ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

গরীবের সিএমএইচ

নাসিম হোসেন

প্রকাশিত : ১৫:৫২, ২৩ আগস্ট ২০২০

Ekushey Television Ltd.

‘এখানে ৫০ টাকায় করোনার চিকিৎসা করানো হয়’- এমন একটি ট্যাগ লাইন দিয়ে লেখাটি শুরু করলে অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করতেন না। আমি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কথা বলছি। গত ১৪ আগস্ট রাতে আমার শ্বাশুড়ী করোনা আক্রান্ত হয়ে, শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে সিএমএইচ-এ নেই। সিভিল নন এনটাইটেল্ট পেশেন্ট হলেও এজির অনুমতি লাগবে শুনে প্রমাদ গুনি গভীর রাতে এবং ভাবি জরুরী মূহুর্তে এসব কিভাবে করবো? 

৭০ ছুঁই ছুঁই শ্বাশুড়ীর তো তখন ‘এই যায় এই যায় অবস্হা’। 

বন্ধুবর মামুন এবং এজাজের লিংক ধরে সেকেন্ড অফশন কুর্মিটোলায় রওনা দেই। ইতিমধ্যেই কথা হয়, পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিলের সাথে। অল্প কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে দ্রুতই রোগীকে ভর্তি করা হয় ওয়ার্ডে। অক্সিজেন পেয়ে রোগী আরামবোধ করতে থাকেন। আমিও নিশ্চিন্ত হই। 

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গেলে যে বিষয়টি প্রথমেই দৃষ্টিগোচর হবে তা হচ্ছে- এর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। এখানে নেই বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়ালের বিচরণ, দেয়ালে নেই পানের পিক, নেই কোন উৎকট দালালের ফিসফিসানি।

কেবিনের জন্য চেষ্টা করলাম। পরিচালক বললেন, ‘আমার খুব টাইট পজিশন, প্রচুর চাপ, আপনাকে ‘ফলস’ হোপ দিবো না। 

বউ বললো, এখানে এটেন্ডেনস থাকার ব্যাবস্হা আছে, এতেই চলবে। চিকিৎসা নিয়েই তো কথা! 

যাই হোক, আমি তার কথায় আস্হা রেখে আর বেশি দৌড়ঝাঁপ করা থেকে বিরত থাকলাম।

সাত দিন ধরে তার চিকিৎসা চলেছে নিয়ম মাফিক। হাসপাতাল থেকেই সব দিয়েছে। আমার চিন্তা ছিলো হাসপাতালের খাবারের মান নিয়ে। এক্ষেত্রেও বউ নিশ্চিত করলো মান ভালো। অনেকটা ‘সিএমএইচ’র মতই।

সুস্থ হয়ে শ্বাশুড়ী ছাড়া পেলেন। প্রথম দিনে ৫০ টাকা দিয়ে ভর্তির পর আর কোন টাকা লাগেনি। এ কথা শুনে বউকে বললাম, ‘বলো কি? এদেশে তো হাসপাতালের পর্দাই কেনা হয় ৩৫ লাখ দিয়ে! এই দেশে একজন করোনা রোগী ৭ দিন চিকিৎসা নিলেন মাত্র ৫০ টাকা খরচ হবে- এটা তো সেই পর্দা কেনার মতোই অবিশ্বাস্য।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে বউ শোনালো নানান গল্প। ডাক্তাররা ভালো, বেশ আন্তরিক। জানালেন- কোন এক রোগী আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ৭ লাখ খরচ করে কোন চিকিৎসা না পেয়ে এখানে এসেছেন এবং ভালো চিকিৎসা পেয়েছেন।

সব কিছু দেখে, শুনে বলতে পারি- আরো অর্থায়ন হলে এই হাসপাতালটিও একদিন সিএমএইচ’র মতো সেবা দিতে পারবে। আর এতে উপকৃত হবে আমাদের মতো নন এনটাইটেলট রোগীদের চিকিৎসা সেবা।

যদিও এ ক্ষেত্রে তিনটি জিনিস নিশ্চিত করতে হবে :
১. কোন মিঠুরা যেন মধুর লোভে এখানে না আসতে পারে।
২. কোন ৩য়/৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ব্যানার/পোস্টার যেন না ঝুলে।
৩. বি. জে. জামিলরা যেন পরিচালকের পদে থাকে।

এসব ভাবতে ভাবতেই একসময় বাড়ি পৌছে গেলাম। বউ-শ্বাশুড়ীর শংকামূক্ত হাসি দেখে সপ্তাহ আগে সিএমএইচের ভিসা না পাওয়ার খেদ গেল মুছে, ‘আমাদের জন্য কুর্মিটোলা সিএমএইচ-ই ভালো’। গরীবের জন্য ওটাই সিএমএইচ। এখানে মাত্র ৫০ টাকায় করোনা হয় ভালো। এমন একটি স্টীকার মনে হয় জুড়ে দেই ‘কে জি এইচ’র পাশে।
এসএ/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি