জাবিতে গুঁড়িয়ে দেয়া হলো মুজিব পরিবারের ম্যুরাল ও স্মৃতিচিহ্ন
প্রকাশিত : ১০:৫১, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আবাসিক হলসহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সব নামফলক, গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন মুছে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একটা বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটে গিয়ে সেখানে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও আল-বেরুনী হলের দেওয়ালের আঁকা গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্রে রঙ ঢেলে মুছে দেন৷
এরপর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শেখ হাসিনা হলে সম্মুখে অবস্থান নিয়ে সেখানে থাকে শেখ হাসিনার ম্যুরালটিও ভেঙে ফেলেন তারা৷ এছাড়া শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা সে হলের নাম পরিবর্তন করে 'বিজয়-২৪ হল' রাখেন৷
এরপর কতিপয় শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নামফলক ভাঙচুর করতে আসলে ওই হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী বাধা দেন এবং তাদের হলের বিষয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান। এ সময় হলের কতিপয় শিক্ষার্থীদের সাথে নামফলক ভাঙচুর করতে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা শাবল ও লাঠি দিয়ে হলের নামফলক ভেঙ্গে নামিয়ে ফেলে৷
পরবর্তীতে হলের প্রাধ্যক্ষ এবং আবাসিক শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে হলের নতুন নাম ঠিক করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এসময় শিক্ষার্থীদের ‘মুজিববাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, 'মুজিববাদ-মুজিববাদ, মুর্দাবাদ-মুর্দাবাদ', 'ফ্যাসিবাদের আস্তানা, ভেঙে দাও-গুড়িয়ে দাও', 'ইনকিলাব-ইনকিলাব, জিন্দাবাদ-জিন্দাবাদ', 'খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন', 'সন্ত্রাসী লীগের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন', 'হেলমেটলীগের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন', ‘স্বৈরাচারের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে শেখ পরিবারের ম্যুরাল ভাঙতে ও গ্রাফিতি মুছতে দেখা যায়৷
এ বিষয়ে নৃবিজ্ঞান ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, খুনি হাসিনা ভারতে থেকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন এতে ছাত্র-জনতা ফুসে উঠেছে৷ এছাড়া ফ্যাসিস্ট মুজিবকে ঘিরে শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা ব্যবসা করেছে সেখান থেকে ফ্যাসিবাদ গড়ে উঠেছে৷ আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই ফ্যাসিবাদের চিহ্নকে ভেঙে দিচ্ছি৷ এর মাধ্যমে আর কেউ যাতে ফ্যাসিস্ট মুজিবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে না পারে এই বার্তা দিচ্ছে ছাত্র-সমাজ৷
জাবি ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি নবীনূর ইসলাম নবীন বলেন, পতিত হাসিনা ভারতে গিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে৷ দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আপমর জনতা ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল পতিত হাসিনার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রস্তুত আছে৷ খুনি হাসিনাকে সতর্ক করে বলতে চাই এরকম যদি ষড়যন্ত্র ও কর্মসূচি দেন তাহলে বাংলার জনগণ তা প্রতিহত করবে৷ বাংলাদেশের আপমর ছাত্র-জনতা আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে বিতাড়িত করেছে এবং সামনের সকল ষড়যন্ত্রকে রুখে দিবে৷
এসময় জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক ইয়াহিয়া জিসান বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু আমরা এ ষড়যন্ত্র মেনে নেবো না। দ্রুত শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং গণহত্যার বিচার করতে হবে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও মুজিববাদের কোনো স্মৃতি এই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে না।
এএইচ
আরও পড়ুন