চুয়াডাঙ্গায় নিরাপত্তাবেষ্টনী ছাড়াই চলছে প্রকল্পের কাজ
প্রকাশিত : ১২:২১, ২৬ অক্টোবর ২০২৩
যানজট কমানো ও নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপনসহ নানা কারণে চুয়াডাঙ্গায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু কোনো ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করেই ওই নির্মাণকাজ চলছে। এমনকি ওভারপাস নির্মাণকাজে নিয়োজিত সুরক্ষা সরঞ্জামও দেওয়া হয়নি। এতে ওই এলাকায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় অবস্থান করে দেখা যায় শহর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে পাইলিংয়ের জন্য খননের কাজ চলছে। পাইলিংয়ের গর্ত থেকে ওঠা কাদাপানিতে যাতায়াতের রাস্তা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। ক্রেন দিয়ে ৪০ ফুট লম্বা লোহার খাঁচা পাইলিংয়ের গর্তে ঢোকানো হচ্ছে।
সাধারণত এ ধরনের নির্মাণকাজ যেখানে চলে সেখানে বিপদ এড়াতে নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া হলেও এখানে তা করা হয়নি।
ব্যস্ততম মেহেরপুর-ঢাকা মহাসড়কে চুয়াডাঙ্গা শহরে নিরাপত্তাবেষ্টনী ছাড়া খোলা জায়গায় এক মাসের বেশি সময় ধরে ওভারপাসের পাইলিংয়ের কাজ করা হচ্ছে। বিশাল বিশাল এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) ও ক্রেনে করে পাইলিংয়ের লোহার খাঁচা স্থানান্তর ও বসানোর কাজ করা হলেও শ্রমিকদের সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
এতে এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহন, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারীদের পাশাপাশি শ্রমিকেরাও চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০ অনুযায়ী নির্মাণকাজের সময় শ্রমিকদের পোশাক থেকে শুরু করে সবই হতে হবে নিরাপত্তাবান্ধব। বিশেষ করে মাথায় হেলমেট ও পায়ে বুটসহ পরনে ঢিলেঢালা পোশাক। কিন্তু, এসব ছাড়াই শ্রমিকেরা দিনের পর দিন কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় অনেকেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা এবং হতাহতের আশঙ্কা করেছেন।
এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনার কারণে নির্মাণ এলাকায় সড়কে চলাচলে চরম ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আমি নিজেও ভুক্তভোগী হিসেবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবগত করেছিলাম। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করলেও কেন সমাধান হয়নি, সে বিষয়ে আজ কথা বলব। সেই সঙ্গে নির্মাণ বিধিমালা মানতে যা যা করার করা হবে।’
এই বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। নির্মাণকাজের জন্য যতটুকু জায়গা প্রয়োজন, তা পাওয়া যাচ্ছে না। সড়কের উভয় পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটি রয়েছে। এ অবস্থায় নিরাপত্তাবেষ্টনী দিলে সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। তাতে যানবাহন ও সাধারণের চলাচল ব্যাহত হবে। ফলে দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে।
এ বিষয়ে সওজের চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেন, ‘বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো সরিয়ে নিতে ওজোপাডিকোকে (পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড) বলা হয়েছে। খুঁটি সরিয়ে নিলে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি ও সড়কের কাঁচা জায়গায় ইটের সলিং করে দেওয়া হবে। শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নজরদারিতে আছে।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৮ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ দরপত্র আহ্বান করে। ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (এনডিই) নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়।
চলতি বছরের ১৫ জুন কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০২৫ সালের জুলাই মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ করার কথা। এই কাজের জন্য ৭৫ কোটি ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার গত ১২ আগস্ট শহরের রেলবাজারে রেলওয়ে ওভারপাসের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।
এএইচ
আরও পড়ুন