জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ পেয়ে সন্দ্বীপে আনন্দের বন্যা
প্রকাশিত : ১৮:৪৪, ১৭ নভেম্বর ২০১৮
মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অফার লীলাভূমি সন্দ্বীপ। শত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য আর নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে টিকে আছে সাগর দুহিতা সন্দ্বীপ। সাগরের উত্তাল জলরাশি,আর সাগর সংগ্রামী মানুষের সাফল্য পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত। নদী ভাঙ্গন এখানকার মানুষের বসত বাড়ি কেড়ে নিলেও হার না মানা মানুষের স্বপ্নগুলো সাগরের ঢেউয়ের মতো দোলে। তবুও সংগ্রামী মানুষের স্বপ্ন বুকে চেপে আছে লাখো মানুষ। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে।
সন্দ্বীপের জীবনযাত্রার মান সমৃদ্ধ হলেও, বিদ্যুৎ না থাকায় সামগ্রিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিল দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ। স্বাধীনতার ৪ দশক পেরিয়ে গেলেও এখানকার মানুষের কথা ভাবেনি কোন সরকার। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এখানকার মানুষের জীবনমান বদলে গেছে। সর্বক্ষেত্রে এসেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে এখানে আনা হয়েছে বিদ্যুৎ। ফলে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম জেলার দ্বীপ জনপদ সন্দ্বীপ।
যে বিদ্যুৎ সন্দ্বীপের মানুষের কাছে এক সময় স্বপ্ন ছিল, আজ সেখানে চলছে খুশির জোয়ার। এই অসম্ভব স্বপ্নটি পূরণ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের আলোয় ঝলমল করে উঠে সন্দ্বীপের রাস্তা-ঘাট ও বসতবাড়ি। পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলেও গতকাল শুক্রবার সারাদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ পেয়েছে এই সন্দ্বীপের মানুষ।
সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে টানা হয়েছে বিদ্যুতের এ সংযোগ লাইন। হঠাৎ করে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের তৃণমূলের মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ উপহারে জনমনে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। সন্দ্বীপের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
সন্দ্বীপ উপজেলার এনাম নাহার এলাকার ব্যবসায়ী রিধোয়ানুল বারী জানান,‘ সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ আসবে এটা অকল্পনীয় বিষয় ছিল। সন্দ্বীপের মানুষের স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক ছিলেন। আজ সারাদিন আমরা বিদ্যুৎ পেয়েছি। আমি মনে করি, বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে অনন্য জেলা শহরের মতো এখানে শিল্প- কারখানা গড়ে উঠবে।’
বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত সন্দ্বীপ এই সম্পর্কে সন্দ্বীপের সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, সন্দ্বীপের মানুষ বিদ্যুৎ পাবে এটা কিছু দিন আগেও অবাস্তব ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতার কারণেই সন্দ্বীপ আজ জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছে। আমাদের সরকার সাড়া দেশে তৃণমূলকে উন্নত করবার লক্ষে কাজ করে গেছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সন্দ্বীপে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী দেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আওয়তায় আনতে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাই সন্দ্বীপকেও এই উন্নয়নের সড়কে তুলে এনেছে। এই জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সন্দ্বীপ বাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
সন্দ্বীপকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদিও এতদিন ২ হাজার ২০০ গ্রাহককে জেনারেটরের মাধ্যমে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত গড়ে ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করত উপজেলা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। বেশির ভাগ সময় অনিয়মিত থাকত।
১৪৪ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় এখন দৈনিক ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবে দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার গ্রাহক। ৩০০ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প এরই মধ্যে একনেকে পাস হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে সন্দ্বীপের সব ঘর-বাড়িতে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে।
এখন সীমিত আকারে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ দেওয়া হলেও ৩০০ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে বিদ্যুৎ ।
উল্লেখ্য, ১৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে লাইন স্থাপনের মাধ্যমে সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেডটিটি কাজ শুরু করলেও মূলত ২১ ডিসেম্বর থেকে সমুদ্রে কেবল স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় একটি সাবস্টেশন ও দুটি ট্রান্সফরমার বসানো হয়েছে।
সমুদ্রের তলদেশে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ থেকে ২০ ফুট গভীরতায় দুটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কেবল নেটওয়ার্ক সমুদ্রতীরবর্তী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড অংশ ও সন্দ্বীপ চ্যানেলে যুক্ত করা হয়েছে। ১৫ কিলোমিটারের দুটি সাবমেরিন কেবল স্থাপনের মাধ্যমে এ সংযোগ দেওয়া হয়। সন্দ্বীপে ১০ ও সীতাকুণ্ডে ১৫ কিলোমিটার হেডলাইন স্থাপন করা হয়েছে। ৩৩ হাজার ভোল্টের দুটি কেবল বসানো হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিটি কেবলে তিনটি কোর ও একটি অপটিক্যাল ফাইবার আছে। একটি কেবলের মাধ্যমে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হবে। অন্য ক্যাবলটি বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়লে এ ক্যাবলের মাধ্যমেও বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। বিদ্যমান লাইনের আওতায় সর্বোচ্চ ৩০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। পাশাপাশি অপর একটি ওভারহেড লাইন বসানো হলে সাবমেরিন কেবল দিয়ে সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৬০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
সাবমেরিন কেবল প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল মোতালেব বলেন, মোট ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে সমুদ্রের নিচ দিয়ে কেবল টানা হয়েছে ১৫ কিলোমিটার। সন্দ্বীপে ৬০ কিলোমিটার সংযোগ লাইন টানা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ পাবেন গ্রাহকরা।
এদিকে বিদ্যুৎ পাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সন্দ্বীপের দেশে- বিদেশে অবস্থানরত লাখ মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
কেআই/ এসএইচ/
আরও পড়ুন