ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

গার্মেন্টসের পর বিপিও হবে সবচেয়ে বড় বাজার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৫০, ১৩ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১৬:৩৫, ১৪ এপ্রিল ২০১৮

দীর্ঘদিন ধরেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে দেশের প্রথম খাত হিসেবে তৈরি পোশাক শিল্প প্রধান ভূমিকা রেখে আসছে। তবে শিল্পোত্তর বিশ্বে এখন কেবল তৈরি পোশাক রপ্তানি করেই বিশ্ববাজারে টেকা যাবে না। তাই প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে পেশার ধরণও। এমনই এক পেশা বিপিও। এ খাতে বিশ্বের বর্তমান বাজার ৫০০ বিলিয়ন ডলার। যেখানে বাংলাদেশ মাত্র ১৮০ মিলিয়ন ডলার আয় করতে পারছে। তবে উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও কোরিয়ায় শ্রমশক্তি হ্রাস পাওয়ায় বাংলাদেশের জন্য দরজা খুলে গেছে। ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ ১ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

সম্প্রতি একুশে টেলিভিশনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনটিই জানিয়েছেন আউটসোর্সিং সংগঠনগুলোর প্রতিষ্ঠান বাক্য’র সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ। নিচে সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশটি তুলে ধরা হলো 

বিপিও কি? 

বিপিও মানে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং । এই নামটা বিশ্বজুড়ে খুব পরিচিত। আউটসোসিং বলতে কেবল কল সেন্টার আউটসোসিং নয়। টেলিকমিউনিকেশন, ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, হোটেলের ব্যাক অফিসের কাজ, এইচআর, আইটি আ্যাকাউন্ট সবকিছুই এর অন্তর্ভূক্ত। এসব কাজ আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে করার বিষয়টি সাধারণভাবে বিপিও বলে পরিচিত।

বিশ্বের সবচেয়ে ক্রমবর্ধমাণ  ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে এই বিপিও খাত। আইসিটিতে বর্তমানে বাংলাদেশের যে পরিবর্তনের গল্প, তার উল্লেখযোগ্য অবদান হচ্ছে বিপিও খাত। আইসিটিতে বর্তমানে বাংলাদেশের যে পরিবর্তনের গল্প, তার উল্লেখযোগ্য অবদান হচ্ছে বিপিও খাতের। বছরে প্রায় ১৮০ মিলিয়ন ডলার বিদেশি মুদ্রা আসে আইসিটটি খাত থেকে । সরকার আ্িসিটি  সেক্টর থেকে ২০২১ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, আশা করা যায় সিংহভাগ অংশ-ই আসবে বিপিও থেকে।

আমাদের দেশে বিপিওর যাত্রা:

আমাদের দেশে কল সেন্টার ও ডাটা এন্ট্রি  বিপিওর ধারাটির সূচনা ঘটে। প্রথমে ছোট আকারে শুরু হয়েছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এখন এটি বেশ বড় আকারের ধারণ করেছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাটির পৃষ্ঠপোষকতা করার কারণে এ ব্যাপারে নতুন একটি জাগরণ তৈরি হয়েছে। তাই বাংলাদেশে বিপিও একটি নতুন সম্ভাবনার নাম। কারণ বাংলাদেশে বিপিও ব্যবসার প্রবৃদ্ধি বছরে শতকরা ১০০ ভাগের বেশি। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বিপিওর বাজার ৫০০ বিলিয়ন ডলার। সেখানে এ পর্যযন্ত বাংলাদেশে দখল করতে পেরেছে মাত্র ১৮০ মিলিয়ন ডলার।

বিপিওর সম্ভাবনা:

সুতরাং বিষয়টি স্পষ্ট যে বিপিও খাতে একটি বিশাল বাজার পড়ে আছে। এখন  যদি বাংলাদেশ এই খাতে নজর দেয়, তাহলে তৈরি পোশাক শিল্পের পরই বিপিও হবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় খাত। এখন প্রয়োজন বিপিওকে তরুণ প্রজন্মের কাছে আরও জনপ্রিয় করা। কারণ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপানে এই মুহূর্তে প্রোগ্রামার প্রয়োজন প্রায় ২০ লাখ। আগামী ৫ বছরে ২০ লাখ প্রোগ্রামার কোডার এর প্রয়োজন হবে জাপান, ইউরোপ ও আমেরিকাতে।

কিন্তু তাদের সেই জনগোষ্ঠী নেই। জাপানে ৫০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর বয়স ৫০ এর ঊর্ধে। ইউরোপ, আমেরিকাতেও তাদের তরুণ প্রজন্মের সংকট বিরাজ করছে। বাংলাদেশ যদি তার বিপুল সংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠীকে সঠিক প্রশিক্ষণ দিতে পারে তাহলে আগামী ৫ বছরে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপানের বাজার আমাদের তরুণরাই নিয়ন্ত্রণ করবে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি লাভ করছে। এদের বিরাট অংশ বিপিও সেক্টরে কাজ করতে পারে। যে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার মানুষ এখানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এই খাতে যারা কাজ করবেন, তাদের মাত্র দুটি যোগ্যতা থাকা দরকার।  প্রথম যোগ্যতা হলো ‘অ্যাবিলিটি টু লার্ন’  অর্থাৎ আমি জানি না, জানতে চাই এই মনোভাব থাকতে হবে। দ্বিতীয় যোগ্যতা –কমিউনিকেশন স্কিল তথা যোগাযোগের দক্ষতা।

২০০৯ সালে দেশে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের আয় ছিল মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলার।  ৬ বছরের মধ্যে এ খাতে আয় ৩০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে বিপিও সেক্টরে ৪০ হাজারের বেশি লোক কাজ করছে। ২০২১ সালের মধ্যে এ খাতে ২১ লাখ লোক কাজ করবে। বিপিও খাতে আয় যত বাড়বে, দেশ অর্থনৈতিকভাবে ততই এগিয়ে যাবে। তরুণদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিয়ে তথ্য-প্রযুক্তির বিভিন্ন খাতে কাজে লাগাতে হবে। দেশের প্রধান রফতানি পণ্য পোশাক খাতের চেয়ে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে আয় কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় ভবিষ্যতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবীর পাশাপাশি বিপিও পেশা হিসেবে বেছে নিবে তরুণরা।

বিপিও কর্মক্ষেত্রে যাদের  ভালো করার সুযোগ রয়েছে:

সব বয়সীদের এ সেক্টরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। রয়েছে খণ্ডকালীন ও পূর্ণকালীন কাজের সুযোগও। বিপিওতে দুধরণের কাজ হয়ে থাকে।  একটি হলো ভয়েসের মাধ্যমে, আরেকটি লিখিত কাজ। বর্তমানে বাংলাদেশে ভয়েসের মাধ্যমেই বেশি কাজ করা হয়ে থাকে। যারা বিপিওতে ভয়েসের মাধ্যমে কাজ করে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ধরাবাধা কোনো নিয়মের কম নেই। এখানে অল্প শিক্ষিতরাও কাজ করতে পারে। আর যারা লিখিত বিষয় নিয়ে কাজ করে তারা শিক্ষিত হলে  এগিয়ে যাওয়ার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের শিক্ষার্থীরা বুঝতে সক্ষম হয়েছে, বিপিও কী, এখানে কাজের সম্ভাবনা কতটুকু। অনেকেরই ধারণা ছিল, বিপিও মানেই কল সেন্টার। এই ভুল ধারণাটি গত বছরের প্রচার প্রচারণার ফলে অনেকটা দূর হয়েছে।

বিপিওতে যারা কাজ করছে, তাদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রতিটি প্রতিষ্টানই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের জন্যও যে কেউ নিজেকে প্রস্তুত করতে পারছে। এ জন্য এখন যারা বিপিওতে কাজ করছেন, তাদের গ্রাহকদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। না হলে নতুন কাজ সৃষ্টি হবে না।

বিপিও কাজের ধরণ বা কলসেন্টারের ধরণ এবং তারা যে সেবা দেয় তার উপর মূলত নির্ভর করে আবেদনকারীর শিক্ষাগত ও অন্যান্য যোগ্যতা। কল সেন্টারের বেশির ভাগ কাজই খণ্ডকালীন। তবে পাশাপাশি পূর্ণকালীন কাজের জন্যও কলসেন্টারগুলোতে প্রচুর লোকবল নিয়োগ  দেওয়া  হয়ে থাকে। আর তাই কলসেন্টারে খণ্ডকালীন ও পূর্ণকালীন চাকরির জন্য যোগ্যতাগুলোও হয় ভিন্ন।

খণ্ডকালীন চাকরির জন্য আবেদন করতে আবেদনকারীকে বিশ্ববিদ্যালয়  অথবা কলেজে অনার্স বা ডিগ্রি পড়ুয়া হতে হবে। পূর্ণকালীন চাকরি করতে আবেদনকারীকে কমপক্ষে স্নাতক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কাজের কোনো অভিজ্ঞতা থাকলে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি আবেদনকারীকে শুদ্ধ করে বাংলা ও ইংরেজিতে কথা বলা, সুন্দর উপস্থাপনা,  কম্পিউটার ব্যবহার সম্পর্কে মৌলিক ধারণা থাকা, স্মা্ট, উপস্থিত বুদ্ধি, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি বাড়তি যোগ্যতা থাকা দরকার।  যদি সুনির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনার আওতায় এ নিয়ে কাজ করতে পারি, তাহলে অল্পদিনে বাংলাদেশকে বিপিওর বিশ্ববাজারে আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

লেখক: ওয়াহিদ শরীফ, সভাপতি বাক্য

এমজে/

 

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি