ছায়াপথের বাইরে প্রথম কোন গ্রহের লক্ষণ শনাক্ত
প্রকাশিত : ১০:১৭, ২৬ অক্টোবর ২০২১
মিল্কিওয়ে ছায়াপথের বাইরে প্রথমবারের মতো কোন গ্রহের লক্ষণ দেখতে পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। সূর্যের চারদিকে যে গ্রহগুলো ঘোরে এর প্রায় পাঁচ হাজার আগেই শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেগুলোর সবই মিল্কিওয়ে ছায়াপথে দেখা গেছে। এই প্রথমবারের মতো ছায়াপথের বাইরে কোন গ্রহের লক্ষণ শনাক্ত করা হলো।
মেসিয়ের ৫১ গ্যালাক্সিতে থাকা এই সম্ভাব্য গ্রহটিকে আবিষ্কার করেছে নাসার চান্দ্রা এক্স-রে টেলিস্কোপ। এর প্যাচানো আকৃতির জন্য এটিকে ওয়ার্লপুল বা ঘূর্ণি ছায়াপথ বলেও বর্ণনা করা হয়।
আমরা যে নক্ষত্রপুঞ্জে রয়েছি, সেই মিল্কিওয়ে ছায়াপথ থেকে শনাক্ত গ্রহটির দূরত্ব দুই কোটি আশি লাখ আলোকবর্ষ। অর্থাৎ আলো যে গতিতে ভ্রমণ করে, সেই গতিতে গেলে এই গ্রহটিতে পৌঁছতে দুই কোটি আশি লাখ বছর সময় লাগবে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নক্ষত্র থেকে আলো বিকিরিত হতে থাকে। কিন্তু যখন কোন নক্ষত্রের সামনে দিয়ে গ্রহ প্রদক্ষিণ করে, তখন সেই আলোর কিছু অংশ ঢেকে যায় এবং সেটির এক্স-রে রশ্মি বিকরণ বাধাগ্রস্ত হয়। তখন সেটির সামনে থাকা গ্রহটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়, যা টেলিস্কোপের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।
এই পদ্ধতি ব্যবহার করে এর আগে হাজার হাজার গ্রহ শনাক্ত করা হয়েছে।
হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ইন কেমব্রিজের ড. ডি স্টেফানো বিবিসিকে বলেছেন, “আমরা যে পদ্ধতিতে কাজ করছি, এটাই হল এখন পর্যন্ত অন্য কোন ছায়াপথে থাকা গ্রহ-নক্ষত্র খুঁজে বের করার কার্যকর উপায়।”
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছেন তা থেকে ধারণা করছেন যে, এই সম্ভাব্য গ্রহটির আকার হবে শনি গ্রহের মতো। ব্ল্যাক হোল ঘিরে এটি ঘুরছে, তবে সেটির সঙ্গে দূরত্ব সূর্য থেকে শনির দূরত্বের প্রায় দ্বিগুণ।
তবে গবেষকরা স্বীকার করছেন, এই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে তাদের আরও তথ্য-উপাত্ত দরকার রয়েছে।
একটি বড় সমস্যার কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা, বিশাল কক্ষপথের কারণে যে নক্ষত্র বা ব্ল্যাকহোল ঘিরে এটি ঘুরছে, আবার সেটির সামনে আসতে প্রায় ৭০ বছর সময় লাগে যাবে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে এই আবিষ্কারের একটি ফলোআপ পর্যবেক্ষণ করার আপাতত উপায় নেই।
এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা এটাও বিবেচনায় রেখেছেন যে, গ্যাস ও ধূলোর মেঘ আলোর বিকরণ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণ হতে পারে। যা এক্স-রে রশ্মি বিকরণে বাধা দিয়েছে। যদিও সেই সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করেন তারা। কারণ, যেভাবে আলোর বিকিরণ কমে গেছে, সেটি কোন গ্যাসের আস্তরণের কারণে হয়েছে বলে তারা মনে করেন না।
গবেষকদের একজন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির জুলিয়া বার্নটসন বলছেন, “আমরা এটিকে উত্তেজনাপূর্ণ এবং সাহসী দাবি করেছি। তবে আমরা আশা করবো, অন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এটা সতর্কতার সঙ্গে দেখবেন। তবে, আমাদের পক্ষে শক্ত যুক্তি আছে। বিজ্ঞান যেভাবে কাজ করে, আমরা সেভাবেই কাজ করেছি”, বলেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এএইচ/
আরও পড়ুন