৩টি)। 

বিনোদন জগতে বিভিন্ন বিষয়ে গুঞ্জন আর ধোঁয়াশা লেগেই থাকে সবসময়। এসবের ভীড়ে বিনোদন ও সাহিত্য অঙ্গন ঘিরে ২০২৪ সালে প্রচারিত ২৬৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্যের শিকার হয়েছেন নায়ক শাকিব খান (১৭টি)। এর পরের দুই অবস্থানে রয়েছেন নায়িকা শবনম বুবলী (১৬টি) এবং নায়িকা পরী মণি (১০টি)।

দেশে গেল বছর সময়ে সময়ে নানান ইস্যুতে সরগরম ছিল ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যম। জানুয়ারিতে দেশি-বিদেশি নানান ঘটনার প্রেক্ষিতে এমন ইস্যু চিহ্নিত করা হয়েছে ৫টি। পরবর্তী মাসগুলোতে যথাক্রমে ফেব্রুয়ারিতে ৩টি, মার্চে ১টি, এপ্রিলে ৫টি, মে’তে ৪টি, জুনে ৩টি, জুলাইতে ২টি, আগস্টে ৫টি, সেপ্টেম্বরে ৪টি, অক্টোবরে ২টি, নভেম্বরে ৬টি ইস্যু চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ইস্যুতে ৮২০টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে যথাক্রমে কোটা সংস্কার আন্দোলন (১৮৯টি), ভিন্ন ভিন্ন সময়ের বন্যা (১০১টি) ও সংসদ নির্বাচন (৯১টি) ইস্যুতে।

প্রতারণা ও ভুয়া নিয়োগ নিয়ে চিন্তা  

সময়ের সাথে নিত্য নতুন পন্থায় প্রতারণার পথ বেছে নিচ্ছেন প্রতারকরা। গেল বছর জুয়ার অ্যাপের ভুয়া বিজ্ঞাপনে সেলিব্রিটিদের জড়ানোর বিষয়টি প্রতারণার ক্ষেত্রটিতে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালে জুয়ার বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত প্রায় অর্ধশতাধিক ভুয়া ভিডিও শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার।

প্রতারণার আরেকটি ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে ভুয়া নিয়োগ। গেল বছর ১২০টি ভুয়া নিয়োগের ঘটনা শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার৷

প্রযুক্তির অপব্যবহার আর গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ভুল তথ্যে দুশ্চিন্তা

২০২৪ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিপফেক প্রযুক্তির কারসাজির মাধ্যমে ভুল তথ্যের প্রচার ও প্রসার বেশ লক্ষ্যণীয় ছিল। এছাড়া গত বছর এমন ৫০৫টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। অর্থাৎ, গড়ে প্রতিদিন একটির বেশি ভুল তথ্য প্রচারে গণমাধ্যমকে জড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি