গুপ্তচর বৃত্তিতে কাঁক, কবুতর ও ডলফিন!
প্রকাশিত : ১০:৪২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
কবুতরের চিঠি আদান-প্রদানের ইতিহাস হাজার বছরের। গুপ্তচরের মাধ্যম হিসেবেওে ব্যবহার করা হতো কবুতরকে। কিন্তু কাঁক ও ডলফিন যে গুপ্তচরের কাজ করতে পারে তা কী জেনেছেন কোন দিন? এবার তা শুনুন।
সম্প্রতি সিআইএ একটি তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাটি কবুতর, কাঁক ও ডলফিন এই তিনটিকে ব্যবহার করতো গুপ্তচর হিসেবে। শুধু তাই নয়, এই প্রাণী মিশনের পেছনে ৬ লাখ ডলার পর্যন্ত খরচও করেছে।
প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, গোপন মিশনের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হতো এসব প্রাণীদের। কবুতরকে স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের গোপন স্থাপনার ছবি তুলতে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। আর সিআইএ কাঁক পাঠাতো জানালায় গোপন স্পিকার ফেলে আসার জন্য।
এ উপলক্ষে কাঁককে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো ৪০ গ্রাম ওজনের কোন বস্তু জানালার ধারে ফেলে আসা বা নিয়ে আসার জন্য। যেসব ভবনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকতো সেখানে এদেরকে পাঠানো হতো। লেজার দিয়ে কোথায় বস্তুটি ফেলতে হবে সেই টার্গেট বুঝিয়ে দেয়া হতো কাঁককে। আর বাতির সংকেত দিয়ে তাকে ফিরে আসতে বলা হতো।
এবার আসা যাক ডলফিনের কথায়। একে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো পানির নিচের মিশনে। বিশেষ করে সমুদ্র বন্দরের নিচে ঢোকার জন্য। আর ডলফিন দিয়ে হামলার চেষ্টা করে সফলও হয়েছিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাটি পরিযায়ী পাখি দিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করানো যায় কিনা সেই চিন্তাও করেছিল। কুকুরের মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ দিয়ে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিনা সেই গবেষণাও করেছে।
তবে গুপ্তচরের সফল কাজটি করেছে কবুতর। এর আশ্চর্যজনক ক্ষমতা হলো, শত মাইল দূরে অপরিচিত কোন যায়গায় তথ্য ফেলে আসার পরও ঠিক পথ ধরেই বাড়ি ফিরতে পারতো।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় গোপন তথ্য সংগ্রহে কবুতর ব্যবহার করা হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার কবুতর গোয়েন্দা বাহিনী ছিল। যাকে বলা হতো ‘সিক্রেট পিজন সার্ভিস’। এই বিশেষ কবুতর গোয়েন্দা বাহিনীর এক হাজারের বেশি কবুতর সফলভাবে বার্তা নিয়ে ফিরেও এসেছিল।
জার্মানদের রাডার স্টেশন ও রকেট স্থাপনা সম্পর্কে কবুতরের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। ’৭০ এর দশকে টাকানা নামে একটি অভিযানের অংশ হিসেবে কবুতর দিয়ে ছবি তোলার বিষয়টি চিন্তা করা হয়েছিল।
সিআইএ সে সময় কবুতর দিয়ে ছবি তোলার পরীক্ষামূলক অভিযান শুরু করে। ৩৫ গ্রাম ওজনের ক্যামেরা তাদের শরীরে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল। সেই ক্যামেরাগুলো ছিল স্বয়ংক্রিয়। কবুতরের কাজ ছিল সঠিক জায়গা দিয়ে উড়ে যাওয়া। আর তাতেই ক্যামেরায় বন্দি হতো আশপাশের সব দৃশ্য।
১৯৭৬ সালের একটি নথি অনুযায়ী লেনিনগ্রাদের কাছে রাশিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী সাবমেরিন তৈরি করতো, এমন একটি বন্দরকে নির্বাচিত করা হয়েছিল গুপ্তচর কবুতরদের মিশনের জন্য। তবে এই মিশনে কী ধরনের গোপন তথ্য মিলেছিল সে সম্পর্কিত নথিপত্র এখনও গোপনই রয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক সময় মার্কিন নৌবাহিনী মাইন অপসারণের কাজে ডলফিন ব্যবহার করে আসছে। তাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সফলতাও মিলেছে বলে দাবি করছেন মার্কিন এই সংস্থাটি।
এএইচ/