ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

জনবল সঙ্কটে চট্টগ্রামের পরিবার পরিকল্পনা সমিতি

প্রকাশিত : ১৫:৫২, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ১৮:২৭, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

চরম লোকবল সঙ্কট, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কার্যালয়ের অভাবসহ নানান সমস্যার কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার ১০০টি উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে জনবলের অভাবে মাঠপর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসুচি মুখথুবড়ে পড়ে আছে।

দেশে জনসংখ্যার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ১৬কোটি বলা হলেও অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় তা ২০কোটি ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্বের সর্বোচ্চ জনঘনত্বের এ দেশে কার্যকর জনসংখ্যা নীতি ও সচেতনতা অভিযান নেই, নেই পর্যাপ্ত বরাদ্দ, লোকবল ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধে। নিরক্ষর, অসচেতন ও হতদরিদ্র মানুষকে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় আনার কোনো সরকারি কার্যকর উদ্যোগ নেই, নেই দৃশ্যমান পর্যাপ্ত কোনো প্রচার-প্রচারণা। জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা দেশের একনম্বর সমস্যা হলেও এ জনবিস্ফোরণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো তৎপরতা নেই। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার ক্ষেত্রে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ যে একটি বড় বাধা পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রকের কর্তাব্যক্তিদের তা মাথায় আছে বলে মনে হয় না। কর্তাব্যক্তিরা যদি মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি আমলে আনতেন তাহলে বিগত ১০ বছরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতি এভাবে স্থবির অবস্থায় থাকতো না। জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে গতিশীল ও কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে আরও সক্রিয় হতেন। স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের প্রতি তেমন কোনো নজর নেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। বিদেশভ্রমণ, সেমিনার নিয়ে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা নিজেদের আখের গোছানোয় ব্যস্ত। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মকর্তা কর্মচারিরা ‘No work, Full pay’ অবস্থায় অলসভাবে সময় পার করছেন।

পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মূল কাজ করে থাকেন নারী মাঠকর্মীরা। এ নারীকর্মীরা (পরিবারকল্যাণ সহকারী) বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিকল্পিত পরিবার সম্পর্কে নারীদের পরামর্শ ও উদ্বুদ্ধ করেন।গ্রামীণ গর্ভবতী নারীদের প্রসবকালে সহায়তা করেন পরিবার পরিকল্পনাকর্মীরা। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রমের সফলতা-ব্যর্থতা মূলত পরিবার কল্যাণ সহকারীদের ওপরই নির্ভরশীল। অথচ চট্টগ্রাম বিভাগে ৪ হাজার ৭২২ জন পরিবার কল্যাণ সহকারীর অনুমোদিত পদ থাকলেও কর্মরত আছে ৩ হাজার ৮৪০ জন, আরও ১ হাজার ২৯০টি পদ খালি পড়ে আছে। ফলে চট্টগ্রাম বিভাগের গ্রামীণ জনপদে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের হার আশংকাজনকভাবে কমে গেছে। বাড়ছে না দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের হার। দীর্ঘ সময় ধরে চট্টগ্রাম বিভাগের ৬৭ উপজেলায় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নেই। মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি) নেই ৪০ উপজেলায়, সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদ খালি ২৬ উপজেলায়। সহকারী পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার (এমসিএইচ-এফপি) অনুমোদিত পদসংখ্যা ৮৮ হলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৭ জন। ৮১টি উপজেলায় এ পদ শূন্যঅবস্থায় আছে। এভাবে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারীর (টিএফপিএ) পদ ২৭টি, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের পদ ১৪৯টি, ফার্মাসিস্টের পদ ২৯৩টি, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের পদ ১৮৭টি, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার পদ ২৭৬টি, ৬টি মিডওয়াইফ, ৪৭টি দাইনার্স ও ২০৩টি আয়ার পদ দীর্ঘদিন খালি থাকলেও পূরণের কোনো উদ্যোগ নেই।

অন্যদিকে অফিস তত্ত্বাবধায়কের পদ ৩টি, হিসাবরক্ষকের পদ ২টি, গুদামরক্ষকের পদ ৫টি, সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটারের পদ ১৩টি, ক্যাশিয়ারের পদ ৮টি, গাড়িচালকের পদ ১১টি, অফিসসহায়কের পদ ৯৮টি ও ১৮৮টি নিরাপত্তা প্রহরীর পদ খালি থাকায় কার্যক্রম পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটছে।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদ দীর্ঘদিন শূন্য থাকায় অধিনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের দেখভাল করার কেউ নেই। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ও নেই বেশিরভাগ উপজেলায়। ফলে অবস্থা যা হবার তা-ই হচ্ছে। স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা বলতে এখানে কিছুই নেই। সরকারি কাজে ফাঁকি দিয়ে ব্যক্তিগত কাজে সবাই ব্যস্ত।

চট্টগ্রাম বিভাগের পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অফিস ভবনগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়। যে সব পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রকে আপগ্রেড করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে একবছর পরও জনবল সঙ্কটের কারণে তা কার্যকর হয়নি। বেশিরভাগ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের অবস্থাও তথৈবচ। পানি ও বিদ্যুত সঙ্কট লেগেই আছে। জরাজীর্ণ বাসভবনে চিকিৎসক ও অন্য কর্মকর্তাদের বসবাসের পরিবেশ নেই।

‘ছেলে হোক মেয়ে হোক, দুটি সন্তানই যথেষ্ট

দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভালো হয়’।

জনবল সঙ্কটের কারণে সরকারের এ শ্লোগানটির প্রত্যাশিত সুফল বয়ে আসছে না।

জনসংখ্যা বিস্ফোরণের ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠপর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল নিয়োগ দিয়ে শূন্যপদ পূরণের কোনো বিকল্প নেই। নতুন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন- এটাই সচেতন মহলের প্রত্যাশা।

চট্টগ্রাম পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. নাজমুছ সাদাত সেলিমের সঙ্গে এ বিভাগের বিরাজমান সমস্যা নিয়ে মুঠোফোনে আলাপ হয়। জনবল সঙ্কট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘শূন্যপদ পূরণের বিষয়টি একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই শূন্যপদ পূরণের জন্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে।’

চট্টগ্রাম জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বিরাজমান নানান সমস্যা নিয়ে মুঠোফোনে কথা হয় জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডা. উখ্যে উইনের সঙ্গে। জনবল সঙ্কটের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারটি আমরা অনেক আগেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তবে যদ্দুর জেনেছি, শূন্যপদ পূরণের প্রক্রিয়া চলছে।’

লেখক: প্রধান-সম্পাদক, সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি