ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

চারুকলায় চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি

প্রকাশিত : ১৯:১৯, ১৫ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৯:২২, ১৫ মার্চ ২০১৮

শুরু হলো বাংলা পঞ্জিকার শেষ মাস চৈত্র। বাজছে নতুন বঙ্গাব্দের আগমনী বার্তা। ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে নতুন বাংলা বছর ১৪২৫ বঙ্গাব্দ বরণের নানামুখী তৎপরতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নতুন রঙে আর আঁকিবুকিতে চলছে এ বর্ষ বরণের আমেজ। প্রতিবারের মতো এবারও তা পালনের জন্য প্রস্তুতি কাজের উদ্বোধন করেছে জাতীয় বৈশাখ উৎযাপন পরিষদ। 

চারুকলা ইনস্টিটিউটে দেশবরেণ্য শিল্পী রফিকুল নবী ক্যানভাসে ছবি এঁকে এবং প্রবাসী শিল্পী মনিরুল ইসলাম রং তুলির মাধ্যমে ছবি এঁকে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন আজ বৃহস্পতিবার। এ সময় চারুকলা অনুষদের ডিন ও জাতীয় বৈশাখ উৎযাপন পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক  শিল্পী নিসার হোসন, শিশির ভট্টাচার্যসহ চারুকলা অনুষদের ছাত্র-চাত্রী ও শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, আগামী ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত দেশ বরেণ্য শিল্পীরা এবং চারুকলা অনুষদের ছাত্র-শিক্ষকরা ছবি আঁকা, সরা চিত্র ও মুখোশসহ নানা ধরণের হাতের কাজ তৈরি করবে। এসবের বিক্রয়লব্ধ অর্থে লোকজ আঙ্গীকে বিশালকার রঙিন ভাস্কর্য নির্মাণ করবে। এসবের মধ্য দিয়ে আগামী মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৪২৫ এর জন্য প্রস্তুত হবেন।

এদিকে ইনস্টিটিউটে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রস্তুতি কার্যক্রম আজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও বৈশাখের প্রস্তুতি তার আগেই শুরু হয়েছে। সেই সুবাদে নতুন রং লেগেছে শিল্পাচার্য জয়নুলের স্মৃতিধন্য সবুজ-শ্যামল আঙিনায়। নববর্ষের মাসখানেক আগেই যেন এখানে হাজির হয়েছে পয়লা বৈশাখ। বাঙালীর প্রাণের উৎসবকে বরণ করতে সচল হয়েছে শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়। ছড়িয়েছে প্রাণে দোলা দেয়া ঢাক-ঢোলের মুখর শব্দধ্বনি। আর এসব কিছুর মধ্যে প্রকাশিত হচ্ছে কল্যাণের বারতা দেওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। এবারও অনুষদের চারুশিক্ষার্থী ও শিক্ষক শিল্পীদের নিবিড় প্রয়াসে বের হবে এই শোভাযাত্রা। অশুভকে হটিয়ে মঙ্গলালোকে সিক্ত হবে লাল-সবুজের বাংলাদেশ।

বরাবরের মতো বাংলার লোকজ সংস্কৃতির সকল অনুষঙ্গই যুক্ত হবে নববর্ষ উৎযাপনের সবচেয়ে বেশি রঙ ছড়ানো এ আয়োজনে। তবে এখনও নির্ধারিত হয়নি শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য বা বিষয়। একইভাবে শোভাযাত্রার মূল অনুষঙ্গ শিল্প কাঠামোর সংখ্যাও নির্ধারণ হয়নি। এসব নিয়ে চলছে ভাবনা। এরই মাঝে শোভাযাত্রার খরচ তুলতে শুরু হয়ে গেছে অর্থ সংগ্রহের কাজ। আগামী ১৩ এপ্রিল, চৈত্রসংক্রান্তির দিন পর্যন্ত চলবে এ প্রস্তুতি পর্ব।

প্রথম চৈত্রের দুপুরে চারুকলা অনুষদে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ছবি আঁকাআঁকির দৃশ্য। শোভাযাত্রার ব্যয় মেটাতে চারুশিক্ষার্থীরা টেবিলে ছড়িয়ে দিয়েছে রংয়ের কৌটা। সেগুলো থেকে রং তুলে চলছিল চিত্রকর্ম সৃজন। এই শিল্প সৃজনের মাঝে কথা হয় অনুষদের অঙ্কন বিভাগের ছাত্র রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ওই ছাত্র বলেন, আমরা শুরু করে দিয়েছি। এটা আমরা অনুশীলন হিসেবে নিচ্ছি। আঁকার অনুশীলন আমাদের সব সময়ে চলে। তবে বৈশাখ উপলক্ষ্যে সবার-ই ইচ্ছা হয় নতুন ও আকর্শণীয় কিছু আঁকতে। যেহেতু এটা শৈল্পিক বিষয়। তাই আগে থেকেই সময় নিয়ে শুরু করেছি। প্রতিবারের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে। আমিও সেখানে অংশ নেবো।

প্রসঙ্গত, বিশ্ব ঐতিহ্যে পরিণত হওয়া চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রাটি প্রথম যাত্রা করে ১৯৮৯ সালে। প্রথম বছরে নববর্ষ উৎসব উদযাপনকারীদের নজর কেড়ে নেয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। প্রথম শোভাযাত্রায় ঠাঁই পায় পাপেট, ঘোড়া ও হাতির শিল্পকাঠামো। পরের বছরে চারুকলার সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এ শোভাযাত্রায়ও নানা ধরনের শিল্পকর্মের প্রতিকৃতি স্থান পায়। এরপর থেকে এটা বাংলা বর্ষবরণের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এই আনন্দ শোভাযাত্রা নাম বদলে পরিণত হয় মঙ্গল শোভাযাত্রায়। ২০১৬ সালের ৩০ নবেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

আরকে// এআর

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি