ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ছাত্রজীবন সুখের জীবন যদি না থাকে এক্সামিনেশন!

আবেদা সুলতানা

প্রকাশিত : ২০:৩৫, ১১ জুলাই ২০২০

আবেদা সুলতানা

আবেদা সুলতানা

Ekushey Television Ltd.

প্রচলিত একটি কথার ভাব নিয়েই আজকের এই সমীকরণ। আসলে ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি পরীক্ষার একটা চাপ আর ভীতি প্রতিটি ছাত্রের ওপর থাকতো। কারণ পরীক্ষার জন্য পড়তে হবে, পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে এলেই মনে হতো আকাশ সমান পড়া জমে গেছে। কি পড়ব আর পরীক্ষায় বা কি লিখব। এসব ভাবনা চিন্তা করতে করতে মনে হতো ইস! যদি জীবনে পরীক্ষাই না থাকতো, তাহলে কতোই না ভালো হতো।

এই ভাবনাটাই আজ বাস্তবে রুপ দিচ্ছে ভয়াবহ করোনা ভাইরাস। যার কারণে আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে গেছে। থমকে গেছে পড়ালেখা। বন্ধ হয়ে গেছে পরীক্ষা। যে পরীক্ষায় পাশ করে এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে চলে যাওয়া। এসএসসির গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে পর্দাপণ করা। এই কৌতুহলগুলো থেমে যাচ্ছে মন থেকে। মন শুধু ভাবাচ্ছে আসলেই কি আমি পরীক্ষা দিতে পারবো! পরের অবস্থানে যেতে পারব! নাকি এভাবেই ঘরে বসেই জীবন কাটিয়ে দিতে হবে! 

এসব ভাবনা চিন্তা না ভেবে মূলত বিদ্যা অর্জন করাটাই এখন মূখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর। শিক্ষা জীবন মানেই পরীক্ষা! এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে, ঘরে বসে বইয়ের শিক্ষা অর্জন করতে হবে। কারণ পাঠ্য বইয়ের শিক্ষা আর পরীক্ষা দিয়ে ডিগ্রি অর্জন করাটাই মূখ্য নয়। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথা চিন্তা করে আমাদেরকে ঘরে বসেই পড়তে হবে। লিখিত পরীক্ষা না দিয়েও যে পড়ালেখা করা যায়, সে ভাবনাটা মাথায় আনতে হবে।

আমাদের দেশে পরীক্ষা বলতে যা বোঝায়- তা সাধারণত মূল্যায়নের একটি কৌশল। আরও সহজভাবে বলতে গেলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মূল্যায়ন বলতে আমরা সাধারণত লিখিত পরীক্ষাকেই বুঝে থাকি। তবে শিক্ষা হলো ব্যক্তির আচরণের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন যা জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ব্যক্তির এই আচরণ ও বিকাশ কতটা, কীভাবে সংগঠিত হয় তা জানার জন্য প্রয়োজন হয় মূল্যায়নের। যে মূল্যায়নের সাহায্যে শিক্ষার সামগ্রিক উদ্দেশ্য অর্জনে শিক্ষার্থী কতটুকু সফল হয়েছে বুঝতে পারা যায়। মূল্যায়নই শিক্ষাব্যবস্থাকে গতিশীল ও ত্বরান্বিত করছে। আর এই মূল্যায়ন প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে- গাঠনিক ও সামষ্টিক।

যে মূল্যায়ন ব্যবস্থা কোনো কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত চলে এবং অভীক্ষার ফলাফলের ওপর ফলাবর্তনের মাধ্যমে শিখন-শেখানো কার্যক্রমকে উন্নত করতে পারে তাই গাঠনিক মূল্যায়ন। গাঠনিক মূল্যায়নের ধরনগুলোর মাঝে আছে শ্রেণির কাজ, শ্রেণিপরীক্ষা, শ্রেণীকক্ষে মৌখিক প্রশ্ন, সাপ্তাহিক পরীক্ষা, মাসিক পরীক্ষা, ষান্মাসিক পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, বাড়ির কাজ, টার্ম পেপার ইত্যাদি।

আর কোনো কার্যক্রম শেষে কার্যক্রমের সামগ্রিক ফলাফল, এর প্রভাব ও অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ণয়ের জন্য যে মূল্যায়ন করা হয়- তাই সামষ্টিক মূল্যায়ন। এই মূল্যায়নের অভীক্ষার ফলাফলের ওপর ফলাবর্তন প্রদান করা হয় না। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সামষ্টিক মূল্যায়নের তিনটি ধরন দেখা যায়- লিখিত অভীক্ষা (রচনামূলক ও নৈর্ব্যক্তিক), মৌখিক অভীক্ষা (ভাইভা, সাক্ষাৎকার) ও ব্যবহারিক অভীক্ষা।

শিক্ষার্থীরা সাধারণত যে পরীক্ষাগুলোর কথা শুনলে ভয় পায়, তা হলো- দুইটি সাময়িক পরীক্ষা এবং একটি বার্ষিক অথবা সমাপনী পরীক্ষা অর্থাৎ লিখিত পরীক্ষা। এই ভয় শুধু যে স্কুল-কলেজে ছিল তাই না, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসেও দেখতে পাই- ইনকোর্সের ভয়ে আমরা ভীত থাকতাম। একটি শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলছে কিনা, এর উদ্দেশ্য কতটা সফল হলো, তা জানার যখন আরও অনেক ধরন (বাড়ির কাজ, শ্রেণির কাজ, মৌখিক প্রশ্ন-উত্তর, ব্যবহারিক কাজ) আছে; তবে এই পরীক্ষা নামক জুজুর ভয় কেন আমাদের পোহাতে হবে? মূল্যায়নের বেশ কিছু কৌশল আমরা শিক্ষাবিজ্ঞানে দেখতে পাই, যার অনেকগুলোই মজার। যা শ্রেণিকক্ষে ব্যবহার করলে মূল্যায়নের উদ্দেশ্যেও সফল হবে আবার শিক্ষার্থীরাও মজা পাবে।

উদাহরণস্বরূপ, প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য কিছু খেলার কথা বলা যেতে পারে, যার দ্বারা সহজেই কোনো বিষয় সম্পর্কে কতটুকু বুঝতে পারল তা যাচাই করা যায়। বাস্তব কাজের মাধ্যমে দেখা যেতে পারে কতটুকু শিখতে পেরেছে (যেমন, ঘরে খেলার মাধ্যমে ও গণিত শেখার মূল্যায়ন করা)।

আরেকটু বড় শ্রেণিতে বেশি বেশি কুইজ, ঘরে বসে পরীক্ষা বাড়ির কাজ দেয়া, মৌখিক প্রশ্ন করা ইত্যাদির ব্যবস্থা বেশি করা। 

বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বেশি বেশি উপস্থাপনা, ব্যবহারিক ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, খোলা বই পরীক্ষা, বাস্তব কাজের সাথে জড়িত করে মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা যাতে গতানুগতিক পরীক্ষার সংখ্যা বেশ কমে যায়। এতে যেমন পরীক্ষা দেওয়া  কমবে, সাথে সাথে নানামুখী কাজের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ জীবনে চলার পথও মসৃণ করবে।

হয়তো সামনে সেই দিন আসবে যেদিন শিক্ষার্থীদের আর বলতে হবে না, ছাত্রজীবন সুখের জীবন যদি না থাকে এক্সামিনেশন! হয়ত সেই দিনে তারা লিখিত ছাড়া যে কয়টি পরীক্ষা দিবে, তা আনন্দের সাথেই দিবে- এই আশাটুকুর বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

লেখক: কবি, শিক্ষিকা ও সাংবাদিক।

এনএস/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি