জাবিতে ছাত্রদল ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
প্রকাশিত : ২২:০৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের আগে সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে, সংস্কারের দাবি তুলে জাকসু বানচালের চেষ্টা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে ‘জাকসুর পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে প্রশাসনিক ভবনের সামনে পাল্টা অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা ৷
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পৌনে ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর হতে শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে এসে অবস্থান গ্রহণ করে। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘন্টা অবস্থান করেন তারা।
এদিকে ঘোষিত সময়ের মধ্যে তফসিল ঘোষণা না করা ও ছাত্রত্ব শেষ হওয়া ছাত্রদল নেতাকর্মীদের অবস্থানের প্রতিবাদে 'বিক্ষোভ মিছিল ও পাল্টা অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা৷ মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
এর আগে, বিকেলের অবস্থান কর্মসূচিতে জাবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক বলেন, জাকসু নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে যারা বসে আছেন তারা আওয়ামী লীগের দোসর। তাদের বসিয়ে রেখে কোনভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাছাড়া জাকসুর যে গঠনতন্ত্র রয়েছে সেটা অনেক আগের। এই গঠনতন্ত্র সংস্কার করতে হবে এবং এই কাজগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন দিতে হবে অন্যথায় তা মেনে নেওয়া হবে না। আজকে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।
অবস্থান কর্মসূচিতে জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ আসনে রেখে, সিন্ডিকেটে রেখে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশাসন দিতে পারে না। সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচনের দিকে আগালে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারাবে৷ জুলাই আন্দোলনে হামলাকারী ও ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচার নিশ্চিতের আগে জাকসু নির্বাচন দিলে ছাত্রদল তা মেনে নেবে না৷ সংস্কার বাদ দিয়ে জাকসুর তফসিল ঘোষণা করলে জাবি ছাত্রদল কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচির দিকে আগাবে৷
এদিকে, জাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা হওয়ার পর 'সংস্কারে'র প্রস্তাব তুলে ছাত্রদল জাকসু বানচালের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ঘোষিত সময়ের মধ্যে জাকসুর তফসিল ঘোষণার দাবিতে 'জাকসুর পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর' নামে একটি সর্বদলীয় প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছেন তারা৷
সন্ধ্যায় অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, তফসিল ঘোষনা বিকেলে হওয়ার কথা থাকলেও এখনো হচ্ছে না। অছাত্ররা প্রশাসনের সাথে মিটিং করছে। প্রশাসন কে হুশিয়ার করতে চাই অছাত্রদের আস্তানা এই ক্যাম্পাসে হবে না৷ আজকের মধ্যেই জাকসুর তফশিল ঘোষণা করতে হবে।
অর্থনীতি বিভাগ ছাত্র সংসদের সাধারন সম্পাদক শাওন বলেন, ৫ আগস্টের আগে যেভাবে একদল হামলা-অরাজকতা করতো একই ভাবে এখন আরেক দল করছে, ওদের যেভাবে তাড়িয়েছি সেভাবে আবার রাজপথে আমাদের দাড়াতে হবে। আমরা শিক্ষার্থী সংসদ চাই। ক্যাম্পাসে অছাত্রদের রাজনীতি চাই না। আমরা প্রশাসনকে জানাতে চাই আজকেই তফসিল ঘোষণা দিতে হবে।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহের আফরোজ শাওঁলি বলেন, ৫ আগস্টের পর আমরা চাইনি আবার ছাত্রলীগ মতো কেও ছড়ি ঘুরাক, ত্রাশের রাজনীতি চলুক। কারা জাকসু বানচাল করতে চায় তাদের আমরা চিনি। প্রশাসনের সাহস কিভাবে হয় অছাত্রদের প্রশাসন বিল্ডিংয়ের সামনে আন্দোলন করতে দেয়। ভিসি আমাদের ভয় দেখায় জাকসু দিতে গিয়ে লাশ পড়লে তখন কি হবে। ভিসিকে বলতে চাই, নাটক কম করো পিও। আজকের মধ্যেই জাকসুর তফসিল ঘোষণা করতে হবে।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, ওনারা বলে জাকসু হলে নাকি লাশ পড়বে। তার মানে উনি সিদ্ধান্ত দিয়েছে তারা অশান্তি অরাজকতা সৃষ্টি করবে। তারা কাদের ছত্রছায়ায় এরা ক্যাম্পাসে আসে। তারা হলে এসে মিটিং করে, দু'দিন পর আমাকে হল থেকে বের করে দিবে না- তার কি গ্যারান্টি আছে। জাকসু না হলে আবার সে নতুন স্বৈরাচার গড়ে উঠবে। আপনারা যে নামেই রাজনীতি করেন না কেন, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি শুরু করতে চাইলে আবার মুগ্ধ, সাঈদ জীবন দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।
প্রসঙ্গত, পুর্বের ঘোষণা অনুসারে আজ ১ লা ফেব্রুয়ারি জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা ছিল।
এমবি//
আরও পড়ুন