ঘুষের বিনিময়ে ভিসা, বাংলাদেশে ইতালি দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ গ্রেফতার ৫
প্রকাশিত : ১৩:৪৯, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ১৪:১৬, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঘুষ ও অবৈধভাবে ভিসা দেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশে ইতালি দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সংবাদমাধ্যম ব্রাসেলস সিগন্যালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, রোমের পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস ইতালীয় দূতাবাসের কর্মীদের ঘুষ ও অবৈধ ভিসা বাণিজ্যের চক্রের সন্ধান পেয়েছে।
অভিযুক্ত দূতাবাস কর্মকর্তারা ইতালির ব্রাদার্স অব ইতালি (এফডিআই) দলের একজন সংসদ সদস্য, পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য আন্দ্রেয়া দি জিউসেপিকে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তাকে ২০ লাখ ইউরো এবং ইতালিতে সফলভাবে প্রবেশ করার জন্য অভিবাসী প্রতি তাঁদের আয়ের একটি অংশ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ঘুষ না নিয়ে দুর্নীতির এই প্রচেষ্টার রেকর্ডপত্র নিয়ে রোমের প্রসিকিউটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপরই দূতাবাস কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি সামনে আসে।
অভিযোগ অনুযায়ী, অবৈধভাবে কাজের ভিসা বিক্রির এই স্কিমটিতে রোমে একজন বাংলাদেশি উদ্যোক্তা এবং রেস্তোরাঁ মালিক জড়িত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন সহজতর করার জন্য স্থানীয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছিলেন।
রোমের প্রসিকিউটরদের মতে, ঢাকায় তিনজন ইতালীয় কনস্যুলার কর্মী ওই বাংলাদেশির সহযোগী ছিলেন। এই চক্র কাজের ভিসা দেওয়ার বিনিময়ে নগদ অর্থ, উচ্চমানের ইলেকট্রনিকস, বিলাসবহুল ঘড়ি এবং দুবাই ভ্রমণের সমস্ত খরচ বহন করাসহ বিমানের টিকিট এবং কর্মকর্তাদের বন্ধু ও আত্মীয়দের পক্ষে বিভিন্নভাবে ঘুষ দাবি করেন।
প্রসিকিউটরদের মতে, সন্দেহভাজনরা এই অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিতেন। ভিসার জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে তাঁরা বাধ্য করতেন।
এক একটি ভিসা ১৫ হাজার ইউরো পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছিল। যদিও বাংলাদেশি অভিবাসীরা ভিসা পাওয়ার পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ পাননি। কিছু ক্ষেত্রে, ভিসা পাওয়ার জন্য আবেদনে অস্তিত্বহীন কোম্পানির সঙ্গে কাল্পনিক চুক্তিপত্র দেখানো হয়েছে।
ইতালীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোমে ইমিগ্রেশন ডেস্ক থেকে যথাযথ যাচাই না করার কারণে এমন প্রতারণা সম্ভব হয়েছিল। কারণ সেখানে কম্পিউটার সিস্টেমে উল্লেখযোগ্য যাচাইয়ের প্রয়োজন নেই। ফলে অপরাধীরা মিথ্যা বা পরিবর্তিত নথি উপস্থাপনের সুযোগ পেয়েছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, এই জালিয়াতি প্রাথমিকভাবে ঢাকায় ইতালীয় দূতাবাসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে তদন্তকারীরা রোম প্রিফেকচারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সন্দেহভাজন আঁতাত উন্মোচন করেন। ইতালীয় দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তা ভিসা ক্লিয়ারেন্স ত্বরান্বিত করার জন্য ঘুষ নিয়েছিলেন বলে ধারণা করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
তদন্তে নেপলস প্রিফেকচারের সঙ্গে সন্দেহজনক যোগাযোগের প্রমাণও পাওয়া গেছে।
এই চক্রে জড়িত কনস্যুলার স্টাফদের মধ্যে দুই মূল ব্যক্তি ছিলেন: বাংলাদেশে ইতালীয় দূতাবাসের ভিসা বিভাগের সাবেক প্রধান এবং একজন দূতাবাসের সাবেক এক কর্মী যিনি তুরস্কে স্থানান্তরিত হওয়ার আগে ঢাকায় ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বে ছিলেন। প্রসিকিউটরদের মতে, উভয়েরই ভিসা আবেদন সিস্টেমে সরাসরি অ্যাকসেস ছিল।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ইতালীয় কর্তৃপক্ষ দূতাবাস কর্মকর্তাসহ পাঁচজন সন্দেহভাজনকে আটক করে।
এরপর দুজন সরকারি কর্মকর্তাকে গৃহবন্দী করা হয়েছে। দুজন বাংলাদেশিকে দুর্নীতিতে প্ররোচনা, দুর্নীতি এবং অবৈধ অভিবাসনে সহায়তা ও প্ররোচনার অভিযোগে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তদন্তকারী কৌঁসুলিদের মতে, সন্দেহভাজনরা একটি অবৈধ কার্যকলাপ সংগঠিত করেছেন। এটি ঘৃণ্য, গুরুতর, অসহায় এবং দুর্বল আর্থিক অবস্থায় মানুষের কাছ থেকে সুবিধা আদায়ের মতো অপরাধ।
জার্মানিতেও গত ১৯ ফেব্রুয়ারি একই ধরনের ঘটনা ধরা পড়েছে। সেখানে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটস (সিডিইউ) এবং সোশ্যালিস্ট পার্টির (এসপিডি) বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ ভিসার বিনিময়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাচারকারীদের একটি গ্যাং প্রধানের কাছ থেকে অবৈধভাবে প্রবেশ করা পরিবার প্রতি ১০ হাজার ইউরো পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।
এসএস//
আরও পড়ুন