ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

চবি ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে?

প্রকাশিত : ১০:৪৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১০:৪৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সম্প্রতি ছাত্রলীগ নেতাদের তাণ্ডবে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। টেন্ডারবাজিসহ দলের আধিপত্যকে বিস্তার করে গত কয়েকদিন ধরেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনটি। তবে এর দায়ভার নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতারা।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের অন্যতম প্রধান কারণ টেন্ডারবাজি। বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন মূলক যত কাজ হয়েছে, তার সব কটিতেই টিকাদারির ভাগ বসিয়েছেন দলের সিনিয়র নেতারা। শুধু তাই নয়, ছাত্রলীগের বর্তমান নেতাদের ব্যবহার করে চবি ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন সাবেক নেতা এসব টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, ছাত্রদলের সাবেক নেতারাও টেন্ডার পেতে দৌড়ঝাপ করেছেন অতীতে।

এরইমধ্যে খোদ ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্যেই বেশ কয়েকটি গ্রুপ টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে। তাই এসব নেতার নির্দেশেই চবি ছাত্রলীগের বড় একটি অংশ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এত ব্যহত হচ্ছে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। বারবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও, থামানো যাচ্ছে না চবি ছাত্রলীগকে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই চবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

কমিটি বিলুপ্ত হলেও চবি ছাত্রলীগের নেতারা চলছেন চবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের নির্দেশে। বিশেষ করে টেন্ডারের ভাগ পাওয়ার আশায় বর্তমান ছাত্রলীগ লাইনচ্যূত হচ্ছেন বলে মনে করছেন দলটির বেশ কয়েকজন নেতা। আর টেন্ডার পেতে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি মাথায় রাখেন তারা, তা হলো আধিপত্য। যে গ্রুপ যত শক্তিশালী, সে গ্রুপ টেন্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে তত অগ্রগামী। এই মন্ত্রই বারবার চবি ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধিয়েছে বেশিরভাগ।

এরই অংশ হিসেবে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। একটি পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন চবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু। অন্যটির নেতৃত্বে রয়েছেন ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন। সংঘর্ষে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আহত হন। এরপরই রাতে হলে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বেশ কয়েকজন ছাত্রকে আটক করে। উদ্ধার করে দুটি কাটা রাইফেলসহ বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র।

ঘটনার পরের দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেয় ছাত্রলীগের একটি অংশ। পরদিন ২০ ফেব্রুয়ারি চবি শাটল ট্রেনের হুইস পাইপ কেটে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা। শুধু তাই নয়, প্রক্টরের কার্যালয়সহ ৬টি শেণিকক্ষ এবং শিক্ষকবাসসহ ১৫টি যানবাহন ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগ নেতারা। এসময় তারা প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন।
ওই অংশটির নেতৃত্বে আছেন আলমগীর টিপু।

জানা গেছে, আবাসিক হলের সম্প্রসারণের জন্য ২০ কোটি টাকার টেন্ডারকে সামনে রেখে সংঘর্ষে জড়ায় দুটি পক্ষ। এদিকে টেন্ডার পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেদ চৌধুরী। আর আলমগীর টিপুর নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি বর্তমানে খালেদ চৌধুরীর হয়ে টেন্ডারবাজিতে অংশ নিচ্ছে বলে জানা গেছে। বিপরীতে ফজলে সুজনের গ্রুপও আরেক সাবেক ছাত্রলীগ নেতার হয়ে টেন্ডার পেতে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে জীববিজ্ঞান অনুষদের তৃতীয় পর্যায়ের সম্প্রসারণের কাজ না পাওয়ায় খালেদ চৌধুরীর অনুসারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর ফজলের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এসময় তাঁর কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। তছনছ করা হয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর ৯৫ কোটি টাকার টেন্ডারকে কেন্দ্র করে খুন হন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ও চবি ছাত্রলীদের সাবেক নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী। ওই মামলায় আলমগীর টিপুসহ তার বেশ কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা চলছে আদালতে। এ ছাড়া ওই মামলায় চবির এক সহকারি প্রক্টরকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এম এ খালেদ চৌধুরী জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ আর বিশৃঙ্খলার ঘটনায় যারা জড়িত, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা। চবি ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছেন তিনি এমন অভিযোগও অস্বীকার করেন চবি ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা।

এমজে/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি