চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানী জাহাজ, ভারতীয় মিডিয়ায় আগুন
প্রকাশিত : ১৫:২৫, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন দিক সূচিত হয়েছে বলে অনেকে অভিমত দিয়েছেন। এর কারণ, সম্প্রতি পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী করাচি থেকে একটি পণ্যবাহী জাহাজ সরাসরি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে। ১৯৭১ সালের পর এটিই প্রথম কোনো পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজের বাংলাদেশে নোঙর করার ঘটনা।
করাচির সঙ্গে চট্টগ্রামের এই সমুদ্র সংযোগকে অনেকে ঐতিহাসিক বলেও অভিহিত করেছেন। তবে ভূ-আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতের চিরশত্রু বলে বিবেচিত পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের এই সম্পর্ককে খুব ভালো চোখে দেখছে না নরেন্দ্র মোদী সরকার। আর তার প্রভাব পড়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। করাচীর জাহাজ চট্টগ্রামের নোঙর করার প্রসঙ্গটিকে তারা নানাভাবে সমালোচনা করছে দেশটি সংবাদমাধ্যমগুলো।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, একটি পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ গত সপ্তাহে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করেছে, যা পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে প্রথম সরাসরি সামুদ্রিক যোগাযোগ। করাচি থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছানো জাহাজটি সফলভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে কন্টেইনারগুলো আনলোড করেছে। মূলত অতীতের হিমশীতল সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে উভয় দেশই নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক পুনর্গঠন করতে চায়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও মোংলা বাংলাদেশের প্রধান দুই বন্দর। গত পাঁচ দশকে এখানে পাকিস্তান জায়গা পায়নি। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হতো সিঙ্গাপুর ও কলম্বোর মাধ্যমে। কিন্তু এখন পাকিস্তানি জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। আপনি বলতে পারবেন না পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রামে নিষিদ্ধ জিনিস (অস্ত্র) আসবে না। আর সেগুলো সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে যাবে না।
২০০৪ সালের দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার কথা উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ট্রলারে করে আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল উলফার জন্য ১ হাজার ৫০০ চাইনিজ অস্ত্র পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেগুলোর উলফার হাতে যাওয়ার আগেই জব্দ করা হয়।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের এ দুটি বন্দর থেকে চীনকে দূরে রেখেছিল।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া আরও বলছে, মিয়ানমারে এখন টালমাটাল অবস্থা। ভারতের শঙ্কা মিয়ানমার থেকে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং মাদক কারবার বেড়ে যেতে পারে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সরকারি কোনো সূত্রের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়নি। যদিও দুই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র বলেছেন, গত বছর মোংলা পোর্টের টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে চীনের ওপর একটি কৌশলগত জয় পেয়েছিল ভারত। কিন্তু এখন পাকিস্তান চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে। এই বিষয়টি অবশ্যই এই অঞ্চলের ভূরাজনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে। কারণ মিয়ানমারও চট্টগ্রামের খুব কাছে।
অন্যদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানি কার্গো জাহাজের নোঙর করার বিষয়টি ঐতিহাসিক পরিবর্তনের প্রতীক। এটি পাকিস্তান-বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত জটিল কূটনৈতিক সম্পর্কে উষ্ণতার নতুন দিগন্তের সূচনা করছে। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে এই উষ্ণতার সূচনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের করাচি থেকে ছেড়ে আসা ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ নামের ওই জাহাজটি গত ১৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে এসে ভিড়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পণ্য খালাস হয়ে গেলে পরদিনই জাহাজটি বন্দর ত্যাগ করে। ‘দুবাই টু চট্টগ্রাম’ রুট ধরে আসা জাহাজটির পরবর্তী গন্তব্য ইন্দোনেশিয়া। নতুন এই সার্ভিসটি চালু করেছে দুবাইভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাহাজটি পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পণ্য নিয়ে এসেছিল, যার মধ্যে বাংলাদেশের প্রধান পোশাক শিল্পের কাঁচামাল এবং মৌলিক খাদ্য সামগ্রী রয়েছে।
এসএস//
আরও পড়ুন