গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ ইউজিসি স্বর্ণপদক পাচ্ছেন ড. শফিকুল
প্রকাশিত : ১৩:৫৮, ১০ আগস্ট ২০১৮
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(ইউজিসি) প্রদত্ত স্বর্ণপদকের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কারটি (স্বর্ণপদক) তাকে প্রদান করবেন।
প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বাছাইকৃত সেরা গবেষণা ও গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশককে এ স্বর্ণপদক প্রদান করে।
২০১৬ ও ২০১৭ সালের দেশের মোট ৩৪ জন গবেষক তাদের মৌলিক গবেষণা ও বস্তুনিষ্ঠ বিষয়বস্তু গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশের জন্য ইউজিসি পুরষ্কার এর মনোনয়ন পান। নোবিপ্রবির শিক্ষক এর গবেষনার বিষয়বস্তু হলো ‘বাইপোলার ডিজঅর্ডার’ নামক এক ধরণের মানসিক ব্যাধি। এটা এমন প্রকারের একটি মানসিক সমস্যা যা আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাভাবিক ব্যক্তিত্বকে বাঁধাগ্রস্থ করে। একই সময়ে অনেক বেশি আমোদ-প্রমোদ, অনেক বেশি সক্রিয় জীবন-যাপন এরপর পরই মানসিক হতাশাগ্রস্থতা, কাজে অমনোযোগিতা কাজ করা।
ড. শফিকুল ইসলাম জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর তথ্যমতে বাইপোলার ডিজাঅর্ডার হল বিশ্বের ষষ্ঠ চিহ্নিত মানসিক ব্যাধি, যার দিনদিন প্রাদুর্ভাব জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। এই গবেষণার জন্য আমরা ঢাকাস্থ ন্যাশনাল ইন্সটিটউট অব মেন্টাল হেলথ থেকে ৫৫ জন মানসিক রোগির আর ৫৫ জন সুস্থ মানুষের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে গবেষনা কার্যক্রম শুরু করি। এ ক্ষেত্রে তাদের বয়স ও লিঙ্গ (পুরুষ বা মহিলা) প্রাধান্য দেওয়া হয়।
সম্পূর্ণ গবেষণা চলে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর ফার্মেসি বিভাগের ল্যাবে। এসময় তিনি ও তার সহযোগীরা দেখেন যে ‘বাইপোলার ডিজঅর্ডার’ শুধু জেনেটিক বা মস্তিষ্কের আকার পরিবর্তন এর জন্য হয় না। এ ছাড়াও বিভিন্ন নন এনজাইমেটিক এন্টিঅক্সিডেন্ট যেমন- ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ও ভিটামিন-ই ছাড়াও কিছু ট্রেস উপাদান যেমন- জিঙ্ক, আয়রন, ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও সেলেনিয়াম এর উপর নির্ভর করে। গবেষণায় ধরা পড়ে এন্টিঅক্সিডেন্টস ও ট্রেস উপাদানগুলোর অভাব উপরিউক্ত মানসিক রোগের ঝুঁকি অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। লিপিড পারঅক্সিডেশন প্রোডাকশনাল মেলোনডিএলডিহাইড এর মাত্রা বেড়ে গেলেও রোগটি মানবদেহে বাসা বাঁধে প্রকটরুপে।
ড. শফিকুল ইসলাম বলেন ‘আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে আমরা এমন অনেক মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগী। তবে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে এর মাত্রা দিনদিন বাড়ে এবং একটা সময় এ রোগ মারাত্বক আকার ধারন করে, যা আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত, পরিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ‘বাইপোলার ডিজঅর্ডার’ নিয়ে গবেষনা এই প্রথম। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৮ দশমিক ৯৫ভাগ লোক ‘বাইপোলার ডিজঅর্ডারর’ রোগে ভোগে। আমাদের গবেষনা কার্যক্রম চলছে, এ ব্যাপারে নতুন আরও অনেক বিষয় উপস্থাপন করতে পারবো।
স্বর্ণপদক নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘এ রকম পুরষ্কার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষকের জন্য প্রথম। আমি অত্যন্ত খুশি এই ভেবে যে, আমার শিক্ষার্থীরা এ রকম পদকের জন্য উৎসাহিত হয়ে গবেষণাতে প্রচুর মনোনিবেশ করতে পারবে।’
তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ হিসেবে আমাদের বাংলাদেশে গবেষণা খুব কম হয়। মহান আল্লাহপাক আমাকে যদি তৌফিক দান করেন তাহলে বাংলাদেশে আমি ‘জেনেটিক ডায়াগনস্টিক ল্যাব’ প্রতিষ্ঠা করতে চাই এবং উন্নত বিশ্বের মতো আমার দেশ ও ওষধ শিল্পে এগিয়ে যাক একজন ফার্মেসিস্ট হিসেবে এই আশাবাদ রাখি’।
গবেষণার নেশায় বুঁদ থাকা এই অধ্যাপকের প্রায় ৯৮টির মতো গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে, তার গবেষণাগুলো অন্যান্য গবেষণায় ৫০০বারেরও অধিক রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। বর্তমানে তিনি ফুসফুস ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এর জীনগত প্রভাব, এছাড়াও জিন পরীক্ষার মাধ্যমে ওষধ নির্ধারণ পদ্ধতি নিয়ে তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসি বিভাগ এর চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যস্ত সময় পার করার পাশাপাশি অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম দেশের বিভিন্ন স্থানে ফার্মাকোজেনোমিক্সসহ ফার্মাকোলজি এর অসংখ্য কনফারেন্স ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। তাছাড়া দেশেল বাইরে জাপান, সিঙ্গাপুর,মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ অনেক দেশে তিনি বাংলাদেশের বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
একে//
আরও পড়ুন