ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

চিকিৎসাশাস্ত্রে গেল বছরের সেরা আবিষ্কারসমূহ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৫৫, ১ জানুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ১২:৫৮, ১ জানুয়ারি ২০২০

প্রতিবছরের ন্যায় ২০১৯ সালেও বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন আবিষ্কার ঘটিয়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব কিছু আবিষ্কার মানব স্বাস্থ্যের জন্য বেশ কার্যকর হয়েছে। গেল বছরটিতে নিরাময় অযোগ্য অসুখ সারানোর উপায় বের করা থেকে শুরু করে মৃত্যুর পরেও মস্তিষ্ককে বাঁচিয়ে রাখার রাস্তা খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। 

এবার জেনে নেওয়া যাক ২০১৯ সালে যেসব আবিষ্কার চিকিৎসা শাস্ত্রে অভূতপূর্ব সারা ফেলেছে, সে সম্পর্কে...

প্যারালাইসিস সারানোর উপায়
পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষ যেন তাদের হাত ও বাহু নাড়া-পাড়া করতে পারে সেজন্য তাদের শরীরের নার্ভ বা স্নায়ুগুলোকে 'রিওয়্যার' করা হয়েছে বা পুন:সংযোগ দেয়া হয়েছে। এর ফলে অস্ট্রেলিয়ার অনেক রোগী এখন নিজে নিজেই খেতে পারছে, মেক-আপ করতে পারছে, তালায় চাবি ঘুরিয়ে খুলতে পারছে, টাকা গুণতে পারছে এবং কম্পিউটারে টাইপও করতে পারছে।

মস্তিষ্কের গুরুতর রোগের ওষুধ
মস্তিষ্কের দুরারোগ্য রোগ 'ব্যাটন ডিজিস'। এই গুরুতর রোগে আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসকরা এমন একটি ওষুধ বানিয়েছেন এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে। ডিএনএ'র জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে জেনেটিক কোড বের করে রোগের কারণও বের করতে সক্ষম হয়েছেন চিকিৎসকরা। 

জিন-সাইলেন্সিং ওষুধ
নিরাময় অযোগ্য অসুখের চিকিৎসা করতে জিন-সাইলেন্সিং নামের নতুন ধরনের একটি ওষুধ আবিষ্কার করা হয়েছে। পরফিরিয়ায় আক্রান্তরা এই ওষুধের মাধ্যমে ভাল হচ্ছেন। এছাড়া ভিনসেন্ট ও নীল নিকোলাসও এমিলোইডোসিস রোগের চিকিৎসা হচ্ছে জিন-সাইলেন্সিং ওষুধ দিয়ে।

রোগ সারাতে ভাইরাস
গুরুতর ব্যাকটেরিয়ার কারণে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হয়েছে ভাইরাসের সমন্বয় ঘটিয়ে। গ্রেট ওরমোন্ড স্ট্রিট হসপিটালের ডাক্তাররা 'ফেজ থেরাপি' বলে একধরনের ভাইরাস ব্যবহার করে ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত ইনফেকশন বা সংক্রমণ দূর করেছেন। 

ক্যান্সারের নতুন ওষুধ
ক্যান্সারের নতুন আবিষ্কৃত বৈপ্লবিক ওষুধটি হলো লেরোটেকটিনিব। এই নামের ওষুধটি এখন ইউরোপ জুড়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। জেনেটিক অস্বাভাবিকতা আছে এমন টিউমারগুলোকে লক্ষ্য করে এই ওষুধটি বানানো হয়েছে। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে রোগীর ইমিউন সিস্টেম বা নিজের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এই ওষুধ ব্যবহৃত হয়।

ডিমেনশিয়া ঠেকাতে নতুন ওষুধ
আলঝেইমার বা স্মৃতিভ্রমের মতন রোগের তীব্রতাকে কমিয়ে দিতে পারে এমন ওষুধ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী একটি কোম্পানি। এই কোম্পানির 'এডুকেনাম্ব' নামের ওষুধটি মানুষের মস্তিষ্কের ভেতরে জমা বিষাক্ত প্রোটিন দূর করতে পারে। এই ওষুধ সেবনে স্মৃতি ও শব্দ মনে রাখাসহ দৈনন্দিন কাজকর্ম সবই করা সম্ভব।

নতুন ধরনের ডিমেনশিয়া
ডিমেনশিয়া হচ্ছে মস্তিষ্কের অনেক রোগের উপসর্গ এবং স্মৃতি ভুলে যাওয়াটাই এর প্রধান লক্ষণ। আলঝাইমার হলো ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে 'কমন' বা পরিচিত ধরন। এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের ডিমেনশিয়া রয়েছে যেমন ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া, ডিমেনশিয়া উইথ লিউই বডিস, ফ্রন্ট টেম্পোরাল ডিমেনশিয়া, পার্কিন্সন ডিজিস ডিমেনশিয়া ইত্যাদি। এই তালিকায় নতুন যুক্ত হলো 'লিম্বিক-প্রিডোমিনেন্ট এজ রিলেটেড টিডিপি-৪৩ এনসিফেলোপেথি' বা সহজভাবে বললে 'লেট'।

মৃত্যুর পরেও জীবিত শূকরের মস্তিষ্ক
একটি শূকরকে জবাই করার প্রায় ঘণ্টা চারেক পর তার মস্তিষ্কের একটি অংশকে পুনরায় জীবিত করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মস্তিষ্কের কোষের মৃত্যু প্রক্রিয়া আটকে দিয়ে মস্তিষ্কের কিছু অংশের যোগাযোগ পুনরায় স্থাপন করা সম্ভব বলে মনে করছেন গবেষকরা। এই আবিষ্কার মস্তিষ্কের চিকিৎসায় নতুন পথ খুলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ডিএনএ-কে সম্পাদনা করার নয়া প্রযুক্তি
ডিএনএতে থাকা যে কোডের কারণে নানান রোগ-বালাই হয় সেগুলো ৮৯ শতাংশ পর্যন্ত সারানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন এই প্রযুক্তির নাম 'প্রাইম এডিটিং'। প্রাইম এডিটিং-কে 'জেনেটিক ওয়ার্ড প্রসেসর' বলে অভিহিত করা হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, প্রাইম এডিটিং দিয়ে সম্পাদনার মাধ্যমে দশটার মধ্যে ৯টাই সারিয়ে তোলা সম্ভব।

মানুষের চিন্তাকে কণ্ঠদান
বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরনের ব্রেইন ইমপ্ল্যান্ট পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যেটি মানুষের মনকে পড়তে পারে এবং সেটিকে কথায় রূপান্তর করতে পারে। এই পদ্ধতিতে প্রথমে একটি 'ইলেক্ট্রোড' মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপন করা হয়। এই ইলেক্ট্রোডের কাজ হচ্ছে মানুষের ব্রেন থেকে ইলেক্ট্রনিক সিগন্যাল বা বৈদ্যুতিক নির্দেশনা গ্রহণ করে সেটি ঠোঁট, গলা, কণ্ঠনালী ও চোয়াল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া। তারপর শক্তিশালী কম্পিউটারের মাধ্যমে এই মুখ ও গলার মুভমেন্ট বা নড়াচড়া প্রত্যক্ষ করে বিভিন্ন শব্দ উৎপন্ন করা সম্ভব।

সিগারেট ছাড়তে ই-সিগারেট
বিশেষজ্ঞরা ই-সিগারেটকে প্রকৃত সিগারেট বা তামাকের চেয়ে নিরাপদ বলে বর্ণনা করছেন। পাশাপাশি ই-সিগারেট খেলে সিগারেট বা ধূমপান সহজে ছাড়া সম্ভব বলেও মনে করছেন তারা। ইংল্যান্ড মেডিকেল জার্নালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান ছাড়ার পন্থা হিসেবে যারা ই-সিগারেট ধরেছিল তাদের ১৮ শতাংশই সফল হয়েছে। কিন্তু যারা প্রথাগতভাবে নানান পন্থা অবলম্বন করে ধূমপান চাড়তে চাইছিল তাদের মধ্যে এই মাত্রা ছিল ৯.৯ শতাংশ।

এছাড়া ২০১৯ সালে আর যেসব আবিষ্কার ঘটেছে-
* মায়ের গর্ভাবস্থাতেই শিশুদের হার্ট বা হৃৎপিণ্ডের একটি ছবি প্রকাশ করে গবেষকেরা সাড়া জাগিয়েছেন।

* হামের কারণে শরীরের ইমিউন সিস্টেমের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে যা ইনফেকশন বা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষেত্রে মানুষের শরীরকে দুর্বল করে দেয়।

* বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করে মানুষের সহ্যশক্তির সীমানা নির্ধারণ করেছেন। তাদের মতে, মানুষের সহ্য-ক্ষমতা ৩০০০-মাইল দৌড়ের সমান, যা টুর ডে ফ্রান্স এবং অন্যান্য অভিজাত ইভেন্টের সমান।

* অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কলা, বাদাম ও ছোলার সমন্বয়ে বানানো ডায়েট অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

* মানব-মস্তিষ্কের উপর করা নতুন এক গবেষণার তথ্য বলছে, সারা জীবন ধরে মানুষের মস্তিষ্কের নতুন সেল তৈরি হতে থাকে।

* হার্ট অ্যাটাকের পরে স্টেম সেলের যে ক্ষতি হয় সেগুলোকে সারিয়ে তোলার ক্ষেত্রে 'পাম্পিং প্যাচ' গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

* বিজ্ঞানীরা ক্যান্সারকে ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে চিকিৎসার নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। 
সূত্র : বিবিসি

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি