টেরারিয়াম
ঘরের কোনে প্রাকৃতিক নৈস্বর্গ
প্রকাশিত : ১১:৫৯, ২৯ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ২১:১৭, ৪ আগস্ট ২০১৭

শহুরে ইট-কাঠের ঘর বা অফিসে এক খণ্ড প্রাকৃতিক নিসর্গ হচ্ছে টেরারিয়াম। তাই এ সময়ের ঘরগুলোর অভ্যন্তরীণ নকশায় অনেকেই এক কোণে বসিয়ে নিচ্ছেন একটি টেরারিয়াম, যেখানে কাচের একটি স্বচ্চ পাত্রে সামান্য একটু মাটির ওপরেই গড়ে উঠছে বাহারি উদ্ভিদের অনন্য একটি জগত। নুড়ি পাথর বা প্রাকৃতিক উপাদান যুক্ত করে কেউ কেউ এর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে নেন কয়েকগুণ।
এটি ঘরের পছন্দমতো একটা কোণে রেখে দিলে মনে দেয় দেয় শান্তি ও স্নিগ্ধতার পরশ। ব্যস্ত দিন শেষে ক্লান্ত শরীরে সোফায় বসে সবুজাভ টেরারিয়ামের দিকে এক পলক তাকালে সারাদিনের সব ক্লান্তি যেন দূর হয়ে যায়। প্রকৃতির ছোয়া মেলে।
এমন একটি টেরারিয়াম কিন্তু আপনিই তৈরি করে নিতে পারেন নিজের ঘরের জন্য। নানা ধরনের টেরারিয়ামের মধ্যে বেছে নিন সেটিই, যেটি আপনার পছন্দেরটি।
চল এখন টেরারিয়ামের
টেরারিয়াম হচ্ছে স্বচ্ছ কাঁচের পাত্রে বাগান। অনেকটা একুরিয়ামের মত। পার্থক্য শুধু একুরিয়ামে মাছ থাকে আর টেরারিয়ামে মাছ থাকে না, থাকে জীবন্ত গাছ, লতাগুল্ম। টেরারিয়াম যেন বাস্তুসংস্থানের এক ক্ষুদ্র সংস্করণ। কাঁচের পাত্র থেকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গাছ ঢুকানো বা বেরও করা যায়।
কাঁচের জার বা পাত্র ছাড়াও স্বচ্ছ যেকোনো পাত্রের মধ্যে অনায়াসেই টেরারিয়াম করা যায়। টেরারিয়ামে সাধারণত একুরিয়ামের মতই অরনামেন্টাল গাছ রাখা হয়। বদ্ধ কাঁচের পাত্রের টেরারিয়াম গাছের বৃদ্ধির বা বেঁচে থাকার জন্য একটি আদর্শ অনুক‚ল পরিবেশ। স্বচ্ছ কাঁচের দেয়ালের মধ্যদিয়ে তাপ এবং আলো গ্রিন হাউজের মতই প্রবেশ করতে পারে। আবদ্ধ পাত্রে তাপ প্রবেশের কারণে মাটিতে যে পানি শোষিত থাকে তা বাষ্পীভ‚ত হয়ে কাঁচের দেয়ালে জমে থাকে। তা আবার ধীরে ধীরে নিচে নেমে আসে অনেকটা জলচক্রের মত।
ছোট একটি কাচের পাত্র বা বোতলের মধ্যে বিশেষ কিছু গাছ বা লতা-গুল্ম লাগিয়ে ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানোর যে শিল্প, সেটিরই চল এখন। কাচের বোতলে করা হয় বলে অনেকে এটাকে ‘বটল গার্ডেন’ও বলে থাকেন।
যেখানে কিনতে পাওয়া যায়
ঢাকার অভিজাত এলাকায় বিশেষ করে গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডির অভিজাত ফুল বা গাছের দোকানে টেরারিয়াম পাওয়া যায়। পাঁচ তারা হোটেলে কিংবা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে প্রায়ই টেরারিয়াম দেখা যায়। টেরারিয়ামের মূল্য নির্ভর করে অবকাঠামো কিংবা উপাদানের ওপর। তবে যদি নিজে তৈরী করেন তার আকর্ষনই আলাদা।
যা দিয়ে তৈরি করতে হয়
প্রথম দিকে টেরারিয়াম তৈরি করা হতো অভিজাত ধরনের সব পোষা প্রাণী যেমনÑ কচ্ছপ, টিকটিকি ধরনের সরীসৃপের ঘর হিসেবে। পরে ধীরে ধীরে গৃহসজ্জার সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। টেরারিয়াম তৈরিতে লাগে কাচের পাত্র, পাথরকুচি, কাঠকয়লা, মাটি, বিভিন্ন ধরনের ছোট জাতের গাছ, ছোট বেলচা।
তৈরীর পদ্ধতি
*কাচের পাত্রের নিচে ছোট ছোট পাথরের টুকরো দিয়ে দেড় ইঞ্চি পুরু স্তর বানাতে হবে। এর পর দিতে হবে কাঠ-কয়লার স্তর। এই দুটি স্তর অতিরিক্ত পানি শোষন করে নেবে। একই সঙ্গে কাঠ-কয়লা বাতাস চলাচলে সহায়তা করবে।
*পাথর ও কাঠ-কয়লার স্তরের ওপর ব্যবহার করতে হবে মাটির স্তর। তবে এ মাটির স্তরের পুরুত্ব নির্ভর করবে কী ধরনের গাছ লাগাবেন তার ওপর।
*এবার পছন্দমত তিন-চার প্রকারের গাছ লাগিয়ে নূড়ি-পাথর দিয়ে ডেকোরেশান করা যেতে পারে। গাছ পছন্দের ক্ষেত্রে সাকুলেন্ট জাতীয় (যেসব গাছ কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা, পাতা বা মূলে পানি জমিয়ে রাখে) গাছ নির্বাচন করা যেতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফার্ন ও মস রাখা যেতে পারে।
* সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পছন্দ অনুযায়ী প্লাস্টিকের ছোট খেলনা রাখা যেতে পারে।
*সর্বশেষে হালকা পানি দিয়ে নির্ধারিত জায়গায় রেখে দেয়া যেতে পারে।
খরচ
বাহারি নাম শুনে আবার ভাববেন না যে, টেরারিয়াম তৈরিতে অনেক খরচ। আসলে এটা তৈরিতে কতটা ব্যয় করবেন, সেটা নির্ভর করে আপনার ওপর। যেমন টেরারিয়াম তৈরির পাত্রের কথাই ধরুন। এটি তৈরি করতে যেকোনো ধরনের কাচের পাত্র ব্যবহার করতে পারবেন। সেটা বাসার বিস্কুট, চানাচুর রাখার বয়ামই হোক কিংবা বাজার থেকে কিনে আনা দামি বেলজিয়ান কাচের পাত্র। এর ভেতর কী ধরনের দামের গাছ লাগাবেন, সেটা আপনি নিজেই ঠিক করবেন।
কোথায় রাখবেন
টেরারিয়াম রাখার জন্য স্থান সিলেকশনও গুরুত্বপূর্ণ। এটি অবশ্যই ঘরের এমন জায়গায় রাখবেন, যেখানে প্রচুর আলো পাওয়া যায়, এটি টিকে থাকার জন্য যা খুবই জরুরি।