‘গায়ে এখনো পুলিশের মারের দাগ আছে’
প্রকাশিত : ২০:০৮, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ২০:০৯, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮
২০০১-২০০৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে বিরোধী দলের বহু নেতাকর্মী হামলা-মামলা ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তাঁদের এক যুব মহিলালীগ নেত্রী সুলতানা রাজিয়া। সম্প্রতি একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে তাঁর ওপর জোট সরকারের পুলিশ বাহিনীর নির্যাতনের বর্ণনা দেন এই নেত্রী।
সুলতানা রাজিয়া বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের অর্থ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নগর রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত পল্লবী যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি। কেন্দ্রীয় যুব মহিলালীগের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে তার পদচারণা দীর্ঘদিনের।
যুব মহিলা লীগ নেত্রী সুলতানা রাজিয়া একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, দল যখন ক্ষমতায় ছিল না তখন মিছিল মিটিংয়ের ডাক দিলে আমার এলাকা থেকে বড় জোর ৩০- ৩৫ জন নারী কর্মী বের হতো। এরাই সারাদিন পিকেটিং করতো। পুলিশের রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস সহ্য করে রাজপথে অবস্থান নিয়ে হরতাল সফল করতো।
আর এখন শত শত নারী সাজগোঁজ করে মিটিংয়ে বক্তৃতা দিতে আসে। আগে যাদের চেহারা দেখা যায় নি। তিনি বলেন, যারা সুবিধা বুঝে রাজনীতি করতে আসে তাদের টাকার কাছে আমরা অর্থাৎ মাঠের কর্মীরা অসহায়। আমাদের নেতারা গ্রুপিং রাজনীতির স্বার্থে ওদের প্রশ্রয় দেয়।
২০০১-০৬ সাল সময়ে ঢাকার রাজপথে যুব মহিলা লীগ সব সময় সক্রিয় ভূমিকায় ছিল। প্রতিনিয়ত আন্দোলন সংগ্রামে যুব মহিলা লীগের কর্মীদের জীবন বাজি নেওয়া ভূমিকা তখন কম বেশি প্রায় দিনই স্থান করে নিত গণমাধ্যমে।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ও আশপাশের এলাকায় প্রতিদিনই পুলিশের সঙ্গে তাদের চলতো ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। আর সেই দু:সময়ের প্রথম সারির মুখ সুলতানা রাজিয়া।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সুলতানা রাজিয়া বলেন, অসংখ্যবার পুলিশের মার খেয়েছি। আমরা নারী কর্মী হলেও পুরুষ পুলিশের মার থেকে রেহাই পেতাম না। মারের সঙ্গে চলতো অশ্রাব্য গালাগাল। এখনো গায়ের অনেক জায়গায় পুলিশের মারের দাগ আছে।
সতের আঠারো বার হাজতে রাত কাটিয়েছি। জেল খেটেছি দু`বার। এমন কী আমার পল্লবী থানায় পুলিশ হার্ট এ্যাটাকে মারা গেলেও সেটাকে খুন বলে চালিয়ে আমাদের ( যুব মহিলা লীগের নেতা কর্মীদের) নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। কিন্তু দলের সুসময়ে আমাদের সেসব ত্যাগের কোনো মূল্য নেই।
রাজনীতির প্রয়োজনে যারা রাজপথে সংসার সাজায় তাদেরই একজন সুলতানা রাজিয়া। আর তাই হয়তো তার ছোট ছেলের খৎনা অনুষ্ঠানের দিন তাকে গ্রেফতার করেছিল জোট সরকারের পুলিশ। শুধু পুলিশী আক্রমণ নয়, চার দলীয় জোট সরকারের আমলে সুলতানা রাজিয়ারা শিকার হয়েছিল সরকার দলীয় কর্মীদের বৈরী আচরণের।
ওয়ান ইলেভেন সময়কালে গ্রেফতার হয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেদিন তিনি মুক্তি পেলেন সেদিন পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষীদের বেষ্টনী ভেদ করে সুলতানা রাজিয়া কর্মীদের নিয়ে সুধা সদনে রাত আড়াইটায় দেখা করতে যান নেত্রীর সঙ্গে। সেদিনের স্মৃতি চারণ করে সুলতানা রাজিয়া বলেন, নিরাপত্তা রক্ষীরা কোনো অবস্থায় আমাদের যেতে দিচ্ছিল না। তাদের সঙ্গে আমাদের বাক বিতন্ডা শুনে নেত্রী বের হয়ে আসেন। আমি দৌড়ে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরি। তিনিও কাঁদছেন, আমিও কাঁদছি। সে এক অন্যরকম দৃশ্য।
সুলতানা রাজিয়া এ প্রতিবেদকের কাছে আক্ষেপ করে বলেন, দলের সুসময়ে সেসব কেউ মনে রাখেনি। এখন আমরা কোনো অনুষ্ঠাণে গণভবনের একটা কার্ড পর্যন্ত পাইনা। জনপ্রতিনিধিদের কাছে দলের কর্মীদের কোন মূল্যায়ন নেই। অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি নিজের লোকদের স্বার্থ রক্ষা নিয়ে ব্যস্ত। শুধু মাত্র মিছিল মিটিংয়ে লোক জড়ো করার জন্য আমাদের দরকার হয়। অন্য কিছুতে আমাদের মূল্যায়ন নেই।
শরীয়তপুর জেলা যুব মহিলালীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেত্রী সুলতানা রাজিয়া। আগামী নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন জানতে চাইলে তৃণমূল এই নেত্রী বলেন, ভোটারদের বড় অংশ নারী। এই ভোট ব্যাংককে অবহেলা করে নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়া সম্ভব নয়। যুব মহিলা লীগ নারী ভোটারদের মাঝে সরকারের ইতিবাচক কাজগুলো প্রচার করছে। পাশাপাশি অন্য কোন অপশক্তি ক্ষমতায় এলে দেশের কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে সে ব্যাপারেও সচেতন করছে।
রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছেন এমন প্রশ্নে সুলতানা রাজিয়া বলেন, মাঠের কর্মীরা আমাকে সংসদ নির্বাচন করার ব্যাপারে উৎসাহী করে। আমি বলেছি, নেত্রী যা সিদ্ধান্ত দেবে তাই চূড়ান্ত। আমি আজীবন নেত্রীর একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ করতে চাই।
/ আ আ /
আরও পড়ুন