জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত সন্দ্বীপ
প্রকাশিত : ১৬:৫৪, ১৬ নভেম্বর ২০১৮ | আপডেট: ১৭:০৪, ১৬ নভেম্বর ২০১৮
অনেক প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সাগরের তলদেশ দিয়ে অবশেষে দেশের মূল ভূখণ্ডের জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযোগের সঙ্গে যুক্ত হলো দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৪৩ মিনিটে হঠাৎ আলো জলে উঠল সন্দ্বীপ উপজেলার পিডিবির বৈদ্যুতিক বাতিতে। বিদ্যুতের আলো জলে উঠার সঙ্গে সঙ্গেই সন্দ্বীপবাসীর হৃদয়ে খুশির সঞ্চার হয়। এ সময় উৎসুক জনতার মধ্যে আনন্দ উচ্ছ্বাস দেখা যায়।
সন্দ্বীপ উপজেলায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ এশিয়া মহাদেশে এটাই প্রথম। ১৪’শ গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেওয়ার মাধ্যমে সন্দ্বীপে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। এই সময় এনাম নাহার মোড়ের সড়ক বাতিও জলেছে সরবরাহ করা বিদ্যুতে।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে সন্দ্বীপ চ্যানেলে নদীর তলদেশ দিয়ে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ আনুষ্ঠানিকভাবে সন্দ্বীপে বিতরণ শুরু হবে এমনই ধারণা দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রসঙ্গে বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলেও মূলত আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে বিদ্যুৎ পাবেন সন্দ্বীপবাসী। পর্যায়ক্রমে পুরো সন্দ্বীপবাসীকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে।
পিডিবি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সন্দ্বীপ চ্যানেলের নদীর তলদেশ দিয়ে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সংযোগ এসে পৌঁছে বাউরিয়া ঘাটে স্থাপিত ট্রান্সমিটারে। বুধবার ট্রান্সমিটার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ আসে এনাম নাহার মোড়ের সাবস্টেশনে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুর ২টা ১০ মিনিটে সাবস্টেশনের লাইটিং ট্রান্সমিটারে বিদ্যুৎ আসে। ২টা ২১ মিনিটে পাওয়ার ট্রান্সমিটার চালু হয়। বিকাল ৪টা ৪৩ মিনিটে সংযোগ দেওয়া হয় সরবরাহ লাইনে। সঙ্গে সঙ্গেই সফলতার মুখ দেখে এশিয়ার সর্বপ্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রকল্পের।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার সন্দ্বীপ সফরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো সন্দ্বীপ কে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত করে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ১ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুইটি নতুন জেনারেট আসে সন্দ্বীপ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পাওয়ার হাউসে। এর মাধ্যমে আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে মোট ২৩’শ গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়ে আসছিলেন।
অতিরিক্ত চাহিদা এবং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বেশিরভাগ সময় রেশনিং করে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হতো। দৈনিক ছয় ঘণ্টা জেনারেটরের বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হতো উপজেলার গ্রাহকদের। সাপ্তাহিক তিন দিন করে কখনো দৈনিক দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ পেয়েছে দ্বীপবাসী।
এদিকে, গতকাল থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রক্রিয়া সফল হলে আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে ২৩’শ গ্রাহককে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পিডিবি’র প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন। আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকেই সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের তারিখ জানা যাবে বলে জানান তিনি।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ছয় থেকে সাত হাজার এবং এক বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ২০ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে।
কেআই/ এসএইচ/
আরও পড়ুন