‘জরিমানার পরও সংশোধন না হলে লাইসেন্স বাতিল’
প্রকাশিত : ২০:২৫, ১৫ মে ২০১৯ | আপডেট: ২০:৩১, ১৫ মে ২০১৯
মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর
মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর। ২০১৬ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন।
এর আগে তিনি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন, বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক এ বছর পবিত্র রমজান মাসকে ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বাজার তদারকি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার আইনের বিভিন্ন ধারায় গত বছর থেকে চলতি মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত ৬১০৬টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যেখানে ১৭,২৯৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১২৯,১১৩,৭৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চয়তায় তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি ভেজাল বিরোধী উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য এ নিয়ে যত অভিযোগ আছে, তা শূণ্যের কোটায় নামিয়ে আনা। বর্তমান ভেজাল বিরোধী অভিযান নিয়ে একুশে টিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশনের প্রতিবেদক আজাদুল ইসলাম আদনান।
একুশে টিভি অনলাইন: ভেজালযুক্ত খাবার বা পণ্য আপনারা কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন। এসব পণ্য নিষিদ্ধ করলে বাজারে এর প্রভাব পড়বে কি-না?
শফিকুল ইসলাম লস্কর: আদালত কর্তৃক নির্দেশনার আলোকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে প্রথমে নোটিশ প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোকে সে অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ করতে বলা হয়। যদি কোন প্রতিষ্ঠান সেটা না করে অথবা কেউ অভিযোগ দেয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। পণ্য যাছাই-বাছাই, মেয়াদ আছে কি-না বা ওই পণ্যটিতে ক্ষতিকারক কোনো দ্রব্য মেশানো আছে কি না এসব খতিয়ে দেখে প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চতে সবসময় আমাদের অভিযান অব্যহত থাকবে। তাই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার কোন সম্ভবনা নেই। বাজারে ক্রেতাদের কোন কষ্ট হবে না। কোন প্রতিষ্ঠান তার পণ্যকে বাজারে ছাড়তে হলে, মান নিশ্চত করেই তবে ছাড়তে হবে।
একুশে টিভি অনলাইন: অভিযুক্ত কোন প্রতিষ্ঠানের শাখার চেয়ে মূল কারখানায় অভিযান চালানো হয়না কেন? এ কারণে বাজারে এসব প্রতিষ্ঠানের দৌরাত্ম বেড়েই চলছে, এ ব্যাপারে আপনাদের পদক্ষেপ কি?
শফিকুল ইসলাম লস্কর: কোন প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত ও জরিমানা করার পরেও তারা যদি আবার ভেজাল পণ্য বাজারে ছাড়ে, সেক্ষেত্রে সে প্রতিষ্ঠানকে স্থায়ীভাবে সিলগালা ও লাইসেন্স বাতিল করা হবে। কোন প্রতিষ্ঠানের শুধু অভিযুক্ত শাখায় নয়, আমরা উৎপাদন কারখানায়ও অভিযান চালাচ্ছি। যদি কোন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করার পরও পুনরায় একই পণ্য তৈরি করে, তাহলে সে পণ্যের পাশাপাশি কারখানাকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে।
আর এ ধরণের প্রতারণা ঠেকাতে আমরা শুধু রাজধানী নয়, দেশের সব বিভাগীয় ও জেলা শহরে ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যহত রেখেছি।
একুশে টিভি অনলাইন: রমজান মাস আসলেই এই ধরণের অভিযান দেখা যায়। সারা বছর নয় কেন?
শফিকুল ইসলাম লস্কর: রমজান ছাড়া অন্যান্য মাসে প্রতিদিন ২টি করে অভিযান পরিচালনা করা হয়। রমজানে করা হয় ৪টি। তবে, এবার থেকে অন্যান্য মাসেও একইভাবে অন্তত ৪টি করে অভিযান অব্যহত থাকবে। রাজধানীর তুলনায় জেলা শহরে যেহেতু প্রভাব কম থেকে, তাই জেলা শহরগুলোতে অন্তত একটি করে অভিযান অব্যহত থাকবে।
একুশে টিভি অনলাইন: এতো কম সংখ্যক লোক দ্বারা এতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও সমাধান করা কতটুকু সম্ভব?
শফিকুল ইসলাম লস্কর: বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ ভেজাল বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। রাজধানীতে আমাদের নিয়মিত ৪টি টিম তদরকি করছে। তাই, সামগ্রিকভাবে নিয়মিত কাজ করতে পারলে, যে লোকবল আছে তাতেই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও সমাধান করা সম্ভব। তবে, জেলা শহরে আমাদের লোকবল আরও বাড়ানো দরকার। ১৮টি জেলায় বর্তমানে আমাদের লোক নেই। ইতোমধ্যে সেগুলোতে লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই আমরা এটা শেষ করতে পারবো।
একুশে টিভি অনলাইন: প্রতিদিন অভিযান চলছে, জরিমানাও হচ্ছে কিন্তু এগুলো বন্ধ হচ্ছেনা। কিভাবে এগুলো বন্ধ করা যায়?
শফিকুল ইসলাম লস্কর: প্রতিদিন অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, জরিমানাও করা হচ্ছে নিয়মিত। ফলে, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধও হচ্ছে। যারা সঠিকভাবে পণ্য তৈরি করছে, তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান না শোধরানোয় পরবর্তীতে দ্বিগুন জরিমানা করা হচ্ছে। তারপরও যদি সংশোধন না হয়, সে ক্ষেত্রে আমরা প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করছি।
একুশে টিভি অনলাইন: ভেজাল রোধে আপনাদের উল্লেযোগ্য পদক্ষেপ জানতে চাই। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অধীনে কি কি কার্যক্রম পরিচালিত হয়?
শফিকুল ইসলাম লস্কর: খালি চোখে যে পণ্যগুলোতে ভেজাল শনাক্ত করা যায়, আমরা সেগুলোর ক্ষেত্রে কেবল অভিযান পরিচালনা করি। যে পণ্যগুলোতে পরীক্ষার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে আমরা বিএসটিআই আর সায়েন্স ল্যাবরেটরির সহযোগীতা নিয়ে তারপর অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করি।
যেকোন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালাতে হলে বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োজন। আমরা সেটিরও প্রস্তাব দিয়েছি। আশাকরি খুব অল্প সমেয়র মধ্যে আমরা এর সমাধান করতে পারবো। সাধারণ মানুষের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে আমাদের সবধরণের পদক্ষেপ অব্যহত আছে, থাকবে। সর্বশেষ আদালত যে পণ্যগুলোকে বাজারে নিষিদ্ধ করেছেন, সে আদেশনামা আমরা হাতে পেয়েছি। দ্রুত সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসি
আরও পড়ুন