গলার কষ্ট রুখতে হোমিওপ্যাথি
প্রকাশিত : ১৭:৪৫, ৩১ মে ২০১৮ | আপডেট: ২৩:১০, ৩১ মে ২০১৮
গলার স্বর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভালো স্বরে কথা বলতে না পারলে অনেকেই পছন্দ করেন না। তবে অনেকে সাধনা করেও তেমন সফল হোন না। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন, হোমিওপ্যাথির মাধ্যমে এর থেকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারেন। বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ডা. এস.জেড খান তাই কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
গলায় গলদে-
গলা ব্যথা, খুসখুসে কাশি কিংবা গলার স্বরের হঠাৎ পরিবর্তন- এমন ঝামেলায় প্রায়ই সব বয়সিরা ভুক্তভোগী। নির্দিষ্ট সময় বা ঋতু মেনে এই সমস্যা আসে না, যখন তখন থাবা বসায়। গলার কষ্টে চটজলদি উপশম পাওয়া বেশ কঠিন। একবার শুরু হলে পুরোপুরি সারতে অনেক সময় নেয়। আড়ালে থাকতে পারে একাধিক অসুখও। তবে শুরুতেই হোমিওপ্যাথি ওষুধ ম্যাজিকের মতো কাজ করে গলার বিভিন্ন সমস্যায়।
অল্পতেই বসা স্বর-
গলার শত সমস্যার মধ্যে খুব বেশি হয় স্বর ভেঙে যাওয়া বা বসে যাওয়া। বাচ্চা, বড় সবারই ঠাণ্ডা লেগে অথবা হঠাৎ জোরে চিৎকার করলে প্রায়ই এমন হয়ে থাকে। এমন হলে প্রথম অবস্থায় উচিৎ দিনে দু’বার নুনজলে গার্গল করা। তিন চার দিন করতে হবে। বেশিক্ষণ কথা বলা বা খুব চিৎকার করার জন্য স্বর বসে গেলে সবচেয়ে উপকারী ওষুধ Rhustox, Belis p, এই ওষুধ তিন চার দিন খেতে হবে। দিনে তিন থেকে চারবার খেলেই কষ্ট লাঘব হয়।
লুকিয়ে টিউমার-
ভাঙা বা বসে যাওয়া স্বর সাত থেক ১০ দিনের বেশি থাকলে ও ওষুধ খাওয়ার পরও গলা ঠিক না হলে ব্যাপারটা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ। এক্ষেত্রে ভোকাল কর্ডে টিউমার বা ইডিমাও হতে পারে। তখন অবহেলা না করে ইএনটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। গলায় টিউমারের চিকিৎসা দ্রুত শুরু করলে একদম ঠিক হয়ে যায়। টিউমার চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি অনবদ্য। জরুরি ওষুধ Thuj o, Caust। ২০০ অথবা ১০০০ পাওয়ারের এই দুই ওষুধ টিউমারের কষ্ট কমাতে খুব ভাল কাজে দেয়। গলার এই সমস্যার চিকিৎসা দীর্ঘস্থায়ী। চিকিৎসকের পারমর্শ মতো কয়েক মাস টানা ওষুধ খেলে তবেই সুস্থ হওয়া সম্ভব। দেরি করে চিকিৎসা শুরু করলে টিউমার, ক্যানসারে পরিণত হতে পারে।
অ্যালার্জির জের-
হঠাৎ করে গলার ভিতরে চুলকাতে শুরু করলে ও সঙ্গে শুকনো কাশি হলে তার কারণ হতে পারে অ্যালার্জিও। এমন হলে গলায় খুব অস্বস্তি হতে থাকে, মনে হয় যেন গলায় কী একটা আটকে রয়েছে। লালা জমে থাকে গলার কাছে। ফলে কথা বলতে, কিছু খেতে খুব কষ্ট হয়। এমন লক্ষণ থাকলে প্রথম বুঝতে হবে অ্যালার্জি ঠিক কী থেকে হচ্ছে। সেই জিনিস সর্বপ্রথম ত্যাগ করা উচিৎ। দূষণ থেকেও এই ধরনের অ্যালার্জি হয়। সেক্ষেত্রে মাস্ক ব্যাবহার করা জরুরি। সঙ্গে ওষুধ Wyethia, ৩০ পাওয়ারের দিনে তিন চারবার খেতে হবে। এক্ষেত্রেও টানা তিন থেকে চার দিন খেলে উপকার মেলে। এছাড়া Histamine,২০০ বা ১০০০ পাওয়ারের খেলেও এই সমস্যায় ভালো কাজ দেয়। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খেতে হবে।
গলায় ঘা-
অনেক সময় অ্যালার্জির কারণে গলায় ঘা হতে পারে। বিশেষ করে কোনও নির্দিষ্ট খাবার থেকে গলায় অ্যালার্জি হলে তা দীর্ঘ দিন থাকতে থাকতে গলায় ঘা হয়ে যায়। বিশেষ করে ফুড অ্যালার্জি থেকে এমন সমস্যা হয়। অনেক সময় খুব গরম খাবার, চা, কফি খেলে তা থেকে গলা পুড়ে গিয়ে ঘায়ের আকার নেয়। ফলে খাবার গিলতে, কথা বলতে কষ্ট হয়। খুব ঠাণ্ডা খাবার খেলেও তা থেকে গলা ফুলে ঘা হতে পারে। এছাড়া ভিটামিনের অভাব ও অতিরিক্ত ধূমপান এমন সমস্যার একটি অন্যতম কারণ। এমন সমস্যায় অব্যর্থ হোমিওপ্যাথি ওষুধ Merc s, Ars alb.
বলতে বলতে স্বরভঙ্গ-
অনেক সময় আবার দেখা যায়, যাদের কাজের প্রয়োজনে অতিরিক্ত কথা বলতে হয়, বিশেষ করে শিক্ষক শিক্ষিকা, রাজনৈতিক নেতা, সংগীত শিল্পী, এদের কথা বলতে বলতে হঠাৎ গলার স্বর আটকে যায় বা স্বর ভেঙে যায়। সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে নিন Coca অথবা Sel. ম্যাজিকের মতো নিমেষে ঠিক হয়ে যায়। যাদের খুব কথা বলতে হয় তাদের সঙ্গে সবসময়ই এই ওষুধ রাখা উচিৎ।
গলার শত্রু সিগারেট-
যারা ধূমপান করেন তাদের গলার স্বর খুব সহজেই নষ্ট হয়। সিগারেটের নিকোটিন স্বরযন্ত্রের ক্ষতি করে। ফলে গলার স্বর ফ্যাসফেসে হয়ে যায়। গলায় সংক্রমণের প্রবণতা বাড়ে। প্রায়ই গলা ধরে যায়। এদের সবার আগে প্রয়োজন ধূমপান ত্যাগ করা। তার সঙ্গে হোমিওপ্যাথি ওষুধ Nicotine খেলে খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান সম্ভব। তবে এই ওষুধ খুব সহজে পাওয়া যায় না। না পেলে সেক্ষেত্রে উপকারী Tab, এটি ২০০ বা ১০০০ পাওয়ারের খেতে হবে। দু’বার করে দু’তিন দিন খেলেই ফল মিলবে।
টনসিলের যম-
টনসিল সব বয়সিদেরই হয়। ভালো হতে অনেক সময়ও নেয়। গলায় মারাত্মক ব্যথা, খেতে কষ্ট, গলা ফুলে যাওয়ার লক্ষণ নিয়ে এই টনসিলের উপস্থিতি। সমস্যা হঠাৎই ধরা পড়ে। টনসিলের এমার্জেন্সিতে ভরসাযোগ্য হোমিওপ্যাথি। সব বয়সিরাই ভরসা করতে পারেন। হঠাৎ টনসিল ধরা পড়লে বা অ্যাকিউট টনসিলের ব্যথা গলার ডানদিকে হলে Mer-p-i অথবা Lyco ওষুধ নিতে হবে। বাঁদিকে ব্যথা ও খেতে কষ্ট হলে Mer-b-i অথবা Lach ৩০ অথবা ২০০ পাওয়ারের এই ওষুধ খেতে হবে। এতেই উপশম পাওয়া যায়। ক্রনিক টনসিলের সমস্যায় টনসিল বড় হয়ে গলা ফুলে যায়। ঠিক হতে অনেক সময় লাগে। রোগীকে ঠাণ্ডা খাওয়া, ঠাণ্ডা জলে স্নান, ঠাণ্ডা লাগানোর থেকে দূরে রাখতে হয়। এমন হলে Psor অথবা Bac, এই ওষুধে কাজ হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো খেতে হবে। এই ধরনের টনসিলের চিকিৎসা এক দেড় বছর টানা করে যেতে হয়। nLach এবং Phyt এই দুই ওষুধ অ্যাকিউট ও ক্রনিক দু’য়ের মাঝামাঝি অবস্থায় টনসিল থাকলে খুব সহজে কষ্ট কমায়। তবে টনসিলের চিকিৎসায় চিকিৎসকের পরামর্শ দ্রুত নেওয়া উচিৎ। কারণ টনসিল ঠিকমতো না সারিয়ে তুললে ভবিষ্যতে তা থেকে হার্টের সমস্যা হতে পারে।
মিষ্টি কথায়-
খুব উগ্র গলা, ভালো কথা বললেও কেউ শুনতে চায় না। হোমিওপ্যাথিতে এরও সমাধান রয়েছে। গলার স্বরে মিষ্টতা আনতে খান Coll, ২০০ পাওয়ারের এই ওষুধ মাসে একবার করে ৬ মাস খেলেই গলার স্বরে মধু ঝরবে।
তথ্যসূত্র: ভারতীয় সংবাদ প্রতিদিন।
এসএইচ/