‘ছাত্র-জনতার বিপ্লব রোমান্টিক রেভ্যুলেশন’
প্রকাশিত : ১৭:৪২, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার বিজয় একদিন পৃথিবীর ইতিহাসে রোমান্টিক রেভুলেশন হিসেবে আখ্যায়িত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তি ও দেশবরেণ্য জাতীয় নেতা অলি আহাদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মঈন খান বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লব যদি সত্যিকার অর্থে কার্যকর করতে চাই, সেটি যদি দেশের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের পথে প্রবাহিত করতে চাই, তাহলে আজকের প্রজন্মকে ভাষাসৈনিক অলি আহাদের আদর্শ থেকে কিছু নিতে হবে। এ সময় অলি আহাদের রাজনৈতিক বর্ণাঢ্য ইতিহাস সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেন তিনি।
মঈন খান বলেন, ছাত্রদের হাত ধরেই ভাষা আন্দোলন, এর মধ্য দিয়েই ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৯০-এর আন্দোলনও এরই ফসল, সর্বশেষ ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানও ছাত্র-জনতার হাত ধরে এসেছে। এ ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। ছাত্র-জনতার হাত ধরে যে বিপ্লব হয়েছে আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীর ইতিহাসে একদিন তা রোমান্টিক রেভুলেশন হয়ে উঠবে।
প্রসঙ্গত, ড. আব্দুল মঈন খান রোমান্টিক রেভুলেশন বিষয়ে জানান, ১৭৮০ থেকে ১৮৩০ সালের মধ্যে ইউরোপে সাহিত্য বা সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে বোঝানো হয়েছে। এই সময়ের লেখক–কবিরা ইংল্যান্ড এবং বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। তাদের কণ্ঠস্বর ইংরেজি সাহিত্যকে প্রতিনিধিত্ব করে। উইলিয়াম ব্লেক, স্যামুয়েল কোলরিজ, উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের মতো ইংরেজ কবিরা এই আন্দোলনের পুরোধা। যদিও তাঁদের মৃত্যুর ৬০ বছর পর এই শব্দবন্ধটি প্রচলিত হয়। একই সময়ে, ব্রন্টি বোন এবং জেন অস্টিনসহ অনেক নারী লেখক খ্যাতি অর্জন করেন। ক্ষমতা, মতাদর্শ, লিঙ্গবৈষম্য এবং নিপীড়নের মতো বিষয়গুলো তাঁরা রোমান্টিকস বা রোমান্টিসিজমের আড়ালে উপস্থাপন করে গেছেন। টিমোথি সি ডব্লিউ ব্ল্যানিং ‘দ্য রোমান্টিক রেভল্যুশন’ নামে একটি বইও লিখেছেন।
মঈন খান বলেন, বিগত আড়াই মাসে অনেক জায়গায় বিভেদ ও সাম্য দু’টিই তৈরি হয়েছে। সত্যিকার মুক্তি যে প্রক্রিয়ায়, আমরা ওই প্রক্রিয়ায় আছি। যে মুক্তির জন্য অলি আহাদ জীবন বাজি রেখেছিলেন, আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন, আজকে এই দিনে এসে মনে হচ্ছে, আমরা সেই রোমান্টিক রেভুলেশনের ধারাবাহিকতাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, কিউবার মতো সেই রোমান্টিক রেভুলেশন বাংলাদেশে ব্যর্থ হবে না।
রোমান্টিক রেভুলেশন সফল হোক, দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হোক, এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশের মানুষ লড়াই করে স্বৈরাচারকে হারিয়েছে। দেশ আজকে এমনভাবে পঁচে গেছে, সেজন্য সংস্কার করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, পুরোনো প্রতিহিংসায় বাংলাদেশের রাজনীতি আর ফিরবে না। কোনো সাম্রাজ্যবাদীর কাছে এ জাতি আর মাথা নত করবে না। গণ-অভ্যুত্থানের বিজয়কে আমাদের ধারণ করতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, অলি আহাদ সাহেব বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।
দেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার এখনো পতন হয়নি। এই ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থাকে ভাঙতে হবে। দেশকে এখন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন এই নেতা।
ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল) এবং অলি আহাদ স্মৃতি সংসদ আয়োজিত স্মরণসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, অলি আহাদের কন্যা ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, কবি ও সাংবাদিক আব্দুল হাই সিকদার প্রমুখ।
এসএস//
আরও পড়ুন